সম্প্রতি ফাঁস হওয়া মার্কিন সরকারের এক গোপন নথিতে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে, যা অনেকটা বোমা বিস্ফোরণের মতো। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে পররাষ্ট্র সচিব কলিন পাওয়েলের পাঠানো ওই আনুষ্ঠানিক চিঠিতে উঠে এসেছে ইরাক যুদ্ধ বিষয়ক অনেক জানা-অজানা পরিকল্পনার তথ্য।
চিঠিতে ইরাক নিয়ে বুশ এবং ব্লেয়ারের পরিকল্পনার কথা লেখা আছে। চিঠির বক্তব্য থেকে দেখা যায়, মুখে সবসময় শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক সমাধানের কথা বললেও আসলে ইরাকে যুদ্ধ শুরুর এক বছর আগেই বুশ এবং ব্লেয়ার ইরাকে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন!
নির্বাচনী প্রচারণায় ব্লেয়ার সে সময় বারবার ভোটারদের বলছিলেন, ‘আমরা ইরাকে কোনো রকম সামরিক তৎপরতা প্রস্তাব করি না।’ প্রকাশিত গোপন চিঠিটা কিন্তু তার ঠিক উল্টোটাই বলছে।
২০০২ সালে টেক্সাসের ক্রফোর্ডে জর্জ বুশ এবং টনি ব্লেয়ারের মধ্যে এক সম্মেলন হয়, যেখানে এ দু’জন ইরাকে হামলা চালানো বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই প্রসঙ্গেই সম্মেলনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ২৮ মার্চ কলিন পাওয়েল চিঠিতে বুশকে নিশ্চিত করেন ইরাক বিষয়ে যে কোনো সামরিক কর্মকাণ্ডে যুক্তরাজ্য ‘আমাদের সঙ্গে থাকবে’।
শুধু তাই নয়, গোপন ওই ডকুমেন্টে আরো বলা হয়, ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে – এমন খবর প্রচারে প্রেসিডেন্ট বুশের পক্ষে সাফাই গাওয়ার কাজ করবেন ব্লেয়ার, যেখানে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ বলতে প্রকৃতপক্ষে সাদ্দামের কাছে কিছু ছিলো না।
কথা ছিলো ব্লেয়ারের এই সহায়তার বিনিময়ে বুশ তার ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্ব নেবেন। পরিস্থিতিকে এমনভাবে তুলে ধরবেন যেনো সবাই মনে করে ব্রিটেন আমেরিকার পোষা কুকুর নয়। দু’টি দেশের মধ্যে একটি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে যেখানে দু’টি দেশই সমান।
ওই ডকুমেন্টের আরেকটি চিঠি থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে ব্রিটিশ জনমত প্রভাবিত করার জন্য বুশ যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টিতে গুপ্তচর নিযুক্ত করেছিলেন।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভারের সব ই-মেইল প্রকাশ করার জন্য আদালতের দেওয়া নির্দেশের প্রেক্ষিতে এই ডকুমেন্টগুলো প্রকাশ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হিলারি ডকুমেন্টগুলো চেয়েছিলেন।
অনেক আগে থেকেই দাবি চলে আসছিলো ব্লেয়ার এবং বুশ বুশের ক্রফোর্ড র্যা ঞ্চের বন্ধ দরজার আড়ালে ইরাক যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিলেন এবং দু’জনে মিলে ‘রক্ত দিয়ে’ ইরাকে হামলা করার চুক্তি সই করেছিলেন। তবে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবরই অভিযোগটি অস্বীকার করে এসেছেন। গোপন ডকুমেন্টগুলো ফাঁসের মধ্য দিয়ে তাদের বেুশ-ব্লেয়ার জোটের মিথ্যাচারই যেনো ফাঁস হয়ে গেলো।
২০০৩ সালে ইরাকে সংঘটিত মার্কিন-ব্রিটিশ আক্রমণ তদন্তে গঠিত দলের প্রধান ছিলেন স্যার জন চিলকট। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এই চিঠি তিনি তদন্তের সময় না দেখে থাকলে এটি ইরাক যুদ্ধের তদন্তে নতুন দিক খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই স্যার চিলকটের কাছে তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি জানিয়েছেন অনেকে।