ঈদুল আযহার আগে ও পরের ৩০ দিনে ৯শ’ ২১টি দুর্ঘটনায় ২শ’ ১২ জন নিহত এবং ৭শ’ ৪২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোড।
এসময় সড়কপথে দুর্ঘটনার পাশাপাশি রেল ও নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার সময় ছাদ থেকে পড়ে ৮০ জন আহত হয়েছে বলেও তথ্য দিয়েছে এই সংগঠন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ‘সেভ দ্য রোড’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব শান্তা ফারজানা।
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি ঈদের মত এবারও এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় কথাশিল্পী নাজমুল হকের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, সেভ দ্য রোড-এর প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী।
মতবিনিময় সভায় বলা হয়, সেভ দ্য রোড-এর মনিটরিং টিম গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, হাইওয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গঠিত সেভ দ্য রোড-এর শাখায় দায়িত্বপালনকারী সেচ্ছসেবীদের তথ্যর উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সেভ দ্য রোড জানায়, এবার ঈদুল আযহায় গরুর হাট ৪ দিন আগে করার সিদ্ধান্ত, ফুটপাত দখল করে গরুর হাট, বাজার বসানো সহ বিভিন্ন অসঙ্গতির কারণে পথ দুর্ঘটনা বেশি হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেয়ায় নৌপথে কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও ছাদ থেকে পরে আহত হয়েছে ৪৪ জন। একই কারণে রেলের বগী থেকে পড়ে আহত হয়েছে ৩৬ জন। এবার ঈদুল আযহার আগে ও পরের ৩০ দিন (২৭ জুলাই ২৭ আগস্ট) দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২১২, আহত হয়েছে ৭৪২ আর দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯২১।
বাংলাদেশে সড়কপথে দুর্ঘটনা না কমার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণপরিবহন সেক্টরে কেবলমাত্র প্রশাসনিক অদক্ষতাই নয়; দায়ী দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার দায়ী বলেও জানানো হয়।
পাশাপাশি যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন সেই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া একশ্রেণির চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার কারণে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও অটোরিক্সার এই মহাসংকট ও স্বল্পতা।
সেভ দ্য রোড মনে করে, সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের নিরাপদ পথচলা আমাদের জনগণের অধিকার। সেই অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই।
সভায় বলা হয়, একটি পরিবেশসম্মত নগরে ২৫ শতাংশ সড়ক পথ থাকা জরুরি। অথচ আমাদের আছে মাত্র ১২%। রাজধানী ঢাকার সড়কের ৬৫% জায়গা ব্যবহার করে মাত্র ৫% নাগরিকের ব্যবহৃত প্রায় ৪ লক্ষ প্রাইভেটকারসহ ছোট গাড়ি। আর ৩৫% সড়কের জায়গা ব্যবহার করে ৯৫% যাত্রী জনতার জন্য চলাচলকৃত গণপরিবহন। রাজধানীর সড়ক পথে রোজ যুক্ত হয় ৩১৬টি যন্ত্র চালিত গাড়ি। যার মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ১ টিরও কম। এই রাজধানী ঢাকায় নতুন করে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে রোজ যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৪শ ১৮ জন। যা বছরে দাঁড়ায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫শ জনে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিভাগীয় ও জেলা শহরে আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, আধুনিক কারিগরি শিক্ষা, আধুনিক চিকিৎসা সেবা, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ঢাকামুখি জনস্রোত বন্ধ করা জরুরি।