চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়

বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত ও উচ্চারিত একটি বাক্য ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’। ছাত্রজীবনে অসংখ্যবার এ নিয়ে ভাবসম্প্রসারণ লিখে আসতে হয় বেশিরভাগ মানুষকে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, এই বাক্যের মূলভাব সবাই জানলেও বাস্তব জীবনে তা মানতে চান না অনেকেই। যেমন আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই কমিশনের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে এবং সেসব নির্বাচনে যত রকম অনিয়ম, সহিংসতা আর প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে; তার সব দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছে তারা।

তবে কমিশনের বিদায়বেলায় ব্যতিক্রম হয়ে এসেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে; ইচ্ছা থাকলে সহিংসতা, অনিয়ম এমনকি প্রাণহানী ছাড়াও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়। এ নিয়ে অবশ্য অনেকের দ্বিমতও থাকতে পারে। তারা যুক্তি দিয়ে বলতে পারেন- ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ বা কোনো একটি বিষয় ভালো না মন্দ; তা বিচারের মাপকঠি হতে পারে না।

এটা ঠিক, তর্কের খাতিরে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার বাস্তবতাকেও উপেক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। বরং তা হয়ে উঠে বিরাট এক নির্ণয়ক। নাসিক নির্বাচনও তাই। এই নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) থেকে শুরু করে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ ব্যক্তিরা বারবার নিশ্চিত করে বলেছেন, এ নির্বাচন হবে পুরো দেশের কাছে ‘মডেল নির্বাচন’।

আমরা দেখলাম, তাদের সেই ইচ্ছার পর সহিংসতা ও অনিয়মমুক্ত একটি নির্বাচন করে তার উপায়ও দেখিয়ে দিলেন তারা। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন- বহু বছর দেশে এরচেয়ে ভালো নির্বাচন আর দেখা যায়নি।

নাসিক নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৫৬. ৩২ শতাংশ ভোটার। কেউ কেউ বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ায় কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লেগেছে। এতে প্রভাব পড়েছে ভোটের হারে। এছাড়া অন্য সবদিক থেকেই এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থেই একটি মডেল নির্বাচন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

বর্তমান কমিশনের করা এর আগের সবগুলো নির্বাচনে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য মানুষের। এই তো শেষ পাঁচ দফায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। হাজারো অনিয়মের কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অথচ এসবের দায় নির্বাচন কমিশন প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের কাঁধে চাপাতে চেয়েছে।

কমিশনের এমন অভিযোগ খুবই হাস্যকর। কেননা একটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচন; এমন কি নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত প্রশাসনসহ সেই এলাকার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের অধীনে। সেক্ষেত্রে কমিশনের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। নাসিক নির্বাচনেও তা প্রমাণিত হয়েছে।

আমরা মনে করি, কমিশন চাইলে যে কোনো পর্যায়ের নির্বাচন নাসিক নির্বাচনের মতো করা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছার। তাহলে উপায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে।