এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনালে অস্বাভাবিক চাপ পড়বে বলে জানিয়ে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি বলছে, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরসহ এ তিন জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ নৌপথে উপকূলীয় জেলাগুলোতে যাবে।
মঙ্গলবার ঈদ-পূর্ব এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে।
জাতীয় কমিটি জানায়, মাত্র ১২ দিনে একমুখী এতো যাত্রী পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌযান নেই। ফলে লঞ্চের ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী বহন করা হবে এবং এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
ঈদে বিড়ম্বনামুক্ত নিরাপদ নৌযাত্রার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে তারা।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি বলছে, প্রতি ঈদে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের চারটি সিটি করপোরেশনসহ এ তিন জেলা থেকে প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্বজনদের কাছে যায়। তাদের ২৫ শতাংশ যায় নৌপথে। আর সড়ক ও রেলপথে যায় যথাক্রমে ৫৫ ও ২০ শতাংশ। এই হিসেবে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ যায় লঞ্চসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযানে। তবে নিয়মিত দুর্ঘটনা, দূরপাল্লার সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বেহাল দশা, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের প্রধান দুটি মাধ্যম শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরিস্বল্পতা ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই সড়কপথ এড়ানোর চেষ্টা করবেন। এর বিপরীতে নৌপথে নৌপথে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪০ লাখ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিআইডব্লিউটিএ গত ২১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয়টি নৌপথের ৭০টি ছোট লঞ্চ চলাচল স্থগিত রেখেছে। তাই এবার ঈদে ৪০ লাখ ঘরমুখি নৌযাত্রীর একমাত্র মাধ্যম ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল। বিলাসবহুল ও বড় আয়তনের লঞ্চ চলাচলের জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপকূলের বৈধ নৌপথের সংখ্যা ৪২টি হলেও যাত্রীস্বল্পতা ও নাব্য সংকটের কারণে মাত্র ৩৩টি নৌপথ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ৮০-৮৫টি লঞ্চ এসব নৌপথ দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়।
নদ-নদী, নৌ পরিবহন ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সড়ক, রেল ও নৌদুর্ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা বেসরকারি সংগঠনটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২৯ এপ্রিল থেকে ঈদের দাপ্তরিক ছুটি শুরু হলেও ২১ এপ্রিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধের দিন থেকেই মূলত: ঈদযাত্রা শুরু হবে। তাই ওইদিন থেকে ২ মে পর্যন্ত ১২ দিনে ৪০ লাখ যাত্রী সুশৃঙ্খলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার সক্ষমতা নৌ খাতে নেই।
এবারের ঈদে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি আশঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা।
তাই নৌপথে নিরাপদ ঈদযাত্রার জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কমিটি।