ইউক্রেনের জলসীমায় আটকা পড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’। ওই জাহাজে মিসাইল হামলা হয়েছে, যাতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। হামলাটি হয় ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার কিছু পড়ে। এই ঘটনায় শোক জানাচ্ছে দেশের জনগণ। সেইসঙ্গে উদ্বিগ্ন জাহাজে আটকে থাকা বাকি বাংলাদেশিসহ ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য।
গতকাল বুধবার রাতে বাংলাদেশি জাহাজে বিমান হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তারপরে যুদ্ধের কারণে আর গন্তব্যে যাওয়া হয়নি জাহাজটির। জাহাজে থাকা ক্রুদের আকুতি আর নানা আপডেট এখন মনোযোগ টানছে।
ইউক্রেনে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি রয়েছে যাদের মধ্যে শ পাঁচেকের সাথে যোগাযোগ রাখছেন পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। অনলাইনে যোগাযোগ ও পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে। তবে দূতাবাস কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ অসদাচরণও করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড সীমান্তে ফেরা বাংলাদেশিরা। এছাড়া সীমান্তে আসার পরে তাদের যানবাহন ও অন্যান্য বিষয়ে সমন্বয় না থাকার খবরও এসেছে নানা সংবাদ মাধ্যমে। ইউক্রেন থেকে লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে গেছে। সেজন্য সেখানে নানা অব্যবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে কার্যকর মনোযোগ দরকার বলে আমরা মনে করি।
জাহাজে আটকে থাকা বাংলাদেশিদের ফেরাতে সরকার ইউক্রেন ও রাশিয়া সরকারের সাথে যোগাযোগ করছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। যুদ্ধাবস্থার মধ্যে তাদের ফেরানো ঝুঁকি বিবেচনায় তাদের বর্তমানে জাহাজেই থাকতে বলা হয়েছে। নিহত হাদিসুরের মরদেহও সেই জাহাজেই রয়েছে বলেও খবর এসেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উদ্ধার কার্যক্রমে কখন কী করা উচিত, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের সশ্বস্ত্র বাহিনীর রয়েছে ঈর্ষণীয় ঐতিহ্য। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড-রোমানিয়ায় ফিরে আসা বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। জাতিসংঘ ও ওইসব দেশের সঙ্গে কার্যকর কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেকোন ইতিবাচক সমাধান সম্ভব। আমাদের আশাবাদ, দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং মানবেতর অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে আটকে পড়া বাংলাদেশিসহ বহু মানুষ।