বাংলাদেশে ব্যাংকের কর্মচারি ইউনিয়নের (সিবিএ) নেতাদের টিএ, ডিএ বিতর্কের মধ্যেই তা নিয়ে সাফাই গেয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, সেখানে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী চলে। আগের নিয়ম যদি বৈধ হয়ে থাকে তাহলে; আজকেরটাও বৈধ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “যখন আপনি ডিপুটি গভর্নর ছিলেন, তখন আপনার স্বাক্ষরে এই টিএ, ডিএ দেয়া হয়নি? তখন সেটা কি বৈধ ছিল না অবৈধ ছিল? আপনিই তো সে পথ চালু করে গেলেন।’’
বুধবার বাংলাদেশে ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের শাজাহান খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে আমার আসা নিয়ে আলোচনা হওয়াতে আমি আশ্চর্য হলাম। এটা তেমন কিছু নয়। কারণ মন্ত্রী হওয়ার পর তিনবার আর মন্ত্রী হওয়ার আগে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চার বার এসেছি। কিন্তু এখানে কিছু ব্যক্তি কী উদ্দেশে আমার বিষয়ে কথা বলেছে আমি জানি না।’
‘‘যেমন আমি একজনের নামই বলি। আমার কাছে মনে হয়েছে সাবেক ডিপুটি গভর্নর ইব্রাহীম খালেদ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করেছেন। অতএব যারা কথা বলবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি আপনারা সত্য কথা বলেন, মিথ্যা বলে পানি ঘোলা করার দরকার কি?”
এর আগে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন-এমন বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে আসা সিবিএ নেতাদের টিএ, ডিএ প্রসঙ্গও উঠে আসে।
সেই বৈঠকের বিষয়ে একটি গণমাধ্যমের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মন্তব্য করে বলেন, শ্রমিক সংগঠনগুলো নিজেদের মতো কার্যক্রম চালাবে। এ জন্য আলাদা করে ভাতা দেওয়া, সভার সময়কে অফিস সময় হিসেবে গণনা করা-এটা কীভাবে সম্ভব। তিনি তার ৫৪ বছরের কর্মজীবনে সিবিএর বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের টিএ, ডিএ দেয়ার কথা শুনেননি।
বৈঠকের বিষয়টি জানিয়ে ব্যানার টানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিবিএ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকালাওয়ালারা কি সব সত্য কথা লেখে?
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে কাজ করি। অতএব এটা আমার বিষয় নয়। কারণ আমি অর্থনীতির ছাত্র নয়।’
নৌমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকের সিবিএ হচ্ছে জাতীয় শ্রমিক লীগের সংগঠন। তাদের একটা প্রতিনিধি সভা আছে। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়েছে। তাদের সাথে খাওয়ার জন্য এসেছেন তিনি।
“এছাড়া রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে শ্রমিক, কর্মজীবী, পেশাজীবী, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ থেকে শতাধিক ত্রাণবাহি ট্রাক নিয়ে শিগগিরই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন। কাটঅফ সিস্টেমে মালিকদের মাধ্যমে প্রত্যেকে পোশাক শ্রমিকের বেতন থেকে ১০ টাকা করে নিয়েই ত্রাণের এই অর্থ যোগান দেয়া হবে। কিভাবে এটা সমন্বয় করা সে বিষয়ে কথা বলতে বিসিএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”
দেশের প্রভাবশালী এ শ্রমিক নেতা বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশব্যাপী জামাত-বিএনপি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার বিচারের দাবিতে আমরা নতুন করে সংগঠিত হচ্ছি। শিগগিরই এই বিচারের দাবি জানানো হবে।’’
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা আগে ডিপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানসহ তিনজন ডিপুটি গভর্নরের সাথে প্রায় আধাঘণ্টা বৈঠক করেছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। এরপর তিনি সিবিএ নেতাদের সাথেও আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন। সিবিএর কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়া অন্য কাউকে ওই বৈঠকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
ডিপুটি গভর্নরদের সাথে কি বিষয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, তাদের সাথে শুধু চা খাওয়া হয়েছে। অন্য কিছু না।
গত ১৫ অক্টোবর নৌমন্ত্রী রূপালী ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের এক সভায় যোগ দিয়েছিলেন। সেসময় তিনি ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে রূপালী ব্যাংকের কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৯ নেতাকর্মীর চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়েছিলেন শাজাহান খান। শুধু তাই নয়, এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশও দেন।