নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের প্রতিবাদে আসামে চলমান বিক্ষোভের উপর ছোড়া পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আসামের গুয়াহাটিতে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল বিলটি পাস হওয়ার পর থেকে চলমান কারফিউ ভেঙে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীরা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আসামের বৃহত্তম শহর ও বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারিসহ আরও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং রাজ্যের দশটি জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আসামের ভাই-বোনদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই টুইটে তিনি বলেন: আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
বুধবার সংসদে ওই বিলের পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল বিতর্ক শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।
রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হওয়ার পর এক টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিনটিকে ভারতের জন্য ‘ল্যান্ডমার্ক দিবস’ বলে মন্তব্য করেন।
এরপর থেকেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে এই বিলের প্রতিবাদে আছড়ে পড়ে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ ঠেকাতে আসামের গুয়াহাটিসহ তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও জোড়হাট এলাকায় কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
আরেকটি টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন: কেন্দ্রীয় সরকার এবং আমি সংবিধান অনুসারে আসামবাসীর রাজনৈতিক, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং ভূমি সংক্রান্ত অধিকারগুলিকে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মূলত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের এই উদ্যোগ। এতে বলা হয়, আগের অন্তত ১১ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর ভারতে থাকলে ওইসব দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য যার ভারতে গেছেন।
তবে শুরু থেকেই বিলটির তীব্র বিরোধীতা করছে কংগ্রেস, বামসহ বেশ কয়েকটি দল। তাদের দাবি, এই বিল ভারতের সংবিধানের মূল চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত। ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।
গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে ভারতে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল-২০১৯’ অনুমোদন দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
বিলটি ভারতের সংসদের দুইকক্ষে পাস হলে প্রতিবেশী এসব দেশের হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সী এই ৬টি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবে।
এর আগে ২০১৬ সালে আনা ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ বিগত লোকসভায় পাস করতে পারলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে রাজ্যসভায় তা পাস করতে পারেনি মোদি সরকার। আবার ক্ষমতায় এসে নতুন করে তা পাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।