নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১ রানে আউট হয়েছেন রোহিত শর্মা। ২৪০ রান তাড়া করতে গিয়ে ভারতের ব্যাটিং ধসের সূচনা তার মাধ্যমেই। যেদিন রোহিত জ্বলেন না, ভারতের যে ত্রাহি অবস্থা হয় সেটা আরও টের পাওয়া গেল! তাতে আফসোসটা আরও বাড়ছে! ইশ্, রোহিতের ক্যাচটা যদি সেদিন নিতে পারতেন তামিম!
বাংলাদেশের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল সেদিন। ভারতের বিপক্ষে জিতলে টিকে থাকত সেমির স্বপ্ন। রোহিতকে সেদিন মাত্র ৯ রানেই ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল টাইগাররা। কাজে লাগাতে পারেনি। তামিম ইকবালের ক্যাচ হাতছাড়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত ওপেনার তুলে ফেলেন ১০৪ রান। ম্যাচটাই বাংলাদেশের নাগালের বাইরে নিয়ে যান তাতে। সেদিন তামিম ক্যাচটা নিতে পারলে হয়ত অন্যরকম কিছুই হতে পারত। রোহিতকে দ্রুত ফেরানো গেলে যে ভারতের টপঅর্ডারকেই শুধু চাপে ফেলা যায় না, মহাচাপে ফেলা যায় তাদের নড়বড়ে মিডল অর্ডারকেও।
ভারতের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স বলছে রোহিতকে থামানো গেলে অন্যরকমই হতে পারতো। কারণ, শেখর ধাওয়ান চোটে পড়ার পর থেকেই ভারতের দুই ওপেনারের চাপটা একাই সামলাতে হয়েছে রোহিতকে। নিজের ব্যাটিং, সঙ্গে নড়বড়ে লোকেশ রাহুলের দিকেও নজর রাখতে হয়েছে তাকে। দুদিক সামলে রোহিত জ্বলায় ভারতের সেমির পথ হয়েছে পরিষ্কার। আর ব্যর্থ হওয়ায় ভেঙে গেছে ফাইনালের স্বপ্ন।
ভারত ম্যাচে রোহিতের উইকেটটি এক হিসেবে সবচেয়ে দরকারি ছিল বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু ৯ রানের মাথায় ক্যাচ ফেলে তাকে জীবন দেন তামিম। সেখান থেকে টাইগারদের জন্য ম্যাচ ধীরে ধীরে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলেন রোহিত। রাহুলকে নিয়ে গড়েন দেড়শর ওপেনিং জুটি। অথচ সেমির পথ খোলা রাখতে ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল টাইগারদের।
শুধু রোহিত কেনো, বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ব্যর্থতার গল্প খুঁড়তে গেলে যে একেকটি শোকগাথাই সামনে চলে আসবে। সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ তখন উড়ছে। সামনে নিউজিল্যান্ড। যে ম্যাচে একেবারে শেষমুহুর্তে যেয়ে হারতে হয়েছে। সেখানেও ওই ফিল্ডিং মিসের কারণই বেদনা জাগায়!
ওই ম্যাচে কেন উইলিয়ামসনের সহজ রানআউট মুশফিকুর রহিম মিস করেছিলেন, সেই উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জুটিতে ম্যাচ জয়ের ভিত গড়ে দেন। অথচ ম্যাচটা জিতলে সেমির জন্য ভারত ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হত না বাংলাদেশকে!
পরে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও একই অবস্থা। ৯ রানে থাকার সময় ওয়ার্নারের ক্যাচ ছাড়েন সাব্বির রহমান। সেই ওয়ার্নার শেষ পর্যন্ত থামেন ১৬৬ করে। অজিরা করে ৩৮১। বাংলাদেশ নিজেদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে সংগ্রহ ৩৩৩ করে সেদিন। শেষ অবধি লড়াই করে হারে। আসলে হেরেছে তো অজি ইনিংসের সময়ই! ওয়ার্নারের ক্যাচ ছাড়ার সময়ই।
সেমির স্বপ্ন যখন হাতছাড়া। একটা জয়ে বিশ্বকাপ শেষ করার সুযোগ। শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। সেই ম্যাচেও একই হাল! বাবর আজম মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি। ৯৮ বলে করেছিলেন ৯৬। তার চেয়েও বড় কথা, ইমাম-উল হকের সঙ্গে তার ১৫৭ রানের ওপেনিং জুটি ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচ।
অথচ বাবরের সে পর্যন্ত যাওয়ারই কথা ছিল না! ৫৭ ও ৬৫ রানে দুবার জীবন পেয়েছেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। একবার মোসাদ্দেকের কল্যাণে, আরেকবার তাকে বাঁচিয়ে দেন মুশফিক। ইমামও একবার জীবন পান তার সঙ্গে। দুজনের ব্যাটে পাকিস্তান রান তোলে ৩১৫। দুজনকে সময়মত আউট করা গেলে বাংলাদেশকে অষ্টম স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করতে হত না হয়ত!