সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাষিত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। ঘরমুখী মানুষ শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভিড় করেছিল মার্কেট এবং বিপণীবিতানগুলোতে। বাড়ি যাওয়ার আগে প্রিয়জনদের জন্য সাধ্যমত কেনাকাটা করেছেন তারা। সেই কেনাকাটার চাপ আজ শুক্রবারেও লক্ষ্য করা গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ নেই খুব একটা। স্বাভাবিকভাবেই যাতায়াত করছে মানুষ। কিন্তু এই চিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা শপিং মল, বিপণীবিতান এবং টার্মিনালমূখী সড়কে। ক্রেতাদের গাড়ির সারি মার্কেট থেকে চলে গেছে বহুদুর। মার্কেটের সামনের সড়কে সৃষ্টি করছে জট।
রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনালসহ কমলাপুর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালমুখী সড়কে দেখা গেছে মানুষ এবং যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর নিউ মার্কেটে নারী-পুরুষ, শিশুসহ সব শ্রেণির ক্রেতার ভিড়ে পুরো মার্কেটে পা ফেলার জায়গা মেলা ভার।কাপড়-জুতোর দোকান থেকে শুরু করে ঘরবাড়ির সাজগোজ এবং নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের দোকানে দেখা যায় সমান ভিড়।
নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা চাকরিজীবী আমজাদ হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: গতকাল(বৃহস্পতিবার) থেকে ছুটি পেয়েছি। এর আগে সময় করে উঠতে পারিনি। তাই কেনাকাটাও করতে পারিনি। আজ ছুটি পেয়েই পরিবার নিয়ে চলে এসেছি।
নারীদের সাজগোজের জিনিস এবং গহনার জন্য বিখ্যাত নিউমার্কেটের উল্টোদিকের গাউছিয়া সুপার মার্কেট। স্বভাবতই সেখানে নারীদের অতিরিক্ত ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে সাজগোজের কোন কিছুর যাতে কমতি না থাকে সেজন্য তারা পছন্দের জিনিসটি কিনতে এসেছেন।
রাজধানীর মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের মার্কেট হিসেবে পরিচিত নিউমার্কেট ছাড়াও টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট, মিরপুরে শাহ আলি মার্কেট, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে একই চিত্রের খবর পাওয়া গেছে।
ভিড় রয়েছে উচ্চবিত্তের কেনাকাটার পছন্দের জায়গা কুড়িলের যমুনা ফিউচার পার্ক, পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি, হাতিরপুলের ইস্টার্ন প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা, প্রগতি সরনির সুবাস্তু নজর ভ্যালি এবং গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটে।শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটও রয়েছে উল্লেখ করার মতো ভিড়।
বিভিন্ন সড়কে অবস্থিত নানা ব্যান্ডের শো রুমগুলোও ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের বিকিকিনিতে।
প্রয়োজনীয় শপিং শেষ করে ঘরমুখো মানুষের স্রোত গিয়ে ঠেকেছে বাস-ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে। গাবতলী, সায়দাবাদ এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলস্টেশন এভং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালমুখী প্রতিটি সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের খবর পাওয়া গেছে।
যানজট এবং গণপরিবহন সংকটের কারণে অনেককে পায়ে হেটেই টার্মিনালে পৌঁছতে দেখা গেছে। টার্মিনালে পৌছে গন্তব্যের গাড়িতে উঠতেও পোহাতে হচ্ছে সমস্যা। ঝুঁকি নিয়ে হলেও যে যেভাবে পারছেন চড়ে বসছেন কাঙ্ক্ষিত বাহনে।
গাবতলী হয়ে উত্তরবঙ্গের বগুড়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করা মামুন আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: জীবিকার তাগিদে প্রায় সারাবছরই ঢাকায় থাকতে হয়। খুব একটা সুযোগ হয় না বাড়িতে যাওয়ার। কিন্তু যাদের জন্য এত পরিশ্রম করি, পরিবারের সেই মানুষগুলোর সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারলে সবই বৃথা।
এত ভোগান্তির পরও নাড়ির টানে শেকড়ে ফেরার আনন্দ মামুনসহ সবার চোখে মুখে।জীবিকার সন্ধানে সারাবছর নগরীতে যান্ত্রিক জীবন কাটালেও বছরের এই সময়টাতে প্রিয়জনের সান্নিধ্য তারা কিছুতেই মিস করতে চান না।
ছবি- সাকিব উল ইসলাম