ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরানকে কড়া হুমকি দিয়েছেন। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে তিনি ইরানকে “বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি” হিসেবে উল্লেখ করেন। বলেন, ‘ইরান সরকারের সন্ত্রাসের ফাঁস নিজেদের ঘাড়ে আটকাতে দিবে না’ ইসরায়েল।
নাটকীয় এক মুহূর্তে তিনি ‘ইরানি ড্রোন’ দাবি করা একটি টুকরো নাড়িয়ে দেখান যা ইসরায়েল অঞ্চলের ভেতরেই গুলি করে ভুপাতিত করা হয়েছিলো। ইরান দাবি করে আসছে এই ড্রোনটি তাদের নয়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অবশ্য এই বক্তব্যকে ‘কার্টুনিশ’ অভিহিত করে বাতিল করে দেন। বলেন, “এর কোন জবাব দেয়ারও প্রয়োজন নেই।”
কনফারেন্সটিতে উপস্থিত থাকা বিবিসির কূটনৈতিক প্রতিবেদক জোনাথন মার্কাস বলেন, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নাটুকেপনায় এবারেরটাই সেরা। সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগে নিজ দেশেই বিতর্কের মুখে রয়েছেন নেতানিয়াহু।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ‘আগামী এক দশকের মধ্যেই ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলবে’ বলে নেতানিয়াহুর দাবিকে সঠিক নয় বলেছেন। নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তি, যা নাৎসি জার্মানিকে নিবারণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো, তার সাথে ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তির সামঞ্জস্য টানেন।
তিনি বলেন, এই চুক্তিটি শুধুমাত্র ‘একটি বিপদজনক ইরানি বাঘকে মুক্ত করেছে’ যার বিরুদ্ধে “নিজেদের রক্ষায় আমরা কোন প্রকার দ্বিধা ছাড়াই পদক্ষেপ নেবো”।
চরম নাটকীয় এক মুহূর্তে ড্রোনের টুকরা হাতে নিয়ে তিনি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের দিকে সরাসরি ইঙ্গিত করে বলেন, “আপনি কি এটা চিনতে পারছেন? অবশ্যই আপনার এটা চেনা উচিত, এটা আপনারই। আপনি ইরানের শাসকদের কাছে একটা বার্তা নিয়ে যেতে পারেন: ইসরায়েলের সক্ষমতা পরীক্ষা করবেন না।”
ইরানের প্রতিক্রিয়া কি?
পরবর্তীকালে জারিফ গাল্ফ অঞ্চলের জন্য একটি নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, এটা ছাড়া এখানে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি দাবি করেন, ইরান এই অঞ্চলকে গ্রাস করছে না- আমরা বিশ্বাস করি না এটা আমাদের স্বার্থের পক্ষে বা এটা সম্ভব। তাই আমাদের কথা বলা শুরু করা প্রয়োজন।
নিজেদের প্রতিবেশীদের ও ফিলিস্তিনির বিরুদ্ধে আগ্রাসনের নীতি নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে তিনি বলেন, তারা তাদের বেআইনি নীতির দায় এড়াতে চেষ্টা করছিলো। পরমাণু চুক্তির ক্ষেত্রে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা যে চুক্তিটি অর্জনের জন্য সবকিছুই করেছি তা ‘নেতানিয়াহুর প্রচেষ্টা ছাড়া’ আমরা প্রথমে ভঙ্গ করবো না।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণ?
আজকের এই প্রতিক্রিয়া গত সপ্তাহের বিরোধিতার ফল, যেখানে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল ও ইরানের সেনাবাহিনী সরাসরি বিরোধে জড়ায়। ইসরায়েল সিরিয়া-ইসরায়েল সীমান্ত অতিক্রম করতে যাওয়া একটি ইরানি ড্রোন ধ্বংস করার পর সিরিয়ায় ইরানি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে অভিযান চালায়।
এই আক্রমণের সময় একটি ইসরায়েল এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর পাইলট নেমে যেতে সক্ষম হন। ২০০৬ সালের পর তখনই প্রথম কোন লড়াইয়ে ইসরায়েল যুদ্ধ বিমান হারায়।
দীর্ঘমেয়াদে কি হবে?
আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষিতে ইরান-ইসরায়েল বৈরিতা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও বৃদ্ধি পায়। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের পতন থেকে শুরু করে, যার ফলে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সিরিয়ায় বিভিন্ন শক্তির প্রোক্সি যুদ্ধ পর্যন্ত সময়ে তার ক্রমবৃদ্ধি ঘটে।
২০১৫ সাল ইরান ও ছয়টি বিশ্ব শক্তির মধ্যকার চুক্তির সরব বিরোধীতা করেছে ইসরায়েল। তারা দাবি করে আসছে ইরানের উপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতেও লাগাম টানার।
ইরানের সাথে এই চুক্তির জন্য ইউরোপের জোড়ালো সমর্থন থাকলেও ইরানের আঞ্চলিক ভূমিকা খর্ব করার জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা সবার মাঝেই বাড়ছে। সিরিয়া অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি লাভবান ইরান, এমনটাই ধারণা।
এই বক্তব্যকে কিভাবে দেখছে ইসরায়েল?
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উপর দুর্নীতির খড়গ ঝুলছে। দুইটি পৃথক ঘটনায় ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হতে পারে। এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন নেতানিয়াহু।
বিবিসির প্রতিবেদকের মতে, তাই মিউনিখে উপস্থিত হয়ে তিনি তার দেশের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে চান, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার ক্রমবৃদ্ধির এই সময়ে তিনি ইসরায়েলের জন্য অপরিহার্য নেতা।