ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪২ জন নিহত ও ৩২৪ জন আহত হয়েছেন।
গত ৩০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ৯৫টি দুর্ঘটনায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদ-যাতায়াত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় এবার সড়ক ও নৌপথে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জনগণ প্রত্যাশিত সেবা পায়নি।
বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ, অনলাইন নিউজপোর্টাল, সংবাদ সংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেলের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দূরপাল্লার সড়ক-মহাসড়কে বড় ধরনের যানজট ছিল না। নৌ ও রেলপথ ছিল দুর্ঘটনামুক্ত। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপনা ভালো থাকায় পদ্মার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল নিরবিচ্ছিন্ন ছিল। এর ফলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগও ছিল স্বাভাবিক।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঈদ-সার্ভিসে পর্যাপ্তসংখ্যক লঞ্চ থাকায় ঢাকার সদরঘাট টার্মিনাল থেকে উপকূলীয় জেলাগুলোর সঙ্গে নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক ও যাত্রীভোগান্তি কম ছিল। তবে এক শ্রেণির নৌ শ্রমিক ও কর্মচারিরা ডেকের যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে প্রযুক্তিগত সমস্যা ও ঈদ-যাত্রার প্রথম দিন থেকে দূরপাল্লার অনেক ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে অগণিত যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। ঈদের আগে ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-পাটুরিয়া ও ঢাকা-ময়মনসিংহসহ দূরপাল্লার বিভিন্ন সড়কে মাত্রাতিরিক্ত বাসভাড়া আদায় বন্ধ করা যায়নি। ঈদ-ফেরত যাত্রীদের কাছ থেকেও একইভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও তা বন্ধ করতে পারেনি প্রশাসন। এমনকি লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে যাত্রী পরিবহনও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া ঈদের ছুটিতে রাজধানীর মধ্যে চলাচলরত বাস ও অটোরিকশাগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করেছে। উবার ও পাঠাও’র মতো রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী বহনকারি কোম্পানিগুলোও ঈদ-ছুটিতে তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছিল বলে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।
ঈদযাত্রায় আহত-নিহতের বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদের আগে ৩ জুন সোমবার শেষ কর্মদিবস থাকলেও এর আগে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক এবং রোববার শবেকদরের ছুটি ছিল। এ কারণে ঈদ-পূর্ব সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ৩০ মে বৃহস্পতিবার থেকেই কার্যত ঈদযাত্রা শুরু হয়। ওইদিন সাতটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয় ও আটজন আহত হয়। ৩১ মে ৬টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হন যথাক্রমে ছয়জন ও সাতজন। ১ জুন ১১টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ১০ ও ৩১। ২ জুন ১৫টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হন। ৩ জুন সাতটি দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। ৪ জুন দুর্ঘটনা ঘটেছে ছয়টি। এতে নিহত ও আহত হয়েছেন যথাক্রমে ১৬ জন ও ৬২ জন। ৫ জুন ঈদুল ফিতরের দিন ১৬টি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন। ৬ জুন নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ১১ ও ৩৩। ওইদিন দুর্ঘটনা ঘটেছে আটটি। ৭ জুন ছয়টি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে ১১ জনের, আহত হয়েছেন ১৮ জন। ৮ জুন সাতটি দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। ৯ জুন ৬টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে পাঁচ ও ২৪ জন।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, ঈদ-যাতায়াত পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার ছয়টি প্রধান কারণ চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. ঈদে বিভিন্ন মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে তীব্র যানজটের কারণে ব্যয় হওয়া দীর্ঘ সময় পুশিয়ে নিতে ফাঁকা রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো
২. দীর্ঘ ছুটির কারণে সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা
৩. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের বারবার তাগিদের কারণে চালকের অন্যমনস্কতা
৪. অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বাড়তি ট্রিপ দেয়ার কারণে চালকের সাময়িক শারীরিক ও মানসিক অবসন্নতা
৫. দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ওভারটেকিংয়ের ক্ষেত্রে চালকদের ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা
৬. বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিনচাকার যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল।