কোরবানির ঈদের ছুটিতে কোনো শ্রমিক যাতে গ্রামের বাড়িতে না যান, তাই কারখানাগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারি ছুটির সাথে মিল রেখেই তৈরি পোশাক মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র এই নির্দেশনার পর কারখানা মালিকরাও তাদের শ্রমিকদের আবশ্যিকভাবে কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ গেলে সেটা অন্যায় হবে এবং এর জন্য সাজাও হতে পারে।
গত ২২ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে এ ব্যাপারে চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কোরবানির ঈদের সময় শিল্প-কারখানাগুলোর কার্যক্রম সরকার ঘোষিত ঈদের সাধারণ ছুটির দিন ছাড়া চলমান রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের আবশ্যিকভাবে কর্মরত এলাকায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
তবে কারখানার মালিকরা মনে করছেন, তাদের এই নির্দেশনা শ্রমিকরা হয়তো মানবেন না। কারণ, গত রোজার ঈদে অনেক শ্রমিক বাড়ি যেতে পারেননি। তাই এবারের ঈদে হয়তো মালিকদের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই শ্রমিকরা বাড়ি যাবেন। শ্রমিক নেতারাও মনে করেন, তারা বছরের এই বিশেষ ছুটিতে বাড়ি যাবেই। কারণ উৎসবের বাইরে শ্রমিকদের কোনো ছুটি দেয়া হয় না।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনার বাইরে যাব না। শ্রমিকরা ৩ দিনই ছুটি পাবেন। এই স্বল্প সময়ে শ্রমিকেরা বাড়ি যাবে কি না সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।
তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে শ্রমিকদের গ্রামে না যাওয়ার বিষয়ে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। তবে সরকারি ছুটি অনুযায়ী পোশাক কারখানাগুলোতেও ৩ দিনের ছুটি থাকবে। সরকার কর্মস্থল ত্যাগ না করতে বলেছে। কারখানাগুলোও এই নিয়ম মেনে চলবে। এর মধ্যেও যে কেউ কেউ বাড়ি যাবে না তা কি করে বুঝবো?
সংগঠনটির শীর্ষ আরেক নেতা বলেন, গত রোজার ঈদে লকডাউন থাকায় রাস্তায় যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করেনি। তবুও শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে বাড়িতে চলে গেছে। এবার ঈদে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ঈদের যাত্রীদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সরকার ট্রেনও চালু করেছে। এছাড়াও গত রমজান ঈদে অনেকেই বাড়িতে যেতে পারেননি। এবারের ঈদে তারা বাড়ি যেতে চাইবেন।
তবে বিজিএমইএ সরাসরি নিষেধ না করলেও পোশাক খাতের অন্যতম সংগঠন বিকেএমইএ শ্রমিকদের ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট (অর্থ) মোরশেদ সারোয়ার (সোহেল) চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রত্যেক শ্রমিক ও কারখানা মালিকদের সরকারি নির্দেশনা মানতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সব কারখানাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কোরবানি ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে যেতে পারবেন না। শ্রমিকদের সেভাবেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের ভাইদাদা বলে কর্মস্থল এলাকা ছেড়ে চলে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারেরও নির্দেশনা আছে। তবুও কেউ গেলে নিশ্চয়ই সেটা অন্যায়ের আওতায় পড়বে।
তবে সরকারি ছুটির সাথে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের মাত্র ৩দিন ছুটি দেয়ায় সম্পূর্ণ অমানবিক বলে মনে করেন শ্রমিক সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, শ্রমিকরাও তো মানুষ। কারখানাগুলোর উচিত এখনই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে ঈদের ছুটি দেয়া। কিন্তু সরকারি নিয়ম মানতে গিয়ে শ্রমিকদের কষ্ট দেয়া হবে কেন?
কারখানা মালিক ও সরকারের শ্রমিকদের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৩ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া-আসা অনেক ঝামেলা হবে। বেশিরভাগ শ্রমিক উত্তরবঙ্গের। যেখানে আসা-যাওয়াতে ২ দিন লেগে যায়।
এই শ্রমিক নেত্রী বলেন, শ্রমিকদেরও আবেগ আছে। তারা ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজন রেখে শহরে আসে। তারাও বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে চান। তাই যতই কড়াকড়ি আরোপ করা হোক না কেন শ্রমিকেরা গ্রামে যাবেই। এটা বিবেচনা করে আরো ২দিন ছুটি বেশি দিলে কারখানা মালিকদের কী এমন ক্ষতি হতো?
গত ১৬ জুলাই সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি ৩ দিন থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওইদিন তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
একইভাবে ছুটিকালীন ৩ দিন পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি।