‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১০ টাকায় এক কাপ চা, সিঙ্গারা, সমুচা আর চপ পাওয়া যায়, এটা বিশ্ববাসী জানলে গিনেজ বুকে রেকর্ড হবে। সেটা পাওয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে। এটি আমাদের গর্ব, এটি ঐতিহ্য।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের এমন মন্তব্যে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। তার বক্তব্যের অনেকেই নানামুখি প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শরিফুল হাসান লিখেছেন: অভিনন্দন তাকে। শিক্ষার মান নেই, গবেষণা নেই তাতে কী? তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ বছরের ইতিহাসের প্রথম উপাচার্য যিনি আবিস্কার করেছেন, এসব না থাকলেও দশ টাকায় এক কাপ চা, একটি সিঙ্গারা, একটি চপ ও একটা সামুচা পাওয়া যায়; আর এটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব ও ঐতিহ্য।
‘ভিডিওটা না দেখলে আমি বিশ্বাসই করতাম না এমন আবিস্কারও কেউ করতে পারেন। আরও বিস্ময়কর হলো, উপাচার্য স্যারের বক্তব্যে বিস্ময়ের বদলে উপস্থিত সবাই বিপুল করতালি দিয়েছেন। জয়তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জয়তু দশ টাকা।’
‘উপাচার্য মহোদয় বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনা জানতে পারলে এটা গিনেজ রেকর্ড হবে। আমার মনে হয়, এমন বিরল উপাচার্য স্যারকেও গিনেজ রেকর্ডে রাখা যায়। শিক্ষা, গবষেণায় পিছিয়ে থাকলেও গর্ব আবিস্কারে তিনি সেরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন সাবেক শিক্ষার্থী ও বেসরকারি একটি সংস্থার সমন্বয়ক শাহানা হুদা লিখেছেন, এরকম একজন ভিসিকে মমি করে রাখা হোক। যিনি সিঙ্গারা চপের মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে বন্দী করেছেন।
বখতিয়ার আহমেদ নামে একজন অবশ্য ভিন্নভাবে খরচের বিষয়টি তুলে ধরেছেন: নর্থ সাউথে গেলে ৮ লাখ টাকা লাগতো এই ডিগ্রিতে, এখানে লাগছে ২ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকাতে তো বাইরে ডিপ্লোমাও হয় না। দেশিরা জানতে পারলে এখানে এসেই ভর্তি হতো।
এভাবেই ভিসির বক্তব্যে আলোচনা চলছে। এমনকি ফেসবুকে একটি ইভেন্টও খুলে ফেলা হয়েছে এরইমধ্যে।
ভিসির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এ ধরনের একটি বক্তব্য দেওয়া ঠিক হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেক সিরিয়াস বিষয় আছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমরা প্রজ্ঞা ও পরিশীলিত চিন্তাগুলো আশা করি। সেদিক থেকে এটা হালকা বা স্থূল হয়ে গেছে। উনি আরো বেশি প্রজ্ঞা বা বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারতেন। এসব না বললেও পারতেন।’
রোবায়েত ফেরদৌস অবশ্য একথাও বলেছেন: এসব কথা যে তিনি (ভিসি) খুব বেশি মিন করে বলেছেন সেটা নয়। পুরোটাই তিনি হিউমার করে বলেছেন বলে মনে হয়েছে।
‘সেখানে তাকে নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে, সেটাও ঠিক হচ্ছে না। মানুষ বক্তৃতার সময়ে যে সেন্স অব হিউমার ব্যবহার করেন, সেই জায়গা থেকে তিনি একথা বলেছেন। টিএসসিতে গেছেন তাই সেখানকার বিষয়ে বলতে গিয়ে হয়তো এমন মন্তব্য করেছেন।’