চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আড়াই মিনিটের কিলিং মিশন, বস কই বলেই গুলি

মাত্র আড়াই মিনিটের কিলিং মিশনে রাজধানীর বনানীতে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন মুন্সীকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, ইতিমধ্যে হত্যাকারীদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়েছে তারা।

ওই অফিসের পিয়ন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলী জানান, বস কই বলে গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। বুধবার সন্ধ্যায় নিহত সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বনানীর বি ব্লকের চার নম্বর রোডের একটি বাসায় মুন্সি ওভারসিজ নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ছিলেন সিদ্দিক হোসেন মুন্সী। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিতেচারজন দুর্বৃত্ত এসে নিজ অফিসে গুলি করে হত্যা করে সিদ্দিক হোসেন মুন্সীকে (৫৫)।

ওই সময় আহত হয় অফিসের তিনজন সহকারী মির্জা পারভেজ (৩০), মোখলেসুর রহমান (৩৫) ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯)।

বুধবার সরেজমিনে বনানীর ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনটির পুরোটাই বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস। বাড়ির মালিক ইঞ্জিনিয়ার মুসা কলিম। তার নিজেরও রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসা রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মুসা ইন্টারন্যাশনাল’। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল্লাহ আল গালিব।

গালিব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল ঘটনার সময় আমরা অফিসে ছিলাম না। আমরা আগেই চলে যাই। এই বাড়িতে মুন্সি সিদ্দিক হোসেন প্রায় তিনবছর ধরে অফিস ভাড়া করে থাকেন। তিনি সাত থেকে আট বছর ধরে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমাদের সঙ্গেও আগে তিনি কাজ করেছেন, বছর তিনেক ধরে নিজেই অফিস নেন।

“তিনি ভদ্র মানুষ, তার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব ছিল কিনা আমরা জানা নেই।”

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ভবনের মোট  চারটি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে। দ্বিতীয় তলায় বাড়ির মালিকের মুসা ইন্টারন্যাশনাল। নিচতলার বামপাশে মুসা ইন্টারন্যাশনাল এবং ডানপাশের এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সি। বাড়িটিতে দু’টি গেট দিয়ে প্রবেশ করা যায়। এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সিতে প্রবেশের জন্য প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করে দ্বিতীয় আরেকটি গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। দু’টি গেটেই একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে।

একই ভবনের স্মার্ট কেয়ার করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক মোঃ আবু সাইদ বাপ্পি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঘটনার সময় আমরা অফিসেই ছিলাম, কিন্তু আমরা কিছুই বুঝতে পারি নাই, দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পর সিকিউরিটি গার্ড জানায় সিদ্দিক সাহেবকে গুলি করেছে।পরে আমরা তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, খুবই সজ্জন স্বভাবের হাসিখুশী প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।এতোদিন ধরে তাকে দেখেছি কখনোই তার মধ্যে খারাপ কিছু পাই নি।

সন্ধ্যায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে লাশের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে অফিসে এসেছিলেন এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সির পিয়ন আলী হোসেন।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, স্যারের রুমে মাত্র আমি নাস্তা হিসেবে পেয়ারা আর পানি দিয়েছি, ওই সময় রুমে একজন সন্ত্রাসী ঢুকে বলতে থাকে বস কই, বস কই, বলেই গুলি করে।

এই ভবনেই ছিল নিহত সিদ্দিক হোসেন মুন্সীর অফিস ‘এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সি’

হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে আমরা ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে বনানী থানার পরির্দশক (তদন্ত) আব্দুল মতিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঘটনাটি স্পষ্টকাতর। আশা করছি হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের বিষয়ে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কোনো তথ্য বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।

আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাস্থল রেকি করা সহ পুরো হত্যাকাণ্ডের সময় সাত-আট মিনিট।

তবে গোয়েন্দা পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, সিসি ক্যামেরায় ফুটেজে দেখা যাচ্ছে কিলিং মিশনটি ছিল আড়াই মিনিটের।

হত্যাকারীরা ধুলা-বালু রক্ষার্থে ব্যবহৃত মাস্ক পড়ে ওই অফিসে ঢুকে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি, আমরা হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ক্লু খুঁজছি। হত্যার ঘটনায় কোনো পারিবারিক, ব্যবসায়িক বা স্থানীয় কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বনানী থানায় নিহত ব্যবসায়ী সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় চারজনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন।

এ পথ দিয়েই যেতে হয় এমএস মুন্সি ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সিতে

বুধবার বিকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, গুলিতেই নিহত হয়েছেন সিদ্দিক হোসেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সিদ্দিককে দু’টি গুলি করা হয়েছিলো। একটি গুলি তার বাম হাতে লেগে বুকের ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আরেকটি গুলি বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ডান পাশে গিয়ে আটকে ছিল, যা উদ্ধার করা হয়েছে।

ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে স্বজনরা নিহতের লাশ নিয়ে গেছেন। নিহত মুন্সি সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি গ্রামে। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে।রাজধানীর উত্তরার চার নম্বর সেক্টরে তিনি সপরিবারে বসবাস করতেন।