২১ জুলাই রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে নিয়মিত লাইভ সম্প্রচার শুরু হয়েছে চ্যানেল আই এর সাম্প্রতিক বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনার অনুষ্ঠান ‘টু দ্য পয়েন্ট’। জাহিদ নেওয়াজ খান এর পরিকল্পনায়, তারিকুল ইসলাম মাসুম এর সঞ্চালনায় ও রাজু আলীম এর প্রযোজনায় প্রথম পর্ব থেকেই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের পাশাপাশি চ্যানেল আই এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি পৌঁছে যাচ্ছে আরো বেশি দর্শকের কাছে।
‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের বিষয় ছিল: প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা। এই পর্বে আলোচনায় অংশ নিতে অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব প্রচারের সময় ফেসবুকের লাইভে দর্শকদের একের পর এক মন্তব্য থেকে বোঝা যায় অনুষ্ঠানটি দাগ কেটেছে সকলের মনে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনার রিপোর্টটি উপস্থাপন করে আলোচনার সূত্রপাত করেন তারিকুল ইসলাম মাসুম। অতিথিদের তথ্য ও গঠনমূলক বিশ্লেষণে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর প্রথম পর্বটি হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।
এরপর ২২ জুলাই ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর দ্বিতীয় পর্বের বিষয় ছিল ২০১৮ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ‘আগামীর মেধাবী মুখ’। আলোচনায় অংশ নিতে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক এবং ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী আবু মুসা শান্ত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত এইচএসসি এর ফলাফল বিশেষ প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেন রিপোর্টার নিজে। এরপর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পরে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী আবু মুসা শান্ত ফলাফলের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশ্লেষণ করেন।
পরদিন ২৩ জুলাই প্রচার হয় ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর তৃতীয় পর্ব। বিষয় ছিল: ‘জনপ্রশাসন পদক।’ এই পর্বের অতিথি ড. মোজাম্মেল হক খান, সদ্য সাবেক সিনিয়র জনপ্রশাসন সচিব এবং কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক এবং কবীর বিন আনোয়ার, সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সাবেক মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই ও জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত ভালুকার ইউএনও কামরুল হাসান তালুকদার, সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ আলোচনায় অংশ নেন।
জনসেবায় অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন ৩৯ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৩৯ ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক-২০১৮ তুলে দেন তিনি। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই পদক দেয়া হয়। জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে দুটি ক্ষেত্রে সাধারণ ও কারিগরি শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, শ্রেষ্ঠ দল ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিতে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার প্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং নগদ অর্থ পেয়েছেন। ব্যক্তিগত অবদানের ক্ষেত্রে একটি স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং জনপ্রতি ১ লাখ টাকা প্রদান করা হবে। দলগত অবদানের জন্য স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও নগদ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ৫০ হাজার টাকা ও সম্মাননাপত্র, দলগতভাবে অবদানের জন্য সম্মাননাপত্র ও সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দেয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অবদান রাখায় দলগত শ্রেণিতে এ পদক পান ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জাফর রিপন ও সহকারি কমিশনার ভূমি এরশাদ উদ্দিন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান, আইসিটির সহকারী প্রোগ্রামার মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস।
কারিগরি ক্ষেত্রে দলগত পদক পেয়েছেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, সহকারি ভূমি সংস্কার কমিশনার রেজাউল কবীর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট মোহাম্মদ এনামুল হক, কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ, এম নুরুল আমিন, আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস, কুড়িগ্রামের সাবেক সহকারী কমিশনার আবদুল ওয়ারেছ আনছারী, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রফিকুল ইসলাম সেলিম এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ। প্রবাসী কল্যাণ ও বাংলাদেশের ব্র্যান্ড নেম সৃষ্টিতে অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ প্রাতিষ্ঠানের পদক পায় গ্রিসের এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব কামরুল আহসান তালুকদার ও নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার শাহাজাহান আলী জাতীয় পর্যায়ে চলতি বছর ব্যক্তিগত শ্রেণিতে জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন।
ময়মনসিংহের ভালুকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে থাকা অবস্থায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহণ করায় কামরুল আহসান এবং ভূমি রেজিস্ট্রেশন সেবা ও দলিল ক্যালকুলেটর নামে দুটি অত্যাধুনিক মোবাইল অ্যাপস তৈরি করায় শাহাজাহানকেও একই পদক দেয়া হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে কারিগরি ক্ষেত্রে দলগত শ্রেণিতে পদক পেয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সমন্বয় ও সংস্কার এন এম জিয়াউল আলম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কবির বিন আনোয়ার, এটুআই কর্মসূচির পরিচালক যুগ্ম-সচিব আবদুল মান্নান, পরিচালক উপ-সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মেহেদী হাসান। আর ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মচারি কল্যাণ কার্যক্রম চালু করায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান শ্রেণিতে পদক পেয়েছে বাংলাদেশ কর্মচারি কল্যাণ বোর্ড।
শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্কুল প্রতিষ্ঠা করায় জেলা পর্যায়ের সাধারণ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে পদক পেয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রেহেনা আকতার। একই ক্যাটাগরিতে নারী উন্নয়নে অবদান রাখায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করায় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম পদক পান। উত্তরা গণভবনের সংস্কার ও পর্যটন সুবিধা বাড়ানোর জন্য দলগত শ্রেণিতে পদক পেয়েছেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজ্জাকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু, নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর অনিন্দ্য মন্ডল। স্থানীয় উদ্যোগে গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করায় চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোহাম্মদ শওকত ওসমান, সাবেক ইউএনও মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম তালুকদার ও চাঁদপুরের ইউএনও বৈশাখী বড়ুয়া পদক পেয়েছেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করায় জেলা পর্যায়ে পদক পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াঢাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আ. মান্নান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমান ও ব্যানবেইজের সহকারি প্রোগ্রামার লিয়াজ মাহমুদ লিমন। ডিজিটাল সনদ চালু করায় জেলা পর্যায়ে কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত শ্রেণিতে এই পদক পেয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান। একই ক্যাটাগরিতে এক ক্লিকেই অর্পিত সম্পত্তি ইজারা মামলা নবায়ন করার জন্য রাজশাহীর দুর্গাপুরের ইউএনও আনোয়ার সাদাতও পদক জিতেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রকে বিটাক জনপ্রশাসন পদক দেয়া হয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর পর্যালোচনাকে সমৃদ্ধ করে। এছাড়া জনপ্রশাসন পদক প্রদানের অনুষ্ঠানটি নিয়ে চ্যানেল আইতে প্রচারিত সঞ্জয় চাকী এর প্রতিবেদনটি সঞ্চালকের কিউতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে আলোচনায়।
অনুষ্ঠানে ‘জনপ্রশাসন পদক দেয়ার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় বিবেচনায় দেওয়া হয়- এই প্রশ্নের জবাবে ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন- ‘জনপ্রশাসন পদক এবার তৃতীয় বারের মত দেওয়া হয়েছে। এর জন্যে একটি নীতিমালা আছে। অর্থ্যাৎ জনপ্রশাসনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্যে- যে অবদান ইনোভেটিভ, যে অবদান সেবার ক্ষেত্রে অনন্য এবং যে অবদানের কারণে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়েছে এই রকম দৃষ্টান্ত মূলক কার্যক্রমের জন্যে এই পদক দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত, দলগত এবং প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়েও এই পদক দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ যেখানে ব্যক্তি তার অবদানের জন্যে বিশেষ ভুমিকা পালন করেছে যে কাজ অন্যের জন্যে অনুকরণীয় সেই কাজ যদি করা সম্ভব হয় এবং তা যদি রেপ্লিকেট করা যায় এবং তা যদি সিভিল সার্ভিসের মান উন্নয়নে সহায়তা করে তাহলে সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়। আমি বলতে চাই জনপ্রশাসন পদকের মূল উদ্দেশ্য হলো যে, জনপ্রশাসনের প্রতি মানুষের ধ্যান ধারণাকে আরও পরিষ্কার করা, জনপ্রশাসনের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করা এবং নতুন প্রজন্ম যাতে জনপ্রশাসনের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয় মেধাবীরা যাতে এই সার্ভিসের দিকে আসে সেই দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার একটা কৌশল এই জনপ্রশাসন পদক।
মূলত আমাদের সরকারী চাকরিতে ডিসিপ্লিন এন্ড অ্যাপিল রুল আচরণ বিধি ইত্যাদি ইত্যাদি আছে। অর্থাৎ কোনো অন্যায় করলে ভুল করলে সেই ভুলের জন্যে তাকে জবাবদিহি করতে হয় শাস্তি মোকাবিলা করতে হয় কিন্তু পুরস্কৃত করার বিষয়টি তেমনভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল না। তা হয়তো আমাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে কিছুটা তার প্রতিফলিত হতো অথবা ভাল অফিসার হিসেবে এক ধরনের স্বীকৃতি জনমনে প্রকাশ পেতো। এখন এই পদকের মাধ্যমে একজনকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে যে সে একজন ভাল কর্মকর্তা এবং এই পুরস্কার তাকে এবং অন্যদেরকে ভাল কাজে উৎসাহিত করবে।’
‘জনপ্রশাসন কতোটা জনবান্ধব?’ সঞ্চালক তারিকুল ইসলাম মাসুম এর এমন প্রশ্নের উত্তর দেন ড. মোজাম্মেল হক খান – ‘আমরা সবসময়ই আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলবো যে, আমরা অবশ্যই জনবান্ধব। কিন্তু আপনি লক্ষ্য করবেন, এই দাবির পেছনে যুক্তিগুলো কি? অবশ্যই কতোগুলো যুক্তি আছে যে, আমরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেখেন যে, জনগণের কাছে যেতে হবে। এটুআই এর মাধ্যমে যেটি বলা হলো যে, এখন সার্ভিসটা হচ্ছে জনগণের জন্যে। জনপ্রশাসন সারাদেশেই ইট ইজ নট অনলি এ জব। ইট ইজ এ ডেডিকেটেড সার্ভিস টু দ্যা পিপল অ্যাট টু দ্যা কান্ট্রি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই কথাই বলতে চান যে, এখন আমাদের যে সেবা তা বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বক্তব্যের সূত্রধরে আমরা বলি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেন যে, মানুষের জন্যে আমাদের সার্ভিস এবং মানুষের জন্যে যদি আমরা কল্যাণকর কিছু না করতে পারি তাহলে এই জনপ্রশাসনের কোন ভুমিকা নেই। আমি মনে করি যে, বর্তমানে জনপ্রশাসন শুধু দাপ্তরিক কোন কাজ না। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য আর শুধু ফাইলবন্দি কাজ না। এখন চাকরিটা হয়ে গেছে এমন মানুষের কাছে সার্ভিস চলে যায়। সার্ভিসের জন্যে আজকে মানুষের দ্বার পর্যন্ত পৌছতে হয় না অফিস পর্যন্ত দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয় না। আপনি দেখবেন যে, জনপ্রশাসনটাকে মানুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় করার জন্যে তথ্য অধিকার আইন করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন মানে হলো- বাইরের মানুষকে একটা সুযোগ করো দেওয়া যে, সরকারি অফিস আদালতে কী কাজ হয়? তার কতোটুকু মানুষ দাবিদার? কতোটুকু মানুষ পেতে পারে? কতোটুকু মানুষ চাইতে পারে সেইরকম একটি জ্ঞান ভিত্তিক একটা ট্যুলস মানুষের কাছে তুলে দেওয়া হলো ওই তথ্য অধিকার আইন দিয়ে এবং সেই মানুষ এখন জানতে পারে যেটা কবীর আনোয়ার সাহেব বলেছেন যে,
আগে কতিপয় মানুষ যারা বিভিন্ন সুবিধাগ্রস্থ মানুষ তাদের একসেস ছিল এই সব ব্যাপারে। এখন সাধারণ মানুষও জানেন কোথায় কী? ইউনিয়নর পরিষদে কোথায় কী হচ্ছে? আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ কী? এবং আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ মানুষের কাছে জনপ্রিয় কেন হয়েছে? সরকারের কাজ কেন জনপ্রিয় হয়েছে? এখন মানুষ জানে একটা মিউটেশন করতে গেলে তার কতোদিন সময় লাগে, কতো টাকা তাকে দিতে হবে? একটা বোর্ড অফিসে গেলে তার সার্টিফিকেট চাইলে দরখাস্ত দেওয়ার পরে কতো দিনের ভেতরে সার্টিফিকেট তার কাছে পৌছাবে এবং এর জন্যে সরকারী ফি কতো?
এর মানে হচ্ছে মানুষ এখন সার্ভিসটা যে পাচ্ছে সে বুঝতে পারে- এই সার্ভিসটা এই সময়ের ভেতরে তার পাওয়ার কথা ছিল এবং এর বিনিময় মূল্য যদি আর্থিক হয় তাহলে এতোটুকু? অর্থ্যাৎ মানুষের কাছে এই আস্থা অর্জন করতে এখন প্রশাসন সক্ষম হয়েছে।’ জনবান্ধন হওয়ার জন্যে প্রথম থেকেই তো প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন কর্মকর্তারা? জনবান্ধব হওয়ার জন্যে আরও কি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে? এই বিষয়ে জানতে চান উপস্থাপক ড. মোজাম্মেল হক খান এর কাছে? উত্তরে তিনি বলেন- ‘আসলে একটা জিনিস দেখবেন, কলোনিয়াল যুগে আমাদের একটা ধারনা ছিল যে, উই আর দ্যা মাস্টার।দ্যা পিপল আর আওয়ার সারভেন্ট। কিন্তু আমরা এই প্রজন্মের জনপ্রশাসনের কর্মীরা আমরা মনে করি সাংবিধানিক ভাষায় যে, জনগণই ক্ষমতার মালিক এবং জনগণকে দিয়েই আমাদের কাজ। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় আমাদের বেতন হয়। আমাদের দায়িত্ব হলো সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলের সেবা করা। জনগণ কারা? আমাদেরই ভাই, আমাদেরই বোন, আমাদেরই আপনজন সাধারণ মানুষ। কাজেই তাদের কাছে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে এই মানসিকতার পরিবর্তন অর্থ্যাৎ মাইন্ডসেটের পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। আগে এই অবস্থা ছিল না। এখন আমরা মনে করি যে, এইটা শুধু আমাদের জব না? বেতন পাই কাজ করি। এটি এখন হলো আমাদের একটা সেবার মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করি যে, আমরা বেতন তো পাই সেটি অন্য জিনিস।
কিন্তু আমরা মনে করি এটি আমাদের একটি দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করা উচিৎ এবং এই জন্যে দায়িত্বটা কিভাবে পালন করবো সেটার পরিমাপ করার সুযোগ এখন সব জায়গায় আছে। যেমন, সিটিজেন চার্টার গুলো দেওয়া আছে। আমি কতো দিনে কী কাজ করবো? সেটি আমি যদি মানুষের কাছে বোঝাতে চাই যে, আমি এখন জনগণের জন্যে এবং জনগণ আমার থেকে সেবা পেলো কিনা? এইটা যেনো সেও তার সন্তুষ্টির লেভেলে পৌছাতে পারে? অর্থাৎ আমি এখন বলতে চাই যে, এখনকার সার্ভিসটা সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্যে। ‘জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি- কাজ করতে গিয়ে কোথাও কি সমন্বয়হীনতা হয় না?’ এই বিষয়ে কথা বলেন ড. মোজাম্মেল হক খান- ‘আমি একটা কথা বলি ওই আগের কথাটা। কবীর বিন আনোয়ার যেটা বলছিলেন যে, তিনি বলেছেন-অ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট যেটি হয় সেটি হলো হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দপ্তরের মাধ্যমে কিন্তু আমরা ভবিষ্যতে জনপ্রশাসনে এমন একটি বিষয় চালু করতে চাচ্ছি সেখানে আমাদের এখন যে আমাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন আছে এটার পরিবর্তে আমরা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের আরেকটা সংস্করণ অ্যানুয়েল পারফরমেন্স অ্যাপেজাল রিপোর্ট আমরা তৈরী করবো সেখানে একজন কর্মচারী সে কি কাজ করবেন সেটা তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে এগ্রিমেন্ট করবে। তা যদি সে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেন তার ভিত্তিতে তাকে মার্কিং করা হবে অর্থাৎ তার রেটিং হবে।
সেটি যদি আগামী দিনে হয় তাহলে দেখা যাবে যে, সে কেন ঠিকমতো প্রমোশন পাচ্ছে না? এই বিষয় সে বুঝতে পারছে। আপনি যদি একটা নীতির ভেতরে থাকেন। আমাদের মূল লক্ষ্য যদি হয় জনকল্যাণ বা দেশের কল্যাণ তাহলে কন্ট্রাডিকশনের কোনো সুযোগ নাই। এটা হয় অনেক সময় মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়তো আমাদের লেভেলে আমরা বুঝতে পারি না। জনপ্রশাসনের কাজগুলো হয়তো কোন জনপ্রতিনিধি মনে করতে পারেন যে, এইটা সম্ভবত তার দায়িত্বহীনতা অথবা তার আন্তরিকতার অভাবের কারণে হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে আমি বলবো, যদি সেটা হয় ইটস এ গ্যাপ অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং তাহলে আমি বলবো- তা দূর করা সম্ভব। আমাদের জনপ্রশাসনে যারা কর্মরত তারা আইনের বিষয়গুলো তাদেরকে তুলে ধরতে পারেন। এতে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে এবং সত্যিকার দেশ প্রেমিক জনপ্রতিনিধি এবং সত্যিকার দেশ প্রেমিক পাবলিক সার্ভিস অফিসার হন তাহলে কোন কনফিউশন হবে না।’
