আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের ১৬ দিনব্যাপী চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন ‘নারীর জন্য চাই নিরাপদ সাইবার স্পেস’ শীর্ষক একটি অনলাইন আলোচনা সভা (ওয়েবিনার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাইবার অপরাধ এবং অনলাইনে নারীর প্রতি পদ্ধতিগত হয়রানি ও সহিংসতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা এতে অংশ নেন। অনলাইনে নিরাপদ বিচরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের নাগরিকের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা, পাসওয়ার্ডসহ ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা, স্কুলের পাঠ্যক্রমে ইন্টারনেট এথিকস যুক্ত করা, অনিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার না করা এবং হয়রানির ঘটনা গোপন না রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে জানানো প্রভৃতি বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠানে আলোকপাত করা হয়।
আলোচনার মধ্য দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সকলের সম্মিলিত সচেতনতা এবং পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থার দায়িত্বশীল ভূমিকার বিষয়গুলো উঠে আসে।
সাইবার অপরাধ বিষয়ে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাজমুল ইসলাম।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং ও অপরাধ সংঘটনের হার সবচেয়ে বেশি এবং ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী, যাদের বয়স ১৪ থেকে ২২ বছর। অন্যদিকে, সাইবার অপরাধী ও হ্যাকারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ১৭-১৮ বছরের কিশোর। এজন্য ব্যক্তি পর্যায়ে সাইবার হুমকি ও ঝুঁকি প্রশমনে স্কুল থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারের এথিকস বা নৈতিকতা বিষয়ে পাঠদান এখন খুব জরুরি।
স্কুলগুলোর পাশপাশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান নাজমুল ইসলাম।
ইন্টারনেট ব্যবহারে একটু সচেতন হলেই ৮০ শতাংশ ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্স এবং মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল।
তিনি বলেন, বাস্তব জীবনে সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের দিকও পরিবর্তিত হয়। তাই কোন অবস্থাতেই পাসওয়ার্ডের মতো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় অন্য কাউকে দেয়া যাবে না। সামাজিক জীবনের মতো অনলাইনেও কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না – এ বিষয়ে শিশু-কিশোরদের সচেতন করতে হবে। এজন্য নিরাপদ অনলাইনের গুরুত্ব বিষয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
সাইবার অপরাধীদের সতর্ক করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও এর ব্যাপক প্রচারের পরামর্শ দিয়ে টেক সলিউশান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন নাহার বলেন, সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগী নারীদের জন্য থানায় বা অন্যান্য অভিযোগ কেন্দ্রে আস্থা ও আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইনে হয়রানির শিকার নারীদের ৪৮ শতাংশ গ্রামের কিশোরী ও তরুণী, যারা অনিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার করে নিজের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেন। তাদের সচেতন করার জন্য সরকারী-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সাইবার বুলিং থেকে শিশুদের রক্ষায় কাজ করে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান।
সাইবার টিনস নামের একটি অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সাদাত অনুষ্ঠানে বলেন, সাইবার বুলিংয়ের শিকার এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা থেকে আমি এ বিষয়ে কাজ শুরু করি। নড়াইলের মতো জেলায় ইন্টারনেট বিষয়ে কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতা খুব কম এবং অনলাইন অপরাধ তদন্তে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দক্ষতারও ঘাটতি আছে। বর্তমানে স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে সাইবার টিনস অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করছি। আমি সফল হব তখনই, যখন এই অ্যাপে কোন অভিযোগ জমা পড়বে না।