একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওতে সংশোধন চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এরই মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইভিএম এর পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা তুঙ্গে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইভিএম এর সারসংক্ষেপ।
ইভিএম কী
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন এর সংক্ষিপ্ত নামই ‘ইভিএম’। সনাতনী ব্যালট বাক্স এবং কাগজে ছাপা প্রতীকের ব্যালট পেপারের বদলে মেশিনে থাকা পছন্দের প্রতীকের পাশে থাকা বাটন চেপে ভোট দেয়া যায়।
যেভাবে কাজ করে ইভিএম
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া ইভিএম বিষয়ক বিশেষ পরিপত্রে ইভিএম কিভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে বলা আছে।
পরিপত্র অনুযায়ী, ভোটের দিন ভোটকক্ষে নিয়োজিত প্রিজাইডিং অফিসার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণের আগেই ইভিএম মেশিন সেটআপ করবেন। প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের সব ভোটকক্ষে সেট করা ভোটিং মেশিন চালু করার নিরাপত্তা পিন কোড এবং পাসওয়ার্ড গোপনীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তর থেকে গ্রহণ, সংরক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করবেন।
এক্ষেত্রে অডিট কার্ড প্রবেশ করিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার-সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার পাসওয়ার্ড-পিন দিয়ে মেশিনের জিজ্ঞাসা অনুযায়ী আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটগ্রহণের জন্য মেশিন প্রস্তুত করবেন। ভোট গ্রহণ শুরুর আগে মেশিনের অপর কার্ডস্লটে পোলিং কার্ড প্রবেশ করাবেন। ভোটগ্রহণের জন্য মেশিন পুরোপুরি প্রস্তুত হলে অডিট কার্ডটি বের করে নেবেন। সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার অডিট কার্ড স্লটে প্রয়োজনে স্মার্টকার্ড প্রবেশ করিয়ে ভোটার সনাক্ত করবেন।
একজন পোলিং অফিসার ভোটার তালিকার হার্ডকপির (কাগজে ছাপা তালিকা) সাথে মিলিয়ে সনাক্তকৃত ভোটার নম্বর চিহ্নিত করবেন এবং অপর পোলিং অফিসার বৈধ ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দিবেন। এরপর সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ইলেক্ট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন।
এরপর ভোটার গোপন কক্ষে প্রবেশ করে পছন্দের প্রতীকের বাম দিকের বাটনে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন এবং সবুজ রঙের কনফার্ম বাটন চেপে ভোট সম্পন্ন করবেন।
ভোটগ্রহণের দিন বেলা ৪টার পর ভোটগ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট সহকারি প্রিজাইডিং অফিসাররা মেশিনে পুনরায় অডিট কার্ড প্রবেশ করিয়ে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শেষ করবেন।
বাংলাদেশে ইভিএম
বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে ব্যবহারের মাধ্যমে এই ইভিএম নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়। সর্বশেষ বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রতিবেশি দেশে ইভিএম
ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে সর্বপ্রথম ১৯৮২ সালে কেরালার একটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে ইভিএম নিয়ে বিতর্ক তুলেছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আমআদমি পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা অনেকেই ইভিএম বাতিল চাইছে। ভারতে ইভিএম নিয়ে এসব আপত্তির মূলে রয়েছে সন্দেহ-সংশয়। দলগুলোর শঙ্কা, আদৌ ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট পড়ছে তো?
আরও যেসব দেশে ইভিএম
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন বলছে, ভারত ছাড়াও ব্রাজিলে ইভিএম চালু আছে। ইউরোপের এস্তোনিয়া এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও ইভিএম চালু আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যেও ইলেকট্রনিক পদ্ধতির ভোটিং চালু আছে বলে জানিয়েছে ইয়াহু নিউজ। আসন্ন নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যের ভোট নিয়ে শঙ্কা জাগিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। কারণ সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর শুধু ইলেকট্রনিক পদ্ধতির ভোট নয়, পুরো নির্বাচন ঘিরে রাশিয়ার কারসাজি ভীতি কাজ করছে দেশটিতে।