কবীর বিন আনোয়ার এর কাছে তারিকুল ইসলাম মাসুম জানতে চান- ‘একসেস টু ইনফরমেশন এই ইস্যুতে আপনি জনপ্রশাসন পদক পেয়েছেন। এর আগেও আপনি এই পদক পেয়েছেন। জানতে চাই একসেস টু ইনফরমেশন কিভাবে সারাদেশে কাজ করে?’ কবীর বিন আনোয়ার উত্তরে জানান- ‘একসেস টু ইনফরমেশন নামটা লক্ষ্য করবেন যে, একসেস টু ইনফরমেশন তথ্য জগতে প্রবেশাধিকার। কার প্রবেশাধিকার? এটি সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার। এর আগে এই তথ্য জগতে প্রবেশের অধিকার ছিল সারাদেশের গুটিকয়েক সংবাদপত্র যারা পড়তেন এবং যাদের বাড়িতে রেডিও ও টেলিভিশন ছিল শুধু তারাই। এই প্রকল্পের আমাদের প্রধানতম উদ্দেশ্য ছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে চেয়েছেন যেখানে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেবা সহজীকরণ করা হবে। সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে হয়রানি মুক্তভাবে সময় কম খরচ হবে অর্থ কম ব্যয় হবে । প্রচালিত আমাদের যে সেবা প্রদান পদ্ধতি আমরা বলছি জনপ্রশাসন জনগণের জন্যে প্রশাসন। এই প্রসঙ্গে এটিও বলতে হয়। আপনারা জানেন এই মন্ত্রণালয় বা এই বিভাগের আগে নাম ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি আমাদের সামনে তুলে ধরলেন যে, এটি আসলে জনপ্রশাসন হবে। কেননা সংস্থাপন উত্তরাধিকার সূত্রে কলোনিয়াল যুগ থেকে এটি আমরা বহন করে আসছিলাম।
এখানে তাই ভিন্ন মাত্রা যোগ হয় এবং এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে যে কাজগুলো এইগুলো ছিল এটুআই এর মূল লক্ষ্য এবং একেবারে মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে- এখানেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা না বললেই নয়, তিনি বলেছিলেন সত্যিকারের সেবা দিতে চাইলে তোমাকে গ্রামে যেতে হবে। তখন আমরা আমাদের প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রথমেই যেটি করি সারাদেশে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করি এবং সেখান থেকে এই অনলাইন সার্ভিসগুলো আস্তে আস্তে শুরু হয়। এখন প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টার থেকে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও এর বেশিও দেয়া হচ্ছে।’ এরপরে তার কাছে সঞ্চালকের প্রশ্ন ছিল- ‘আপনি একসেস টু ইনফরমেশন নিয়ে কাজ করছেন? তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার তথ্য অধিকার মানুষের। এখন সবগুলো মন্ত্রণালয়ের পৃথক হোম পেজ আছে এবং যেকোন বিষয়ে অভিযোগ করতে চাইলে মানুষ করতে পারে- আসলে এই সব অভিযোগ কি আমলে নেওয়া হয়? কারা এগুলো সমন্বয় করেন?’ কবীর বিন আনোয়ার জানান- ‘স্যার যেটি বলেছেন মাইন্ড সেটের পরিবর্তন। আমরাও যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজ করতে শুরু করি তখন আমাদেরও কিন্তু মাইন্ড সেটের পরিবর্তনের জন্যে প্রথমে কাজ করতে হয়েছে। অনলাইন সেবাগুলো কতো সহজে কম খরচে হয়রানি মুক্তভাবে দেওয়া যায়- এটি যে একটি ভালো ট্যুল এই তথ্য প্রযুক্তি এটি বোঝাতে হয়েছে আমাদের প্রথমে সবাইকে এবং বিশেষ করে তরুণ সমাজ যারা অত্যন্ত উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে তারা আর্বিভূত হয়েছে তাদেরকে কাজে লাগানো। আর একটা দিক হলো তাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসা এবং আরেকটি দিক গুরুত্বপূর্ণ তা হলো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। যেমন, আপনারা জানেন যে, এখন আমরা আউটসোর্সিং ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার বিভিন্ন সেক্টর থেকে আইসিটি ডিভিশন থেকে এটুআই থেকে এমনকি মাইক্রোসফট এই ধরনের যারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী তাদের সহযোগিতায় তাদেরকে আউটসোর্সিং ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে এবং ঘরে বসে ছেলেমেয়েরা রোজগার করতে পারছে। অতএব তরুণদের জন্যে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও আমাদের কাজের মধ্যে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি যেটি বলেছেন সেবার ব্যাপারে? সেখানেও কিন্তু আমরা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করছি? আমাদের জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কেবিনেট সেক্রেটারি পর্যন্ত আমাদের একটা ড্যাশ বোর্ড আছে। সেই ড্যাশ বোর্ড এ কিন্তু- ধরা যাক একজন জেলা প্রশাসকের কাছে একজন ভদ্রলোক আবেদন করলেন, তিনি সেই আবেদন কোথায় পাঠিয়েছেন? কোন টেবিলে পেন্ডিং আছে এখন? সেটা কিন্তু ওই ড্যাশ বোর্ড এ দেখা যায়? কতোদিন পেন্ডিং আছে তাও দেখা যায় এবং এটি মন্ত্রী পরিষদ সচিব পর্যন্ত দেখতে পারেন যে, ধরা যাক- খুলনা জেলা প্রশাসকের দফতরে ৩০ টি আবেদন পড়ে আছে যে আবেদনগুলো ১৫ দিন হয়ে গেছে কিন্তু অ্যাড্রেস করা হয় নাই। এখন জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়েছে। আরেকটি জিনিস স্যার যেটি বলছিলেন এখন কিন্তু এপিএ অ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট হচ্ছে। এখন প্রতিটি দফতর প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট মিনিষ্ট্রি তাদের নিজস্ব বাৎসরিক যে কর্মসম্পাদন, তারা কি কি কাজ করবেন?
