একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১১ দিন আগে দেশের বড় দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে কি কি কাজ করবে – দুটি দলই তার সারসংক্ষেপ ভোটারদের সামনে তুলে ধরেছে। বলতে গেলে দুটি দলই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বিগত দিনে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে নিজের ও দলের নেতাদের ভুল ত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করে বলেছেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব।’ গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আরো বলেছেন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি। মূলত দলটির ইশতেহারে নিজেদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত ইশতেহারের অনেকটাই মিল রয়েছে। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য, সবার অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিহিংসাহীনতা- এই নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তারা গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনবে। শুধু তাই নয়, সংসদে ডেপুটি স্পিকার করা হবে বিরোধীদল থেকে। এমন আরো নানান প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের ইশতেহারে।
মোটা দাগে বলতে গেলে ইশতেহারে দুইটি দলেরই প্রধান লক্ষ্য, দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা। তবে আমাদের কাছে সবকিছু ছাপিয়ে দুটি বিষয়কে বড় মনে হয়েছে। এক. এই প্রথম বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান ভুল স্বীকার করে নেওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। দুই. ক্রমাগত হামলার শিকার হয়েও কোনো দল তার ইশতেহারে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিশ্রুতি দিলো।
বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বড় দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা। এমনকি নির্বাচনের পরেও বিজয়ী দল, পরাজিত দলের সমর্থকদের উপর নানাভাবে হামলার উদাহরণও কম নয়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। আবার ক্ষমতায় গিয়ে দেশ পরিচালনা করতে নানা রকম ভুলত্রুটি হবে; সেটাই স্বাভাবিক। আর সেইসব ভুলকে যখন কেউ স্বীকার করে, তাতে থেকে শিক্ষা নিতে চায় – সেটাও আমাদেরকে মানবিকতা আর ইতিবাচক রাজনীতির নতুন বার্তা দেয়।
আমরা মনে করি, বড় দলগুলোর এসব প্রতিশ্রুতকে বিবেচনা নিয়ে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। ভোটারদের রায়েই নির্ধারিত হোক সুন্দর বাংলাদেশের কারিগর। তবে নির্বাচিত হয়ে যেন এসব প্রতিশ্রুতিকে না ভুলে যান তারা।