একজনের বয়স ৩১। পরিণত ফুটবলার। বসে আছেন গ্রেটদের কাতারে। শুধু দেশের জার্সিতেই নেই কোনো শিরোপা! সেটাকে পূর্ণতা দিতে সামনে সুযোগ এসেছে আবারও। ১২ বছর আগে যে সুযোগ হাতছাড়া হয়েছিল। তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
অন্যজন হালকা-পাতলা ২৫ বছরের টগবগে যুবক। ক্যারিয়ারের প্রথম বড় আসরের ফাইনালে তার সামনে দেশকে ইউরোপসেরার মুকুট এনে দেয়ার সুযোগ। ফরাসিদের আদরের ‘গ্রিজু’। প্লাতিনি-জিদানের পর ফ্রান্সের জাতীয় নায়ক! তিনি আন্তনিও গ্রিজম্যান।
রোনালদোর পাওয়ার ফুটবল অথবা গ্রিজম্যানের জাদুকরী বাঁ পা। বয়সের পার্থক্য ৬ বছরের। শারীরিক গড়নে কিংবা ক্যারিয়ারে অর্জনেও দুই মেরুতে দুজন। তবে তাদের একটাই মিল— দুজনেরই জার্সি নম্বর ‘সাত’। অর্থাৎ আজ ইউরোর ফাইনালে ‘লাকি সেভেনের’ যুদ্ধ। স্তাদে দে ফ্রান্সে বাংলাদেশ সময় রাত একটা শুরু হবে ম্যাচ।
গ্রিজম্যান চলতি ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬)। সেমিফাইনালে তার জোড়া গোলেই ১০ বছর পর বড় কোনো আসরের ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। তার কাছেই ছিটকে পড়তে বাধ্য হয় জার্মানি।
সেমিতে দেশের হয়ে রোনালদোও গোল করেছেন। এ পর্যন্ত ৩ গোল করা রোনালদো পর্তুগালের এক যুগ পর বড় কোনো আসরের ফাইনালে উঠেছেন। ২০০৪ ইউরো ফাইনালে গ্রিসের কাছে হেরে অশ্রুসজল চোখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ১৯ বছরের কিশোর রোনালদোকে। গ্রিসের কাছে হেরে ট্রফি বঞ্চিত হয়েছিলেন সিআর সেভেন।
বড় টুর্নামেন্টে কোনো কিছু না জিতেই ছিটকে পড়ার ব্যথাটা জানা আছে তরুণ গ্রিজম্যানেরও। গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স। ম্যাচ শেষে সেদিন অঝরে কেঁদেছিলেন গ্রিজম্যান।
মাত্র ছয় সপ্তাহ আগেও কাঁদতে হয়েছিল গ্রিজম্যানকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বশেষ ফাইনালে! রোনালদোর রিয়ালের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেছিলেন তিনি। টাইব্রেকারে গোল করে শাপমোচন করলেও সেটা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের শিরোপা জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত রোনালদোর মুখেই ফুটেছিল শেষ হাসি। টাইব্রেকারে পাঁচ নম্বর কিকে লক্ষ্যভেদ করে ক্লাব ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ইউরোপসেরার মুকুট জিতে নেন পর্তুগিজ স্ট্রাইকার। তাই আজকের ম্যাচে ছায়া পড়বে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের স্মৃতিও।
ফরাসি ফুটবলে মিশেল প্লাতিনি ও জিনেদিন জিদান প্রজন্মের পর পল পগবাকে তাদের উত্তরসূরি হিসেবে দেখেছে সবাই। চলতি ইউরো শুরুর আগে ব্যাপারটা আরো জোরালো হয়। কিন্তু পগবা পুরোপুরি কথা রাখতে পারেননি। সেমিতে গ্রিজম্যানের জোড়া আঘাতে জার্মানি ছিটকে পড়ার পর ফরাসি দৈনিক ‘লা একুয়েপে’ দেশমের স্কোয়াডকে তকমা দেয় ‘গ্রিজম্যান প্রজন্ম’ হিসেবে।
সর্বশেষ ১৯৮৪ আসরে ন্যূনতম ৬ গোলের কোটা ছুঁয়েছিলেন প্লাতিনি। সেবার একাই ৯ গোল করে স্বাগতিকদের শিরোপা জেতান প্লাতিনি, যা ইউরোর সিঙ্গেল টুর্নামেন্টে আজো পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। এর পর গত ৩২ বছরে ইউরোর ইতিহাসে আর কোনো ফুটবলার এক আসরে ন্যূনতম ৬ গোলের দেখা পাননি।
কীর্তি আছে রোনালদোরও। চলতি আসরের সেমিতে পর্তুগাল-ওয়েলস ম্যাচের আগ পর্যন্ত ইউরোর ইতিহাসে প্লাতিনির গোলসংখ্যাই ছিল সর্বোচ্চ। ওয়েলসের বিপক্ষে গোল করে প্লাতিনির রেকর্ডে ভাগ বসান রিয়াল তারকা। কিন্তু এজন্য তাকে খেলতে হলো ইউরোর চারটি টুর্নামেন্ট। সে তুলনায় গ্রিয়েজম্যান ইউরোয় তার অভিষেক আসরেই করেছেন ৬ গোল। ফাইনালে বাড়তে পারে সংখ্যাটা।