সম্প্রতি ছাত্রলীগের এক বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক–বাহকেরা শতভাগ ভণ্ড মন্তব্য করে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রলীগের একটা অংশ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নিয়ে আসে। এর ধারক-বাহকেরা দেশটাকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়। পরে জাসদ নামে নতুন দল গঠন করে।
পরে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে মন্তব্য করেছেন জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য এবং জাসদ সভাপতির মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন সাংবাদিক ও ব্লগার আরিফ জেবতিক।
তিনি লিখেছেন, জনশ্রুতি আছে, এরশাদের মা মারা যাওয়ার পরে তার চামচা মন্ত্রীরা এমন চিৎকার করে কাঁদতে থাকলেন যে একসময় নাকি এরশাদ নিজেই বিরক্ত হয়ে শাহ মোয়াজ্জেম নাকি কাজী জাফরকে বলেছিলেন, ‘ওরে, এবার থাম। মা কি কারো সারাজীবনের জন্য বেঁচে থাকে রে পাগলা!
‘হাসানুল হক ইনু যখন সরকার সমর্থনে উগ্র বক্তৃতা দিয়ে থাকেন, তখন আমার কেন যেন এরশাদের মা মারা যাওয়ার সেই গল্পটি হুদাহুদিই মনে পড়ে যায়।
সে যাই হোক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ যখন বলেন, ‘জাসদ থেকে মন্ত্রী করার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে’ তখন অন্তত এটা ভেবে সান্ত্বনা পাই যে আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এরশাদের তুলনায় কয়েকহাজার গুণ উন্নত। কাকে কতটুকু গুরুত্ব দিতে হবে সেই ব্যাপারে তাঁরা সচেতন।
এর জবাবে হাসানুল হক ইনুর ‘এটি ইতিহাস চর্চার সময় নয়’ কথাটি আমাকে অবাক করেছে। এই একই ধরনের কথা জামায়াতিরা গত কয়েক বছর ধরে টানা বলে এসেছে যে ইতিহাস চর্চা না করে আমাদেরকে খালি সামনের দিকে তাকাতে হবে।
কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে ইতিহাস না জানলে সামনে আগানো যায় না। হাসানুল হক ইনু ইতিহাসকে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেন না। হয় তাঁদেরকে শক্ত করে বলতে হবে একাত্তর পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল অথবা তাঁদেরকে বলতে হবে ঐ পদক্ষেপ ভুল ছিল এবং তাঁরা অনুতপ্ত।রাজনৈতিক বোধদয় ভালো জিনিস, এবং তাঁরা যদি মনে করেন যে একাত্তর পরবর্তী সময়ের জাসদের ভুমিকা ভুল ছিল তাহলে সেটি জোরেশোরে বলা উচিত। এবং গণবাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর সংঘর্ষে যে হাজার হাজার তরুন সেই সময় মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত এই জাসদ নেতাদের।
তাহলেই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগ তারা নির্বিঘ্নে করতে পারবেন। অন্যথায় এসব খোঁচা তাঁদেরকে হজম করতেই হবে, কারন জাসদের সেই ভুমিকার মূল্য যদি শেখ হাসিনা-সৈয়দ আশরাফদেরকে তাঁদের নিজনিজ পিতার রক্ত দিয়ে মেটাতে হয়, তাহলে ইতিহাস চর্চাকে সবসময়ের জন্য ধামাচাপা দিয়ে রাখাটা উনারা হয়তো সবসময় পারবেন না, মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বলেই ফেলবেন।