ভ্যাট আদায়ের জন্য দুই বছরে মাত্র তিন হাজার দোকানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসানোর কারণে ব্যবসায়ীরা বৈষম্য ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
তাই এ সমস্যা সমাধানে যে কোনো একটি ব্যবসায়িক খাতে ইএফডি যন্ত্র বসানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি এবং জাতীয় দোকান ভিত্তিক সংগঠনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে বলা আছে- দোকান এবং প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে এনবিআর ইএফডি মেশিন স্থাপন করবে। কিন্তু দুই বছরে মাত্র তিন হাজার ইএফডি মেশিন স্থাপন করেছে। ফলে যেসব দোকানে ইএফডি মেশিন আছে সেসব দোকানে ক্রেতা কমে গেছে।
তিনি বলেন, দুই বছরে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ দোকানে ইএফডি স্থাপন করে একযোগে ভ্যাট নেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু এনবিআর এক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। তাই খেয়াল-খুশিমতো অপরিকল্পিতভাবে ইএফডি স্থাপন না করে তিন হাজার যন্ত্রকে যেকোনো একটা খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- সারাদেশের স্বর্ণের দোকান, টাইলসের দোকান বা হোটেল-রেস্তোরাঁ এমন একটি খাত নির্বাচন করবে রাজস্ব বোর্ড, যেখানকার সব দোকান ইএফডির আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে।
যতদিন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ ভাগ দোকান ইএফডির আওতায় না আসবে ততদিন পর্যন্ত অন্য খাতে খুচরা পর্যায়ের ৫ শতাংশ ভ্যাট উৎসে করের ৩০ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত করে ৩৫ শতাংশ কর আদায়ের প্রস্তাব করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এনবিআরকে উদ্দেশ্য করে হেলাল উদ্দিন বলেন, ৫ শতাংশ হারে যেটা ভোক্তার কাছ থেকে নেয়ার কথা সেটা উৎসে কর হিসাবে নিয়ে যাক। আমরা দেখছি, খুচরা পর্যায়ে তারা ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আদায় করতে পারেনি। উৎস কর হিসাবে তারা ৩০ শতাংশ নিচ্ছে সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ নিলে তারা আরও বেশি ভ্যাট আদায় করতে পারবে।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, রাজস্ব বোর্ডের সাঁড়াশি অভিযানে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। ভ্যাট গোয়েন্দারা অতর্কিতভাবে বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তল্লাশির নামে দোকানে রক্ষিত কাগজপত্র জব্দ করে নিয়ে যায়। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত ব্যক্তিকেও তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সারাদেশে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে। এতে ব্যবসাবান্ধব সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এনবিআরের সমালোচনা করে ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও এনবিআর দোকান মালিকদের না জানিয়ে জোর পূর্বক রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনছে। আইন অনুযায়ী, রেজিষ্ট্রিকৃত দোকানসমূহ ১৫ তারিখের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। এনবিআর ইতিমধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার দোকান ও প্রতিষ্ঠানকে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় এনেছে। এর মধ্যে ৩ লাখ দোকান ও প্রতিষ্ঠান জানে না যে, তাদের রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় নেয়া হয়েছে।
এমতাবস্থায় লাখ লাখ দোকান প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, কারো ৬ মাস, কারো ৮ মাস কারো, ১০ মাস কারো আরো বেশি মাসের জরিমানা বকেয়া হয়ে পড়েছে।
আয়কর আদায়ে নেপালের চেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দাবি আগামী ২ মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে আয়করের অফিস স্থাপন করে করের আওতা বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন, মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রমুখ।