চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারের লড়াইয়ে ন্যু ক্যাম্পে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখ’র বিপক্ষে ৩-০ গোলের দুর্দান্ত জয় ক্লাব ফুটবলে বিশ্বসেরা হওয়ার মিশনে ঠিক কক্ষপথেই রেখেছে বার্সেলোনাকে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
মেসির জোড়া গোলের সঙ্গে নেইমারের স্কোরে তাই সুবিধাজনক অবস্থাতে থেকেই জার্মান জায়ান্টদের সামনে তাদের ঘরের মাঠে নামছে মেসি-নেইমার-স্যুয়ারেজরা। ফাইনাল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এগিয়ে থেকেও অবশ্য রক্ষণাত্মক ফুটবলের ধার ধারছে না বার্সা।
দ্বিতীয় লেগেও আক্রমণের পসরা নিয়েই মাঠে নামছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। বার্সার আর্জেন্টাইন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে এই বিষয়টিই নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘এই ম্যাচেও আমরা আমাদের স্বাভাবিক আক্রমণাত্মক খেলাই খেলতে চাই, কারণ অন্য কোনো ধরণের ফুটবলে আমরা অভ্যস্ত নই। পুরো মৌসুমেই আমার অ্যাটাকিং ফুটবল খেলে প্রতিটি ম্যাচ জিততে চেয়েছি এবং এটিই আমাদের দলের দর্শন।’
প্রথম লেগে বায়ার্ন কোচ পেপ গার্দিওলার সঙ্গে ডাগ আউটের দ্বৈরথে এগিয়ে গেলেও সতর্ক বার্সা কোচ লুইস এনরিকে। ‘এই ধরণের ম্যাচের আগে কখনোই বেশি আত্মবিশ্বাসী থাকা ঠিক না। প্রতিপক্ষের প্রতি সমীহ রেখেই আবেগ সামলে মাথা ঠান্ডা রেখে মাঠের নামতে হবে।’
তিনি বলেছেন, ‘আমার ছেলেদের আমি বলবো কিভাবে বায়ার্ন আমাদের আক্রমণ করতে পারে, তাদের কি কি অস্ত্র আমাদের বিপক্ষে তারা কাজে লাগাতে চাইবে এবং কিভাবে আমরাও তাদের নিরস্ত্র করে কাউন্টারে যেতে পারবো।’
প্রায় অসম্ভব এবং কঠিন জেনেও অবশ্য হাল ছাড়ছেন না পেপ গার্দিওলা। ‘এখনো স্বপ্নটা বেঁচে আছে। আমাদের আরও ৯০ মিনিট হাতে আছে। জানি কাজটা সহজ হবে না, তবে আমি একজন যোদ্ধা।’
মুখে বায়ার্ন কোচ যতোই বলুক না কেন তিনি নিজেও জানেন সাম্প্রতিক অতীতের ফর্ম বিবেচনায় আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বায়ার্ন আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থেকেই বার্সার মুখোমুখি হবে। কারণ ফর্মটা একদমই ভালো যাচ্ছে না জার্মান চ্যাম্পিয়নদের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ চারটি ম্যাচেই হারতে হয়েছে তাদের।
১৯৯১ সালের পর এটিই বায়ার্নের সবচেয়ে বেশি টানা হারের নজির। তার উপর হঠাৎ করেই গোলের দেখা পাওয়ায় বন্ধ বায়ার্ন ফরোয়ার্ডদের। গত তিন ম্যাচেই কোনো গোল পায়নি বায়ার্ন যা তাদের ১৫ বছরের ইতিহাসেই নেই।
নিরাশার সঙ্গে অবশ্য আশার আলোও থাকছে বায়ার্নের জন্য। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গত দুই ম্যাচ অনুপ্রাণিত করবে বায়ার্নকে। শাখতারকে ৭-০ এবং পোর্তোর বিপক্ষে ৬-১ গোলের বড় জয় অবশ্যই অনুপ্রেরণা জোগাবে মুলার-গোৎসে- লেভানডভস্কিদের।
আবার স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে বায়ার্নের পুরোনো দ্বৈরথও তাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। এই পর্যন্ত স্প্যানিশ দলগুলোর সঙ্গে সাতবার ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে খেলেছে বায়ার্ন, জিতেছে ৫ টিতেই। তিন মৌসুম আগে বার্সেলোনাকেই তো নিজেদের মাঠে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বায়ার্ন। আবার উল্টো পিঠে রিয়ালের কাছে গতবারের হেরে যাওয়ার নিকট স্মৃতিও নিশ্চয়ই টাটকা।
আবার আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা নিয়ে মাঠে নামলেও বার্সার রক্ষণভাগকে ভেঙ্গে দেওয়ায় মোটেও সহজ হবে না। কারণ ডিফেন্সে দারুণ কাজ করেছে লুইস এনরিকে। গত ৭ ম্যচে কোনো গোল হজম করেনি পিকে-মাশ্চেরানোরা। আবার কাউন্টারে দুর্দান্ত বার্সার ফরোয়ার্ড নিয়েও দু:শ্চিন্তার শেষ নেই। এই মৌসুমে বার্সা ফরোয়ার্ডদের অতীত গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে দেওয়া মেসি-স্যুয়ারেজ-নেইমার ত্রয়ীকে সামলাতেও বিশেষ পরিকল্পনা রাখতে হবে বায়ার্নবস পেপ গার্ডিওলাকে। শেষ লেগেওতো জোড়া গোল করে মেসি এবং এক গোল করে নেইমার প্রমাণ রেখেছেন তাদের সামর্থ্যের।
কাজটা কঠিন হলেও শেষ পর্যন্ত হাল না ছাড়ার মানসিকতার জার্মান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে হার এড়ানোর লক্ষ্যই থাকছে বার্সার মূল চ্যালেঞ্জ। সাবেক সতীর্থ পেপ গার্ডিওলা সম্পর্কে ম্যাচের আগে বার্সা কোচ লুইস এনরিকের কথাই এর প্রমাণ রাখে। ‘তারা অবশ্যই শুরু থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই এবং সেই আক্রমণে তারা বিভিন্ন টেকনিকও যোগ করে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইবে। এটি নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই কারণ পেপ জানে তার কি করতে হবে। তারা পজেশন ফুটবল খেলবে এবং সুযোগ সৃষ্টি করার অব্যহত চেষ্টা চালাবে। আমি অন্তত আক্রমণাত্মক বায়ার্নকেই আশা করছি এবং আমরাও একই ধরণের ফুটবল খেলবো।’
গত তিন ম্যাচে গোলের দেখা না পেলেও এর আগের সাত ম্যাচে ২৫ গোল করা বায়ার্ন ফরোয়ার্ডরাও চাইবে তাদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে। আপাত:দৃষ্টিতে বায়ার্নের ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জকে তাই অসম্ভব মনে হলেও শেষ পর্যন্ত আরো একবার আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ভরা গতিময় ফুটবল লড়াই নিশ্চিতভাবেই উপভোগ করবে ফুটবল বিশ্ব।