সেইগুলো তারা কিন্তু ঠিক করে দিচ্ছে এবং বছর শেষে সেইগুলোর মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আগে যেমন শুধু এসিআর দিয়ে মূল্যায়ন করা হতো বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন কিন্তু এখন তার কাজের পরিমাণ, তার এক বছরের কর্মপরিকল্পনা সে নিজেই ঠিক করছে। অতএব দিনের শেষে কিন্তু তাকেই হিসাব দিতে হচ্ছে যে, তার কাজ সে কতোটুকু করতে পারলো এবং আশা করছি এই যে, অ্যানুয়াল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট আমাদের যে হয় তার মধ্য দিয়ে যে, আপনার একটা লক্ষ্যমাত্রা সময়ের মধ্যে নির্ধারণ হয় এটার মাধ্যমেই কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের সিভিল সার্ভিসের প্রমোশন বলি বা উপরে ওঠার যে সিঁড়ি তাহলে কিন্তু তাকে এই কাজগুলো কেরে আসতে হবে। অর্থ্যাৎ জবাবদিহিতা কিন্তু নিশ্চিত করা হচ্ছে। একটু যোগ করতে চাই। আপনারা দেখেছেন যে, সম্প্রতি আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা সার্ভিস ট্রিপল নাইন ইনট্রডিউস করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ পুলিশ এখন ট্রিপল নাইনে কিন্তু আপনারা বলতে পারেন, হয়তো আমাদের কাছে অভিযোগ আসে যে, ঠিকমতো অ্যাড্রেস করা হয়নি কিন্তু তার সংখ্যা খুবই কম।’ এই বছর জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত কামরুল হাসান তালুকদার, সিনিয়র সহকারী সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এর কাছে উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল- ‘আপনি কোন বিষয়ে জনপ্রশাসন পদক পেলেন? আপনি তো ভালুকার ইউএনও ছিলেন?’ এর উত্তরে তিনি বলেন- ‘আমি যে বিষয়ে ভালুকায় চর্চা করেছি- বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিস্তার ঘটানো। আমি ভালুকার ৪ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শিখিয়েছি এবং ১ লক্ষ শিক্ষার্থীর কাছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সিডি এবং লিখিত পাঠ বিতরণ করি। একটা ভাষণ উৎসবের আয়োজন করে ৭ ই মার্চের যেখানে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল এবং এই উৎসবের মাধ্যমে হাজারো ছেলেমেয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুখস্থ বলার একটা সুযোগ তৈরী হয় এবং একেবারে থ্রি ফোর ফাইভ থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত যারা কোনোদিন এই ভাষণ শোনেননি একদম ছোট বয়েসি আমি তাদেরকে টার্গেট করি তাদের ভেতরটা আমি চেঞ্জ করার চেষ্টা করি চেতনার অবকাঠামো নির্মাণে। আমি বিশ্বাস করি নিজের চেতনার যদি অবকাঠামো নির্মাণ করা যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবকাঠামো যদি কোমলমতি শিশুদের মধ্যে যদি ধারণ করা যায় তাহলে উন্নয়নের অবকাঠামো ততো টেকসই হবে। আমি চেতনার অবকাঠামো নির্মাণের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণের চর্চা ভালুকার ১ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু করেছি এবং এটি জাতীয় পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আমাকে এই জনপ্রশাসন পদকের জন্যে মনোনীত করায় যে সব ক্ষুদে বঙ্গবন্ধু এই ভাষণ মুখস্থ করেছে এবং হাজারো জনতার সামনে এই ভাষণ উপস্থাপন করেছে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ সঞ্চালকের প্রশ্ন ‘আপনি পদক পেলেন – আপনার এখনকার কাজ কেমন হবে?’ এর উত্তরে কামরুল হাসান তালুন বলেন- ‘দেশে এবং জণগনের প্রতি দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেলো। আমি নিজেহর ভেতরে সবসময়ই আমি একটা বিরোধী পক্ষ তৈরী করে রাখি যে, আমার এই কাজগুলো কতোটা জনবান্ধব হবে? আমার এই কাজ দিয়ে কেউ হয়রানি হবে কিনা? আমি কতো কম সময়ে বা দ্রুত গতিতে সেবা দিতে পারছি এই বিষয়ে সব সময় নিজের ভেতরে একটা প্রত্যয় থাকে। আমি মানুষের জন্যে বসে না থেকে যে, কখন তারা অভিযোগ নিয়ে আসবেন? তার থেকে নিজের ভেতরে চাহিদা তৈরী করে সেইভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। আজকের এই পদক আমার আগামী দিনের কাজের জন্যে গতি অনেক বৃদ্ধি করবে।’ আলোচনা, পর্যালোচনা আর মতামতে জনপ্রশাসন পদক যে জনগণের দোরগোড়ায় পাবলিক সার্ভিসকে পৌছে দিতে উৎসাহিত করছে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনায় সমৃদ্ধ হয় ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর এই পর্বটি।
এর পরের দিন ২৪ জুলাই ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর বিষয় : জেলা প্রশাসক সম্মেলন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন আকতারী মমতাজ, সচিব, বাংলাদেশ কর্ম কমিশন সচিবালয় এবং মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, যুগ্ম সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সাবেক জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা ও রাজবাড়ী এবং জেলা প্রশাসক সম্মেলন অনুষ্ঠানের সংবাদটি কাভার করা চ্যানেল আই এর বিশেষ প্রতিনিধি নিলাদ্রী শেখর। আলোচনার আগে চ্যানেল আই’তে প্রচারিত নিলাদ্রী শেখর এর প্রতিবেদনটি দেখানো হয়। এই বছরের জেলা প্রশাসক সম্মেলন নানাদিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ দলমত নির্বিশেষে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া ঔপনিবেশিক আমলের মন মানসিকতা থেকে তাদের বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন তিনি। তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধন করে কোনো বাধা এলে সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। জেলা প্রশাসকদের ২৩ দফা নির্দেশনাও দেন তিনি। এই সব নির্দেশনার মধ্যে আছে- সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে, যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান চলবে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে, তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে, শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে, ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে, পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলিকে কার্যকর করতে হবে, জেলা প্রশাসকগণ জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সকল কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসু করতে হবে, দপ্তরসমূহের বিদ্যমান সেবাসমূহ তৃণমূলে পৌঁছানোর লক্ষ্যে তথ্য মেলা, সেবা সপ্তাহ পালনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি রপ্তানি নির্বিঘ্ন করা এবং চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বাজার ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে, বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যেকোন অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, নারী ও শিশু নির্যাতন ও পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নজরদারি বাড়াতে হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, নিজ নিজ জেলায় ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিশু কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, পার্বত্য জেলাসমূহের ভূ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলির সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে।
এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে হবে। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি মত বিনিময়ের সুযোগ করে দিতে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় জেলা প্রশাসক সম্মেলন। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সমস্যা সমাধানের কৌশল, নতুন কর্মপরিকল্পনা নেয়ার ক্ষেত্রে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবারের সম্মেলনে আলোচনার বিষয় ছিল ৩৪৭টি। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের সামগ্রিক বিষয়গুলো একে একে উঠে আসে নিলাদ্রি শেখর এর প্রতিবেদন এবং তার সাথে আলোচনার মাধ্যমে। আকতারী মমতাজ এর কাছে সঞ্চালক প্রথম জানতে চান- ‘আপনি সরকারের একজন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই যে জেলা প্রশাসক সম্মেলন এর মাধ্যমে দেশ এবং মানুষ কিভাবে উপকৃত হয়?’ উত্তরে আকতারী মমতাজ বলেন- ‘আপনি লক্ষ্য করবেন এবারের সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দিক নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন ২৩টি। এই নির্দেশনাগুলো লক্ষ্য করলেই কিন্তু দেখা যায় কতো ডিটেইলে তিনি ভেবেছেন এবং কতো ষ্ট্যাটিজিক্যালি এই নির্দেশনাগুলো তিনি করেছেন এবং ভেবেছেন। তিনি যে ২০২০-২১ সালের মধ্যে আমাদের মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলেছেন সেই ভাবনা তার মাথায় ছিল। তারপরে ২০৪১ সালে আমরা যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে স্বপ্ন তিনি আমাদের দেখিয়েছেন সেই সমৃদ্ধ দেশ নির্মাণের যে পথ তৈরী করতে হবে তা কিন্তু এই দিক নির্দেশনার ভেতরে আছে এবং এ থেকেই বোঝা যায় যে এটি কতো গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রের সাথে মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকরা কাজ করছেন সরকার যতো ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন উন্নয়নের জন্যে সবকিছুই কিন্তু জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়।’ জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ের বিষয়ে জানতে চান তারিকুল ইসলাম মাসুম- ‘একজন জেলা প্রশাসক কিভাবে সবগুলো মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করেন?’ এই বিষয়ে আকতারী মমতাজের উত্তর-‘প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে তার সাথে সমন্বয় করে থাকেন একজন জেলা প্রশাসক এবং তাকে রেগুলার সমন্বয় সভাও করতে হয় সবাইকে নিয়ে।কাজেই এই জেলা প্রশাসকদের সাথে আমাদের এই কেন্দ্রীয় সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সম্মেলনটি হয় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এখান থেকেই জেলা প্রশাসকরা নির্দেশনাগুলো পেয়ে যান যে, তারা কোনি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সবকিছু এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং এখান থেকে তারা বুঝতে পারেন যে, এই সরকারের লক্ষ্য কী বা কিভাবে এগিয়ে যেতে চান তারা? সেই নির্দেশনা নিয়ে এবং লক্ষ্য অনুধাবন করেই কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করে থাকেন। এখানে ডিটেইলে অনেক কিছু আছে।’
‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের আহ্বান জানিয়েছেন এবং জেলা প্রসাশকদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধীকার এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই? স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে আমরা কি এখনো ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি বা প্রশাসন কতোটা পেরেছে?’ এমন এক প্রশ্নের জবাব দেন আকতারী মমতাজ- ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ঔপনিবেশিক সময়ের যে মনোভাব সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে অবশ্যই আমরা এসেছি অনেকটা। এখন প্রশাসন কিন্তু জনমুখি হয়েছে।’ তার কথার সাথে যোগ করে সিঞ্চালক বলেন- ‘মিডিয়া বা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার যে রেওয়াজ তৈরী হয়েছে- এটাও কি সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা?’ ইতিবাচক উত্তরে আকতারী মমতাজ জানান- ‘তা তো বটেই। কাজের ক্ষেত্রে যেখানে সার্ভিস ডেলিভারি হচ্ছে সেখানেও কিন্তু ডিসিরা যে কাজ করছেন সেখানে এখন অনেক ইনোভেশন হচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়েছে। এই রকম অসংখ্য ইনোভেশন হচ্ছে- কিভাবে সার্ভিস ডেলিভারী দেওয়া যায়? সিষ্টেমটাকে রি-ইঞ্জিনিয়ারিং করে আরও সহজ করে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া যায়, মানুষকে কি করে আরও বেশি করে সেবা দেওয়া যায়, ইনোভেশনের মাধ্যমে মানুষের কোন জিনিসটা প্রয়োজন এটা তারা দেখছেন লক্ষ্য করছেন- এইভাবেই কিন্তু উন্নত হচ্ছে সবকিছু। আগে কিন্তু সেটা হতো না?’ ‘সরকারী অফিসে না যাওয়ার জন্যে মানুষের মনে ভীতি আছে- এই অবস্থা থেকে উত্তরণে করণীয় কি?’ জানতে চান অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। এই বিষয়ে আকতারী মমতাজের সোজা সাপ্টা উত্তর- ‘এই ভীতি আগে থেকেই ছিল। সেই ট্রাডিশনাল যে প্রশাসন ছিল সে সময়ে মানুষকে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হতো না।মানুষের প্রতি তারা তখন রেসপন্সিভ ছিল না সরকারি অফিস, জেলা প্রশাসন বা কর্মকর্তারা। কিন্তু অবস্থা এখন অনেক বদলে গেছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলেছে। তারপরে বিশেষ করে আমাদের এই সরকার যখন ১৯৯৬ সালে এসেছেন তারাও কিন্তু মানুষের জন্যে কিভাবে কাজ করা যায়? সেই বিষয়ে সবসময়ই বলেছেন এবং এবারও কিন্তু একই কথা বলছেন তারা। এবারের সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন সেখানে তিনি প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি কি করে মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা যায়? মানুষ সেবা দেওয়া এবং তাদের তাদেরকে উন্নত জীবন ব্যবস্থা দেওয়া যায় এই সব নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিটেইলে ভেবে ভেবে বলেছেন আমাদের জেলা প্রশাসকদের। যেমন, তিনি বলেছেন ভূমি ব্যবস্থা একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়।
এই সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তোমরা কিছু আইডিয়া নিয়ে আসো, কি করে আমরা কাজ করতে পারি? তারপরে তিনি বলেছেন এই যে, উত্তরাধিকার সূত্রে একটার পর একটা জমি টুকরো টুকরো হয়ে যায়-এখানে আমরা কিভাবে কি কাজ করতে পারি? কিভাবে তাদেরকে সাহায্য করতে পারি বা এই যে চাষাবাদের ক্ষেত্রে তিনি বলেছেন। এখানে জাতীর পিতার রেফারেন্স এনেছেন তখন যে, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদের কথা। প্রধানমন্ত্রী আবার সেটির রিপিট করেই বললেন যে, জাতীর পিতা বলে গিয়েছিলেন- এখন যার যার জমি সেটি থাকবে সেটা নিশ্চিত করেই চাষাবাদ এক সাথে হবে এটি করা যায় কিনা? এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের দেখতে বলেছেন। আরও অনেক ইনোভেটিক কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এখন ছেলে-মেয়েরা দু’জনেই কাজ করছে তাই লাইফকে আরও ইজি করা দরকার। তাহলে শিল্পায়নের কিছু উদ্যোগ নেওযা দরকার। খাবার দাবার যদি প্যাকেজিং, রেডি ফুড যদি পাওয়া যায় তাতে মেয়ে এবং ছেলে সবারই সুবিধা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।’ এর পরে নারীর ক্ষমতা আনয়নের প্রসঙ্গ তুলে তারিকুল ইসলাম মাসুম বলেন- ‘অনেক নারী ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনে নারীর এই পথ চলাকে কিভাবে দেখেন- আপনি নিজেও একজন নারী’ এই বিষয়ে আকতারী মমতাজ জানান- ‘আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। যেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেন। তাই নারীদের পিছিয়ে রাখলে তো হবে না? নারী বান্ধব সরকার বললেন আমার সহকর্মী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীদের কিভাবে এগিয়ে নেবেন সেই বিষয়ে তার বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। প্রতিটি সেক্টরে আপনি দেখেন- প্রশাসনে তিনি নারীদের ডিসি করছেন? ইউএনও, সচিব করছেন? তারপরে পুলিশের দিকে তাকান? প্রধানমন্ত্রী প্রথম ১৯৯৬ সালে পুলিশে প্রথম এসপি করলেন? প্রধানমন্ত্রীকে অনেকেই সেই সময় বিরোধীতাও করেছেন তা সত্ত্বেও তিনি বলেছেন- না, আমি করবো। আর্মিতে এখন মেয়েরা আছেন। পুলিশে দেখেন? আমি সুনামগঞ্জে গেলাম সংষ্কৃতি সচিব ছিলাম মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে গেছি। নামার পরে যে একটা গার্ড অব অনার দেয়। আই ওয়াজ ইমপ্রেসড অ্যাকচুয়ালি দেখলাম যে, চৌকষ নারী পুলিশের একটি দল চমৎকারভাবে মন্ত্রী মহোদয়কে গার্ড অব অনার দিলেন তাতে আমি মুগ্ধ হলাম এবং সত্যি আমার বুকটা আনন্দে ভরে গেলো যে, আমাদের মেয়েরা সত্যি পারে এগিয়ে ও সুযোগ পেলে তারা তাদের দক্ষতা প্রকাশ করতে পারে।’
আলোচনায় বাদ পড়েনি আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গও। ‘আগামী নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন- এই ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেজ্ঞ কি? এর উত্তরে আকতারী মমতাজ বলেন- ‘নির্বাচন ম্যানেজমেন্টের সাথে কাজ করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং এবং কঠিন দায়িত্ব। নানাবিধ চাপের ভেতরে থাকতে হবে তাদেরকে। ওই সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। আর নির্দেশনাগুলো জেলা প্রশাসকরা বাস্তবায়ন করছেন এবং করতেই থাকবেন।’ অনুষ্ঠানের আরেকজন অতিথি মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল চার বছর জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রাজবাড়ী এবং কুমিল্লায়। চারটি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের আশা আকাঙ্খা শীর্ষ প্রশাসনের কাছে কিভাবে আসে এবং শীর্ষ প্রশাসনের কাছ থেকে নির্দেশনা এবং তার বাস্তবায়ন কিভাবে হয়? তার কাছে জানতে চান সঞ্চালক তারিকুল ইসলাম মাসুম। এই বিষয়ে হাসানুজ্জামান কল্লোল- ‘আসলে জেলা প্রশাসককে বলা হয়ে থাকে সরকারের চক্ষু কর্ণ নাসিকা স্থানীয় জেলা পর্যায়ে। ফলে তাকে তো সচেতন থাকলেই হয় এবং সরকারের সাথে সেতুবন্ধন তৈরীর একটি বড় প্ল্যাটফর্ম কিন্তু এই জেলা প্রশাসক সম্মেলন। এটাকে আমরা ত্রিপক্ষীয় একটা মিথষ্ক্রিয়ার জায়গা বলতে পারি যেখানে পলিসি লেভেলে যারা আছেন তাদের সাথে এটির বাস্তবায়নে যারা আছেন বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক ও এদেরকে যারা দেখেন অর্থ্যাৎ কেবিনেট মন্ত্রী পরিষদ তাদের মধ্যে এই তিন পক্ষের মিথষ্ক্রিয়ার চমৎকার সুযোগ হয়।আর এর মাধ্যমে আলটিমেটলি জনগণ যেহেতু সবারেই চূড়ান্ত লক্ষ্য তাই জনগণ এর দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হন।
