চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইয়েমেন থেকে ফিরলেন ৩৩৬ বাংলাদেশী

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন থেকে রোববার ভোরে ৩৩৬ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইয়েমেনের সরকার সমর্থক সেনাবহিনী ও শিয়া হাউদি বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে দেশটির বিভিন্ন শহরে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের সমুদ্র পথে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সহায়তা চায় বাংলাদেশ। প্রথম দফায় ভারতীয় জাহাজে করে আটকেপড়া ৩৩৬ জন বাংলাদেশীদের আনা হয় ভারতের কোচি বন্দরে। সেখান থেকেই দেশে ফেরেন তারা। 

দুটি ফ্লাইটের প্রথমটিতে ১৯০ জন ও দ্বিতীয়টিতে ১৪৬ জন যাত্রী ছিল। আটকে পড়া বাকিদেরও ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ফেরত আসা বাংলাদেশীরা যুদ্ধের ভয়াবহতা সর্ম্পকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে শিউরে ওঠেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত্যু চিন্তায় আতঙ্কে ছিলেন মোটামুটি সবাই, এমনটাই বলেছেন অনেকে। বিমান হামলা আর প্রতিনিয়ত গুলির শব্দ তাদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিত হাজার গুণ।

ইয়েমেন থেকে ফেরত আসা ছালামত মিয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, ‘চার মাস আগে ইয়েমেন গিয়েছি জীবনে বেঁচে ফিরতে পারব, এমন আশা করিনি। আজ দেশে ফিরতে পেরে খুবই ভাল লাগছে’।

ইয়েমেনে আটকে পড়ে কোনো বাংলাদেশীই ভাল ছিল না এবং দূতাবাসের কেউ খোঁজ নেননি উল্লেখ করে ঢাকার নবাবগঞ্জের সালামত মিয়া বলেন, ‘তিন লক্ষ টাকা খরচ করে গিয়েছিলাম কোম্পানী মাত্র এক মাসের বেতন দিয়েছে বাকি তিন মাসের কোন কিছুই দেয়নি। বাংলাদেশের দূতাবাসের কেউ যোগাযোগ করে নাই।’

ফেনীর ফারজানা আকতার সাড়ে তিন বছর আগে স্বামীর হাত ধরে গিয়েছিলেন ইয়েমেনে। সেখানে কোন কাজ না করলেও স্বামীর সাথেই থাকতেন। তিনিও স্বামীসহ দেশে ফিরে এসেছেন। বিমান বন্দরে ফারজানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, কী দুর্বিষহ অবস্থা! এমন অবস্থায় বেঁচে ফিরতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’

এখনও আটকে থাকাদের সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘এখন যারা আটকে আছে তারা অনেক কষ্টে আছে।’

ফেরত আসা কুমিল্লার আরাফাত বলেন, ‘রাতে ঘুমাতে পারি নাই গুলির শব্দে সবসময় অজানা আতঙ্ক নিয়ে দেশে আসার প্রহর গুনেছি। ফিরতে পারবো কিনা তাও জানতাম না। আজ দেশের মাটিতে পা দিয়ে কী যে ভাল লাগছে তা বোঝাতে পারবো না।’

অনেক টাকা খরচ করে ইয়েমেন গিয়ে হঠাৎ করে ফেরত আসতে হ্ওয়াতে অনেকে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আশা করছেন সরকার তাদের সাহায্য এবং দেশেই কর্মসংস্থানে সহায়তা করবেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহারিয়ার আলম শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে ফেরত আসা বাংলাদেশীদের স্বাগত জানান।

বিমান বন্দরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন,  ভারত সরকারের সহায়তায় আমরা ৩৩৬ জনকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আরও যারা আটকে আছেন তাদেরও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

এখনও ঠিক কতজন আটকে আছে এ বিষয়ে মন্ত্রী কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ইয়েমেন থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশ লোকজনদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এসব বাংলাদেশীকে ইয়েমেনের সানা, হুদায়দা ও বন্দরনগরী এডেন থেকে ভারতীয় নৌবাহিনী ও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স পাশের দেশ জিবুতিতে নিযে যায়। এরপর গত ৮ দিন ধরে ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি জাহাজে করে তাদের কেরালার কোচি বন্দরে নিয়ে আসা হয়। এরপর বাংলাদেশ বিমানের দুইটি ফ্লাইট তাদের ঢাকা নিয়ে আসে। এর আগে আরও ২১ জনেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।