ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদলের আবাস, এমন অন্তত দু’টো বিমান ঘাঁটিতে মিসাইল-বৃষ্টি ঘটিয়েছে ইরান।
পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে, বুধবার স্থানীয় সময় ভোরে ইরাকের আনবার প্রদেশের আইন আল-আসাদ ঘাঁটি এবং এরবিল প্রদেশে অবস্থিত আরেকটি বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ইরান ১৫টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে।
ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ৩ জানুয়ারি ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনায় আগেই ভয়াবহ প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ইরান। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর এবং ইরানের একের পর এক মিসাইল ছোট ছোট হামলার নমুনার ধারাবাহিকতায় বুধবার এই মিসাইল-বৃষ্টির ঘটনা ঘটল।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলেও বলা হয়েছে, এটি ছিল একটি প্রতিশোধমূলক হামলা।
ইরানের বিশেষ বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডসও জানিয়েছে, সোলায়মানি হত্যার প্রতিশোধেই এ রকেট হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ’তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাহিনীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: ‘যারা নিজেদের ঘাঁটিতে এই সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীকে জায়গা দিচ্ছে, আমেরিকার সেই সবগুলো মিত্রপক্ষকে আমরা সতর্ক করছি, যে অঞ্চলেই ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের সূচনা হবে সেটিকেই টার্গেট করা হবে।’
এরপর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ টুইটারে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দাবি করেন, হামলাটি আত্মরক্ষার্থে করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এমন দাবি অস্বীকার করেন তিনি।
Iran took & concluded proportionate measures in self-defense under Article 51 of UN Charter targeting base from which cowardly armed attack against our citizens & senior officials were launched.
We do not seek escalation or war, but will defend ourselves against any aggression.
— Javad Zarif (@JZarif) January 8, 2020
হতাহতের সংখ্যা নিয়ে দাবি-পাল্টা দাবি
ইরানের রকেট হামলায় হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি বলে যুক্তরাষ্ট্র এখনো দাবি করলেও ইরানের দাবি, হামলায় নিহত হয়েছে ৮০ জন মার্কিন সেনা।
বুধবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বলেছে, ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে তেহরানের চালানো মিসাইল হামলায় অন্তত ৮০ জন ‘আমেরিকান সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। ১৫টি মিসাইলের কোনোটিই মাঝপথে বিস্ফোরিত হয়নি বলেও উল্লেখ করেছে চ্যানেলটি। এছাড়া কোনো ইরাকি সেনার মৃত্যুও ঘটেনি এ হামলায়।
শুধু তাই নয়, রেভল্যুশনারি গার্ডসের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রের বরাতে রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আরও জানিয়েছে, ওয়াশিংটন কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নিলে ইরান ইরাকের ওই এলাকায় আরও শতাধিক চিহ্নিত মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে প্রস্তুত।
মার্কিন গণমাধ্যম ইউএসএ টুডে’কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে থাকা সেনা সদস্যরা আগেই হামরার খবর পেয়ে যাওয়ায় নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।
বুধবার ইরাকের রকেট হামলার শিকার আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে থাকা নরওয়ের ৭০ জন সেনা সদস্য নিরাপদ আছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিনজার স্টরডাল।
একই বিমান ঘাঁটিতে ১৩০ জন ড্যানিশ সেনা সদস্যও রয়েছে। ডেনমার্কের সশস্ত্র বাহিনীর টুইটার পেজে জানানো হয়েছে, তাদের কেউ হতাহত হয়নি।
এছাড়াও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার শিকার দুই ঘাঁটিতে থাকা কোনো ব্রিটিশ সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র স্টেফানি গ্রিশাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরাকে মার্কিন স্থাপনার ওপর হামলা সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। প্রেসিডেন্টকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে এবং তিনি পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন ও তার জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করছেন।’
তার কিছু পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটবার্তায় জানান, ‘সবকিছু ঠিক আছে’। বলেন, সম্ভাব্য হতাহতের সংখ্যা এখনো তারা জানতে পারেননি।
টুইটবার্তায় তিনি বলেন: ‘সব ঠিক আছে! ইরান থেকে ইরাকে দু’টো সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে মিসাইল ছোড়া হয়েছে। হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে বর্তমানে। এ পর্যন্ত সব ভালোই আছে! এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী আমাদের! সকালে এ নিয়ে একটি বিবৃতি দেবো আমি।’
All is well! Missiles launched from Iran at two military bases located in Iraq. Assessment of casualties & damages taking place now. So far, so good! We have the most powerful and well equipped military anywhere in the world, by far! I will be making a statement tomorrow morning.
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) January 8, 2020
এ নিয়ে ট্রাম্পের ডেমোক্রেটিক প্রতিপক্ষ এবং সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথমে বলেছিলেন বিস্তারিত জানার আগে মন্তব্য করবেন না তিনি। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অন্তহীন যুদ্ধের ইতি টানবেন। এখন উল্টো তিনি নতুন আরেকটি যুদ্ধ শুরুর বিপজ্জনক দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রকে।
Donald Trump says he wants to end endless wars in the Middle East, yet he is bringing us dangerously close to starting a new one. pic.twitter.com/lTXpzBrqQR
— Joe Biden (@JoeBiden) January 7, 2020
ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উপদেষ্টা হেসামেদ্দিন আশেনা টুইটারে বলেছেন: ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেয়া যে কোনো প্রতিকূল সামরিক পদক্ষেপের জবাব দেয়া হবে পুরো অঞ্চলের পক্ষ থেকেই সর্বগ্রাসী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের মিত্রতাকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন: ‘অবশ্য সৌদি আরব চাইলে ভিন্ন পথে যেতে পারে – পরিপূর্ণ শান্তির পথ বেছে নিতে পারে তারা।’