নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংবাদপত্রের প্রতিনিধিদলের সংলাপে সাংবাদিকরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রস্তাব দিলেও সেনা মোতায়েন ও ‘না’ ভোট প্রশ্নে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব এসেছে। এই দুই বিষয়ে শেষ পর্যন্ত তারা একমত হতে পারেননি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বুধবার পূর্ব নির্ধারিত এ সংলাপ শেষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফ্রিংয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ এ কথা জানান।
তিনি বলেন, সংলাপে এই বিষয়ে দুই ধরনের প্রস্তাব এসেছে। কেউ বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েন দরকার, আবার কেউ বলেছেন দরকার নেই। ‘না’ ভোট রাখা না রাখা প্রশ্নেও বিভিন্ন মত এসেছে বলে জানান ইসি সচিব।
হেলালুদ্দিন আহমেদ জানান, আরও সে প্রস্তাব ও পরামর্শ এসেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আইনের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ, পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন, আরপিও সংশোধন এবং বাংলায় তর্জমা করে প্রকাশ, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে প্রেয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন।
নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে ধর্মের ব্যবহার না করতে সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশি শক্তিমুক্ত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনসহ প্রার্থীদের হলফনামা জনসাধারনের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন সাংবাদিকরা। প্রার্থীরা যাতে অনলাইনের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন সে ব্যাপারেও পরামর্শ এসেছে তাদের কাছ থেকে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন:অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি কমিশনকে। তবে জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সমর্থন করি না আমি। সেই সঙ্গে নাম সর্বস্ব পর্যবেক্ষক সংস্থাকে যেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া হয়।
বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন: নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।
সেনা মোতায়েন প্রশ্নে জ্যেষ্ঠ এ সাংবাদিক বলেন: নির্বাচন একটি সিভিল প্রশাসনের কাজ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ কাজে সামরিক বাহিনীকে মোতায়েন না করাই ভালো।
জেষ্ঠ্য সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ অবশ্য সেনা মোতায়েন প্রশ্নে ইতিবাচক। তিনি বলেন: সেনা বাহিনী সুনামের সঙ্গে দেশে বিদেশে কাজ করছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য করতে আমরা তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারি।
সার্বিক বিষয়ে ইসি সচিব বলেন: সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সবার প্রস্তাব ও পরামর্শগুলোর সারাংশ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশনই নেবে।
সংলাপের চূড়ান্ত সফলতা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করে উল্লেখ করে হেলালুদ্দিন আহমেদের আশা প্রকাশ করেন রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা আস্থায় আনতে পারবেন।
সংলাপে অংশ নিলেন যারা:
গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের প্রথম ধাপে বুধবার আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রিন্ট মিডিয়া ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিলিয়ে ৩৭ জনকে।
যারা সংলাপে অংশ নিয়েছেন তারা হলেন- নূরুল কবীর, সাইফুল আলম, আশিস সৈকত, মোস্তফা কামাল, মতিউর রহমান চৌধুরী, খন্দকার মুনীরুজ্জামান, শ্যামল দত্ত, নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, আনিস আলমগীর, মো. শফিকুর রহমান, ফরিদা ইয়াসমিন, সামশুল হক, মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওমর ফারুক, মো. আব্দুল্লাহ, মাহফুজউল্লাহ, কাজী সিরাজ, আনিসুল হক, আমানুল্লাহ কবীর, গোলাম মর্তুজা, বিভুরঞ্জন সরকার, মাহবুব কামাল, সোহরাব হাসান, কাজী রোকনুদ্দীন আহমদ (ইসির তালিকার ক্রমানুসারে)।
বুধবার তাদের মধ্যে ১২ জন অনুপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবারের সংলাপে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও এজেন্সির প্রধান সম্পাদক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, রেডিওর বার্তা প্রধানসহ ৩৪ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
অন্য কমিশনাররা সহ কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।