চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আয়রে আমার ছেলেবেলা

আমার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে পুরান ঢাকার নারিন্দার বসু বাজার লেনে। আমরা আজিজ সাহেবের সাহেবি কায়দার দোতলা বাড়ির নিচ তলায় থাকতাম। বাবা ছিলেন ঢাকা কোর্টের উকিল। রাশভারী স্বভাবের ভীষণ। অসম্ভব ঘাড় ত্যাড়া টাইপের মানুষ বলতে যা বোঝায় আমার উকিল বাবা ছিলেন তার যথার্থ প্রতিচ্ছবি। ২৪ নম্বর বসুবাজার লেনের মালিক কাগজে কলমে আজিজ সাহেব হলে কী হবে, এলাকার মানুষজন এই বাড়িকে চিনতেন উকিল সাহেবের বাড়ি বলে।

আমাদের সদর ঘরটা ছিল রাস্তা লাগোয়া। সেই ঘরের দরজার সামনে এক চিলতে বারান্দার মতো একটু জায়গা। তার পরেই চলে গেছে বসুবাজার লেনের রাস্তা। বাঁ দিকে গেলে দয়াগঞ্জের লাল মাটির খোলা প্রান্তর। ডান দিকে কিছুদূর গিয়ে বাঁ দিকে কান্নি খেয়ে রাস্তাটার এক মাথা চলে গেছে শরত গুপ্ত রোড হয়ে বেগম গঞ্জের দিকে আর অন্য দিকের রাস্তা পাঁক খেয়ে চলে গেছে মনির হোসেন লেনের দিকে। মনির হোসেন লেনের ওপারে ঋষি পাড়া।

যেসব বিকেলে আমরা মহল্লার পোলাপাইন ধূপ খোলা মাঠে বল খেলার জায়গা পেতাম না সেদিন বিকেলে আমাদের বাড়ির সামনের খোলা রাস্তাটাকেই দিব্যি ধুপ খোলার মাঠ বানিয়ে দেদারসে বল খেলতাম। আমাদের খেলার মধ্যেই বাবার বন্ধু পাশের বাড়ির তোহা খান আসতেন আমাদের বারান্দায়। দু’বন্ধু মিলে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আড্ডা মারতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খেলা দেখে আমার বাবা হেসে উঠতেন। বাবার সঙ্গে তোহা খানও হাসিতে যোগ দিতেন। তখন বুঝতাম না কেন আমার বাবা, বাবার বন্ধু তোহা খান হাসতেন। এখনও কি তা বুঝি!ছোটবেলার অনেক কিছু এখনও আমার কাছে রহস্যের মতো মনে হয়। মনে হয় আমার ছোটবেলার পুরোটাই যেন এক গোলকধাঁধা। ছেলেবেলার কত ঘটনা, কত স্মৃতি আমাকে মাঝে মধ্যে অদ্ভুত এক চক্করের মধ্যে ফেলে দেয়। আমার ছেলেবেলা আমাকে নিয়ে অহর্নিশ কানামাছি খেলে। আজকাল সেসব কানামাছি খেলা আমি সযতনে ধরবার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি তার ছিটেফোঁটা আঁকবার।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)