চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইউনিসেফ’র প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের জন্যও চিন্তার

খাদ্যাভাস ও লাইফস্টাইল নিয়ে নানা ধরনের প্রতিবেদন তৈরি ও গবেষণা চলে বিশ্বব্যাপী। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’ বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সময় বাঁচানো এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষুধা নিবারণে এটি জনপ্রিয় হলেও স্বল্প পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকায় তা বাচ্চাদের অপুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া অর্থনীতির দিক দিয়ে যেভাবে উন্নতি করছে তাদের মধ্যে চাকরিজীবী বাবা-মা’র সংখ্যাও বাড়ছে। তারা তাদের ছেলে মেয়েদের সচেতনতার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না।

ফলে এই তিনটি দেশে ৪০ শতাংশের মতো বাচ্চাকে খাবারের জন্য ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’ দিচ্ছে মা। যা বাচ্চাদের খাদ্য ঘাটতি তো পূরণ করছেই না বরং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হচ্ছে। ৪০ শতাংশের মধ্যে বেশিরভাগ শিশুর বয়স ৫ বছর এবং বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশুকে এই নুডলস খাওয়ানো হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ না থাকলেও ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও যে অগ্রসরমান এবং কর্মজীবী মায়েদের সংখ্যা বাড়ছে, তা আমরা সবাই জানি। এছাড়া বাংলাদেশেও যে ইনস্ট্যান্ট নুডলস বেশ বিক্রি হয় এবং মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের খাদ্য তালিকায় ঢুকে গেছে, তাতে সন্দেহ নেই।

প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বরাতে বলা হয়েছে, ইনস্ট্যান্ট নুডলসের প্রধান উপাদানগুলো হলো আটা-ময়দা, পাম তেল ও লবণ। এছাড়া এতে স্বাদের জন্য দেওয়া হয় লবণ, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি বা ই৬২১), সিজনিং ও চিনি। এখানে কোনো পুষ্টি উপাদান, প্রোটিন এমনকি অন্য কোনো ভিটামিন থাকেই না। এ উপাদান দেহের হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায় এবং মস্তিষ্কে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

অনেক ইনস্ট্যান্ট নুডলসে এমএসজি না থাকলেও তাতে থাকে ই৬৩১ নামে আরেকটি উপাদান। এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া থাকতে পারে ই৬২৭ নামে ভিন্ন উপাদানও। ইনস্ট্যান্ট নুডলসে ব্যবহৃত আরও কিছু উপাদান রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এতে ব্যবহৃত সাইট্রিক এসিড বড়দের ক্ষতি না করলেও তা শিশুর উপযোগী নয়। এ উপাদানগুলো শিশুর শরীরের ক্ষতি করে এবং এতে স্থূলতাও সৃষ্টি হতে পারে।

ইউনিসেফের মতে, এই ধরনের খাবারের জন্য আয়রণ ঘাটতির পাশাপাশি গর্ভবতী মা’র বাচ্চা জন্মদানের সময় অনেক ধরণের ঝুঁকি থেকে যায়। ইউনিসেফ এশিয়া নিউট্রিনিস্ট বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের আধুনিক জীবন যাত্রায় খুব সহজ এবং ঝটপট তৈরি করা উপাদান এই নুডুলস। এমনকি এটা দামেও তুলনামূলক কম। কিন্তু এখানে প্রোটিন এবং আয়রণের পরিমাণ নেই বললেই চলে, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্তরায়। বিষয়টি বেশ উদ্বেগের বলে আমাদের মনে হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সারাবিশ্বে ১৫ কোটি শিশু এখন অপুষ্টিতে ভুগছে। এরা ভবিষ্যতে নানাবিধ সমস্যায় ভুগে থাকে, অনেকের মৃত্যুও হয়। বাংলাদেশেও শিশুদের অপুষ্টির বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। এছাড়া বাড়ন্ত শিশুদের বয়স উপযোগী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়ন্ত শিশুদের পরিপূরক খাবার হিসেবে ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’ একটি বড় জায়গা দখল করে আছে।

সার্বিক দিক চিন্তা করলে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশের পুষ্টিবিদ থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি পরীক্ষা করে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে শিশুরা ভবিষ্যত বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।