বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নেয়ার জন্য অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে পাড়ি জমায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড কিংবা পশ্চিম ইউরোপ কিংবা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে পড়তে যায়। স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গেলে আসলে এসব দেশে পড়তে যাওয়াই যায়।
তবে যারা টিউশন ফি দিয়ে এই সব দেশে পড়তে যান, তাদের জন্য একটা দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া আসলে অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এরপরও ছাত্র-ছাত্রীরা এই সব দেশে পাড়ি জমায় ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। তারা ভাবে একটা সময় হয়তো সেখানে স্থায়ীভাবে থাকা যাবে।
উত্তর ইউরোপের বালটিক সাগর পাড়ের দেশ এস্তোনিয়ার নাম আমরা কয়জনইবা জানি। চমৎকার এই দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ১৩ লাখ। দেশটির প্রতিবেশী দেশ হচ্ছে ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও লাটভিয়া। ইইউ ও সেনজেনভুক্ত এই দেশটি মানবাধিকার সূচকে সব চাইতে ওপরের সারির দেশগুলোর একটি।
দেশটি পরিচিত ডিজিটাল দেশ হিসেবে। এস্তোনিয়াই পৃথিবীর সর্বপ্রথম রাষ্ট্র যারা তাদের সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছে অনলাইনে। দেশটিতে সকল রকম গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সাইন করা হয় ডিজিটালি। পুরো দেশটিই পৃথিবীতে পরিচিত “ই-কান্ট্রি” হিসেবে। স্কাইপের মতো কোম্পানিও এস্তোনিয়া আর সুইডেনের যৌথ প্রযোজনায় পরিচালিত। পৃথিবীর সব চাইতে বিশুদ্ধ বাতাসের দেশে হিসেবেও রাষ্ট্রটি স্বীকৃত। রয়েছে মত প্রকাশের সব রকম স্বাধীনতা। অথচ আমরা কয়জনই বা এই দেশটি সম্পর্কে জানি।
দেশটিতে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজিতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএচডি করার সুযোগ রয়েছে। ইংল্যান্ড, আমেরিকা কিংবা অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিগুলোর মতো এতো বেশি টিউশন ফি দিয়ে এখানে পড়তে হয় না। কিছু কিছু ইউনিভার্সিটির কিছু সাবজেক্টে এমনকি ফ্রি’তে পড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। আর যেসব ইউনিভার্সিটিতে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হয়, সেখনে টিউশন ফি বাংলাদেশের বেশীরভাগ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির টিউশন ফির চাইতেও কম।
এছাড়া থাকা-খাওয়ার জন্যও এই দেশটি চমৎকার। কম খরচে খুব ভালো ভাবে থাকা-খাওয়ার সুযোগও রয়েছে দেশটিতে। সব চাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে পাঁচ বছর থাকার পর দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার জন্য আবেদন করা যায়। আর একটানা আট বছর থাকলে নাগরিকও হওয়া যায়।
এস্তোনিয়া হতে পারে বাংলাদেশী ছাত্র- ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ পড়াশুনার একটি জায়গা। এখানকার একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পুরোপুরি আন্তর্জাতিক করে তোলার চেষ্টা করছে। এ জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের তারা বেশি করে স্বাগত জানায়। এদের একটা ব্যাচেলর প্রোগ্রাম আছে, নাম- “ক্রিয়েটিভিটি এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট”।
এটি এস্তোনিয়া, পর্তুগাল ও লিথুয়ানিয়ার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম। এই সাবজেক্টতি’তে কোন বাংলাদেশী ছাত্র যদি ব্যাচেলর করতে চায়, আইএইএলটিএস স্কোর ৫ হলেই চলে। তবে না থাকলেও কোন সমস্যা নেই, কারণ স্কাইপিতে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা ইন্টারভিউ নেয়া হয়। তারা যদি ঠিক মতো কথা বলতে পারে, তাহলে এডমিশন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এইচএসসি পর্যায়ের কোন সাবজেক্টে ৩ এর নিচে জিপিএ থাকলে আবেদন করা যাবে না।
এখানে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া’টা খুবই সহজ। এইচএসসি’র সার্টিফিকেট, মার্কসিট ও পাসপোর্ট এর স্ক্যান কপি ই-মেইল করে হেড অব দ্যা কারিকুলা’কে ই-মেইল (kristjan.oad@eek.ee) করে দিলেই হবে। পরবর্তীতে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে সে’ই ফিরতি মেইলে সব কিছু জানিয়ে দিবে।
মনে রাখতে হবে এখানকার সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদনের শেষ সময় মে মাসের শেষ সপ্তাহ; অর্থাৎ সময় আর খুব একটা বেশি হাতে নেই। এস্তোনিয়ার অন্যান্য ইউনিভার্সিটিগুলোর ওয়েবসাইট থেকেও ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের পছন্দ মতো বিষয় বেছে নিতে পারে।
একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া একেক রকম। তবে কম বেশি প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কাছাকাছি নিয়মেই আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয়ে থাকে। এস্তোনিয়ার ভিসা পাওয়াও তুলনামূলক ভাবে অনেক সহজ। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে এস্তোনিয়ার কোন এম্বাসি বাংলাদেশে নেই। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের রেসিডেন্স পারমিট কিংবা ভিসার জন্য ভারতের নয়াদিল্লিতে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
এস্তোনিয়ায় উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে আরও কিছু জানার থাকলে ইন্টারনেট থেকেই অনেক কিছু জানা সম্ভব। এছাড়া কারো কিছু জানার থাকলে এই ঠিকানায় ই-মেইল করা যেতে পারে: aminulislam80@yahoo.com