বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ও বিস্তৃত পর্বতমালার একটি আল্পস। সেই আল্পসের অস্বাভাবিক উচ্চতায় বরফ গলে হঠাৎ করে তৈরি হয়েছে বিশাল এক লেক বা দীঘি। আর এই লেক তৈরি হতে সময় লেগেছে মাত্র ১০ দিন!
গত জুনের শেষদিকে ইউরোপজুড়ে শুরু হওয়া তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পর্বতের বরফ গলে ঢালে এসে পানি জমা হয়ে এই লেক তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জলবায়ুবিদরা।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ব্রায়ান মেসত্রে নামের এক ফরাসি পর্বতারোহী আল্পস পর্বতমালার মাউন্ট ব্লাংক অঞ্চলে ১১ হাজার ১শ’ ফুট (৩ হাজার ৪শ’ মিটার) উঁচুতে উঠে আবিষ্কার করেন সেখানে বড় একটি জলাশয় তৈরি হয়েছে, যা আগে সেখানে ছিল না।
জনপ্রিয় ফটো শেয়ারিং অ্যাপ ইনস্টাগ্রামে নিজের তোলা ছবিটি পোস্ট করে মেসত্রে জানান, ছবিটি এ বছরের ২৮ জুন তুলেছেন তিনি। অথচ এর মাত্র ১০ দিন আগে আরেক পর্বতারোহী পল টডহান্টার ওই একই এলাকার বরফাবৃত ছবি তুলেছিলেন।
এত উচ্চতায় আসলে তরল পানির এমন লেক থাকারই কথা না। এ উচ্চতায় পানি থাকে শুধু বরফ আর তুষার রূপে। অভিজ্ঞ পর্বতারোহী মেসত্রে দেখেই বুঝে ফেলেন কত বড় অস্বাভাবিক এবং উদ্বেগজনক দৃশ্য দেখছেন তিনি। সাথে সাথেই লেকটির ছবি তুলে রাখেন মেসত্রে।
বিজ্ঞানীরা আল্পস পর্বতমালার এত উঁচুতে এমন জলাশয়ের সৃষ্টির বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। তারা হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ইউরোপে তাপপ্রবাহ আজকাল আগের তুলনায় খুব বেশি হচ্ছে। এদের তীব্রতাও আগের চেয়ে অনেক বেশি।
এই অত্যাধিক তাপ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলেও জানিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
‘এখনই সময় সবাইকে সতর্ক করার,’ বলেন ব্রায়ান মেসত্রে, ‘মাত্র ১০ দিনের ভয়াবহ গরম ডেন্ট দ্যু জিয়ান্ত এবং আইগুইলেস মারব্রিসের বরফ ধসিয়ে, গলিয়ে এদের মাঝে এত বড় লেক বানিয়ে ফেলেছে। এটি আসলেই উদ্বেগজনক…বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বরফ খুব দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে।’
২০১৫ সালেও ফরাসি গবেষক লুডোভিক রাভানেল আল্পসের ফ্রান্সের অংশের অনেক উঁচু একটি জায়গায় এমন তরল পানির দীঘি পেয়েছিলেন। তখনই এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরেন তিনি।
ইইউ’র কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’র তথ্য অনুসারে, এ বছরের জুন মাস ছিল বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ জুন।
গবেষণা সংস্থাটির স্যাটেলাইটে পাওয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায়, এ বছর ইউরোপের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বিশেষ করে জুনের শেষ ক’দিনে ফ্রান্স, জার্মানি এবং উত্তর স্পেনে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি ছিল।