দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা চুক্তি অবরোধ পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদ চরমে পৌঁছে গেছে। ডেমোক্র্যাট ওবামা সরকার ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চুক্তি করেছিল, যেটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বাতিল করে দেন। এত কিছুর পরও ইরানকে তার পরমাণু বোমা বানানোর বিষয়ে বিরত রাখা যায়নি বলে পশ্চিমা বিশ্ব অন্য পথ বেছে নিয়েছে। গত কয়েকবছরে ইরানে বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং সামরিক বাহিনীর জেনারেল সোলাইমানিকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ইরান বরাবরই এসব হত্যাকাণ্ডে ইজরায়েল ও সেদেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করে আসছে।
চ্যনেল আই অনলাইন সংবাদে জানা যায়: গত শুক্রবার সন্ত্রাসীদের গুপ্ত হামলায় ইরানের জ্যেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিজাদেহ নিহত হয়েছেন। রাজধানী তেহরানের পূর্বাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে: ওই হামলায় আহত হওয়ার পর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ওই হামলায় তার নিরাপত্তায় কর্মীরাও আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ইরানে ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পরমাণু নিয়ে গবেষণা নিয়োজিত চারজন বিজ্ঞানী গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে। তবে ইরান ওইসব হত্যাকাণ্ডের জন্য সবসময় ইসরাইলকে দায়ী করে আসছে। ২০১৮ সালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এক বক্তব্যে ইরানের আজকের হামলায় নিহত নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিজাদেহ নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য করেছিলেন।
সন্ত্রাসী হামলায় ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদাহ হত্যার ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নিয়েছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেহাগান বলেছেন: সন্ত্রাসীদের ওপর বজ্রপাতের মতো আঘাত হানা হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এই হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ওই হামলাকে কোনো ‘রাষ্ট্রের মদদে’ হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে, মোহসেন ফখরিজাদাহ ইরানের গুপ্ত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির পেছনের বড় কর্তা।’
আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা তাকে ‘ইরানি বোমার জনক’ হিসেবে অভিহিত করতেন। তবে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ইরান শান্তিরক্ষার জন্য বলে দাবি করে আসছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ গতকাল টুইট বার্তায় বলেন: সন্ত্রাসীরা ইরানের একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। তিনি এ হামলার জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরান যতোই গর্জন করুক না কেন; এই মুহূর্তে কোনো যুদ্ধে জড়াবে না তারা। বিশেষ করে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের আগে। তাই প্রতিশোধের হুমকি তাদের আপাত কৌশলের অংশ। বাস্তবতার সাথে মিল নেই।
তবু এই ঘটনা ইরান অতি সহজে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। তবে এটাও ঠিক এই মুহূর্তে ইরান কোনো গুরুতর যুদ্ধে না জড়ালেও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ইরান তার পরমাণু বোমা বানানোর গোপন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলকে টার্গেট করে। ভবিষ্যতে ইজরায়েল ও ইরানের যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি একটা বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয় হয়তো ঘটে যাবে। বিশ্বশান্তির ধারকবাহকদের এসব বিষয়ে এখনই তৎপর না হলে ভবিষ্যত পৃথিবীতে শান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে হয়ে দাঁড়াবে এইসব অপতৎপরতা।