“তোমরা ব্যর্থ হবে। তোমরা দেখতে পাবে ইরাক শাসন সহজ নয়। তোমরা ব্যর্থ হবে কারণ তোমরা এর ভাষা জানো না, ইতিহাস জানো না এবং আরব মানসিকতাও তোমরা বোঝোনা।” জিজ্ঞাসাবাদে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের এমন ভবিষ্যদ্বাণী এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে জাতিগত সংঘাতের পরিব্যাপ্তি এবং ভয়ঙ্কর জোঙ্গিগোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান যেনো সাদ্দামের হুঁশিয়ারির কর্কশ প্রমাণ।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক সাদ্দামকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) অফিসার জন নিক্সন। সেই প্রশ্নোত্তর এবং হামলার ফলশ্রুতি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা সংক্রান্ত তার একটি বই প্রকাশিত হবে এই মাসেই। সেই বইয়ের কিছু অংশ টাইম ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়, যেখানে বিপুল প্রাণসংহারি এই ভুলকে স্বীকার করে নেন সাবেক এই সিআইএ অফিসার।
সাদ্দামের বক্তব্য সমর্থন করে নিক্সন বলেন, সুন্নি চরমপন্থা ও শিয়াপ্রধান ‘শত্রু’ ইরানকে পাশে রেখে, ইরাকের মতো বহুজাতিগত একটি রাষ্ট্রকে শাসনের জন্য তার (সাদ্দাম) মতো নির্মম লৌহমানবই প্রয়োজন।
তবে সিআইএ’র এই অফিসারই প্রথম নয়, এর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইরাক হামলাকে ভুল বলে স্বীকার করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতায় জ্বালানি দিয়েছে মূলত এই ইরাক যুদ্ধ।
সাদ্দামের নির্মমতাও ইতিবাচক দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে নিক্সনের চোখে। তিনি বলেন, “সাদ্দামের নেতৃত্বের ধরণ এবং বর্বরতায় ঝোঁক তার শাসনামলের অনেক দোষের একটি, কিন্তু ক্ষমতার প্রতি হুমকি মনে করলে তিনি নির্মম হতেই পারেন। জন অসন্তোষে ভর করে তার সরকার উচ্ছেদ করা যেমন সম্ভব ছিলো না, তেমনই (সাম্প্রতিক) আইএসের মতো দলের এতটা সাফল্যও ছিলো অসম্ভব, যেমনটা তারা ভোগ করছে শিয়া নেতৃত্বাধীন বাগদাদ সরকারের অধীনে।”
নিক্সন বলেন, “সাদ্দামকে সম্পূর্ণ অপছন্দনীয় হিসেবে দেখলেও তিনি ইরাককে যেভাবে চালিয়েছেন সেজন্য অনিচ্ছা সত্যেও তার প্রতি সম্মানবোধ করেছি। তিনি (সাদ্দাম) আমাকে বলেছিলেন, তার আগে সেখানে শুধুই দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিলো। আমি (সাদ্দাম) এসব মিটিয়েছি এবং তাদের মধ্যে ঐক্যমত এনেছি।”
স্বৈরশাসন ব্যতীত দেশটি জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠতো- নিক্সনের এমন সরল অভিমতের সাথে একমত হতে পারেননি অনেক আরব বিশ্লেষক। তাদের মতে, এমন অভিমত স্বৈরশাসনকে উৎসাহিত করে। এছাড়াও একনায়কের কঠোর নীতির সাথে চরমপন্থার উত্থান ও জাতিগত বিবাদের সরাসরি সম্পর্কও দেখেন তারা।