রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটকসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় নতুন টাকার কেনাবেচা জমে উঠেছে। প্রতিটি ঈদে ছোট ছেলেমেয়েদের বাড়তি আনন্দ দেয় নতুন টাকা। তাই জামা-কাপড় কেনার পাশাপাশি শেষ মুহূর্তে বাড়তি টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন ঘরমুখো মানুষ।
নতুন টাকা বিক্রেতারাও সারাবছর কম বেশি বিক্রি করলেও মূলত অপেক্ষা করেন ঈদের এই সময়ের জন্য। বেশ চাহিদা থাকায় অন্যসব পণ্যের মতো এটিও বিক্রি হচ্ছে মুনাফায়। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলে দর কষাকষিও।
মঙ্গলবার গুলিস্তান থেকে ১০ টাকার ৫টি নতুন নোটের বান্ডিল কিনেছেন জাকির হোসেন। প্রতি বান্ডিলে এক হাজার টাকা থাকলেও তাকে দিতে হয়েছে এক হাজার একশ’ টাকা। অর্থাৎ একশ’ টাকা বেশি দিয়ে নতুন নোট কিনেছেন তিনি।
চ্যানেল আই অনলাইনকে জাকির হোসেন বলেন, ‘সবার জন্য তুন জামা-জুতা কেনা শেষ। বাড়ি যাওয়ার সময় বাচ্চাদের জন্য কিছু নতুন টাকা নিলাম। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক সময় পাওয়াও যায় না। তাই বাড়তি ৫শ’ টাকা দিয়ে ৫ হাজার টাকার নতুন নোট নিতে হলো।’
বছরজুড়ে এই ব্যবসা চলে। তবে ঈদকে ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয় বলে জানান নতুন টাকার ব্যবসায়ীরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বান্ডিলে থাকে একশ’টি নোট। এসব নোটভেদে প্রতি বান্ডিলে মুনাফার পরিমাণও হয় ভিন্ন ভিন্ন।
দুই টাকার বান্ডিল কিনলে ক্রেতাকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৪০ টাকা। অর্থাৎ পুরাতন ২৪০ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবে নতুন ২০০ টাকা। আর পাঁচ টাকার নতুন বান্ডিলের জন্য (৫০০ টাকা) দিতে হবে ৫৮০ টাকা। এভাবে ১০ টাকার বান্ডিল অর্থাৎ ১০০০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিল বা ২০০০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিল বা ৫০০০ টাকা, একশ টাকার বান্ডিল বা ১০০০০ টাকার জন্য অতিরিক্ত গুণতে হবে ১০০ টাকা হারে।
বিক্রেতাদের সাথে বলে জানা গেছে, পুরাতন টাকার ব্যবসা করে সংসার চালান অনেক ব্যবসায়ী।
মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে দীর্ঘদিন ধরে নতুন টাকার ব্যবসা করছেন মরিয়ম বেগম। আগে তিনি বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করে সংসার চালাতেন।
মরিয়ম বেগম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এখন নতুন টাকার ব্যবসায় সংসার চলে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয়। লাইনে দাঁড়াতে হয় দীর্ঘক্ষণ। সপ্তাহে একদিন আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে মাত্র ৮ হাজার টাকা দেয়। সেই টাকা নিয়ে ফুটপাতে এসে বসি।’
‘কিন্তু এখানেও যন্ত্রণা আছে। পুলিশেরা পুরাতন টাকা দিয়ে নতুন টাকা নিলেও বাড়তি টাকা দেয় না। উল্টো তাদের টাকা দিতে হয়।’
গুলিস্তানে ফুটপাতের নতুন টাকা ব্যবসায়ী কামরুল জানালেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মচারিদের কমিশন দিয়ে নতুন টাকা আনতে হয়।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, কমিশন দেয়ার পর বেশি লাভ থাকে না। তারপরও আনতে হয়। সারাবছর এখানে ব্যবসা করা লাগে, তাই পুলিশকেও কিছু দিতে হয়।
ব্যবসা কেমন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য সময় দৈনিক ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা লাভ হয়। তবে ঈদকে ঘিরে এখন বেচাবিক্রি বেশি। দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বা তারও বেশি লাভ থাকে।
গত ৩ জুন থেকে নতুন টাকার বিনিময় শুরু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক। আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত তারা গ্রাহককে নতুন টাকা দেবে। ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে যারা টাকা নিতে অস্বস্তি বোধ করেন মূলত তারাই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফুটপাত থেকে নতুন টাকা কেনেন।
যেসব ব্যাংক ও শাখায় নতুন টাকা পাওয়া যাবে
রাজধানীর ন্যাশনাল ব্যাংক যাত্রাবাড়ী শাখা, জনতা ব্যাংক আব্দুল গণি রোড কর্পোরেট শাখা, অগ্রণী ব্যাংক এলিফ্যান্ট রোড শাখা, সিটি ব্যাংক মিরপুর শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংক কাওরান বাজার শাখা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক বসুন্ধরা সিটি (পান্থপথ) শাখা, উত্তরা ব্যাংক এবং চকবাজার শাখায় নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া সোনালী ব্যাংক রমনা কর্পোরেট শাখা, ঢাকা ব্যাংক উত্তরা শাখা, আইএফআইসি ব্যাংক গুলশান শাখা, রূপালী ব্যাংক মহাখালী শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক মোহাম্মদপুর শাখা, জনতা ব্যাংক রাজারবাগ শাখা, পূবালী ব্যাংক সদরঘাট শাখা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক মালিবাগ শাখা, ওয়ান ব্যাংক বাসাবো শাখা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ শ্যামলী শাখা, ডাচ-বাংলা ব্যাংক এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শাখা, দক্ষিণখান, মার্কেন্টাইল ব্যাংক বনানী শাখা এবং ব্যাংক এশিয়া ধানমন্ডি শাখা থেকে নতুন নোট বিনিময় করা হবে।