জেলা প্রশাসকগণ তাদের তৃণমূল পর্যায়ে যারা সেবা প্রত্যাশী, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন ক্লায়েন্ট আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে স্থানীয় সমস্যা এবং জাতীয় সমস্যাগুলোকে নিয়ে আসেন লিখিত আকারে এই সম্মেলনে। এর বাইরেও তারা কিন্তু সভা চলাকালীন কথাবার্তা বলেন এবং মন্ত্রী মহোদয় সচিব এবং সবার সামনে উপস্থাপিত হয় স্থানীয় এবং জাতীয় সমস্যাগুলো। তাৎক্ষণিকভাবে কিন্তু সচিব মহোদয় এবং মন্ত্রী মহোদয়রা প্রাথমিকভাবে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন এটি করা যেতে পারে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এবং সেটি কিন্তু মনিটরিং করেন কেবিনেট মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ এবং এরপরে ক্রমাগতভাবে তারা ওই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে বলে যে, তোমরা এই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার কতোটুকু তোমরা করতে পেরেছো আর কতোটুকু করতে পারোনি? ইনডিভিউজ্যুয়ালি কিন্তু একজন জেলা প্রশাসক কোন একটি বিষয়কে অ্যাড্রেস করলে এভাবে কেবিনেটের মাধ্যমে ওই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে কাজটা আদায় করা খুব সহজতর হতো না। এই কাজটি কিন্তু তারা করে দেন। আরেকটি বিষয় হলো- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনাও তারা পান যেটি স্যার বলেছেন। এর বাইরেও বলবো আমার যেহেতু ৪ বারের অভিজ্ঞতা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আমাদের কথা শোনেন এবং জেলা প্রশাসকদের কথা সরাসরি শুনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী প্রদান করেন যেমন, আমার নিজেরই একটা অভিজ্ঞতা আছে- এই রেন্ট হাউজ বা গৃহ নির্মাণের ঋণ এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেওয়া যেতো আগে। এই প্রস্তাবটি আমাদের পক্ষ থেকে ওঠার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, এটা তো অবশ্যই বাড়ানো উচিৎ।
পাশাপাশি নতুন কর্মকর্তারা যদি বাড়ি পেয়ে যায় এবং ৫ বছর চাকরি হলেই যদি বাড়ি পেয়ে যান তাহলে তার বাড়ির স্বপ্নের জন্যে তাকে আর আলাদা চিন্তা করতে হবে না। ওই সময়টুকু সে দেশের কাজ ও চিন্তা করতে পারবেন।’ ডিসিদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয় তা বাস্তবায়নের হার কতোটা হয় এবং কিভাবে বাস্তবায়িত হয়। দু’ একটি ইনোভেশনের কথা জানতে চাইলে হাসানুজ্জামান কল্লোল এর উত্তরে বলেন- ‘আমি যখন ডিসি ছিলাম ২০১৩ তে তখন বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ শতাংশ। এই বছর নির্দেশনা বাস্তবায়নের হার ৯৫ শতাংশ হয়েছে এবং আমার কাছে ফিগার আছে প্রতিবছর নির্দেশনা বাস্তবায়নের হার বাড়ছে। তার মানে মনিটরিংটা ভাল হচ্ছে। যে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ হচ্ছে তা ভালভাবে মনিটরিং করার কারণে বাস্তবায়নের হার বাড়ছে। জেলা প্রশাসকরা তা ওন করছে। এই ওন করার বিষয়টি কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণে হয়েছে বলে মনে করি আমি।’ এর পরে সঞ্চালকের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন- ‘একটা উদাহরণ দেবেন কি? জেলা প্রশাসকের কোনো পাঠানো প্রস্তাব কেন্দ্র থেকে গৃহীত হয়েছে এবং তা পরে বাস্তবায়িত হয়েছে?’ এর জবাব দেন হাসানুজ্জামান কল্লোল – ‘যেমন ধরেন, আমাদের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমরা বলেছিলাম যে, উপজেলা পর্যায়ে যদি শিল্পকলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা একাডেমি স্থাপন করা যায়? এটি কিন্তু সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয়েরও একটি ছিল। ওই সভায় যখন এটির উপরে জোর দেওয়া হলো এবং এখন অলরেডি ১১টি উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমির কেন্দ্র হয়েছে। আমরা যেমন বলেছিলাম, পিতৃত্বকালীন ছুটি দরকার মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো সেটিও সরকার বলেছে- হ্যাঁ, বাচ্চার সার্পোটের জন্যে নারী এবং শিশু বান্ধব সরকার হিসেবে এই বিষয়টিও বিবেচনায় এসেছে। একসময় আমরা বলেছিলাম- সকল সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসনের দিকে নজর দেওয়া দরকার। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই খুব চান। এই কারণে এক সপ্তাহ আগে ১ হাজার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাসস্থানের ফ্ল্যাট প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন মতিঝিলে এবং বাজিতপুরে। আরও তিন হাজারেরও উপরে নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আছে এবং অন্যান্য জেলায় নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ৫ শত ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আছে।’ আগামী নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন এই ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেজ্ঞ কি? তার কাছে জানতে চাওয়া হয়? জনপ্রশাসনের কাজে অভিজ্ঞ হাসানুজ্জামান কল্লোলের উত্তর- ‘জেলা প্রশাসক একজন প্রফেশনাল ব্যুরোক্রাট। আমি মনে করি একজন জেলা প্রশাসক নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সৎভাবে নিজের দায়িত্ব পালনের জন্যে যথেষ্ট সক্ষম একজন ব্যক্তি এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং ভাল নির্বাচন উপহার দেয়া তার জন্যে সম্ভব বলে আমি মনে করি।’ জেলা প্রশাসক সম্মেলন নিয়ে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর পর্বটি তুমুল জনপ্রিয় হয় এর প্রমাণ পাওয়া যায় অনুষ্ঠানটির ফেসবুক লাইভে দর্শকদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায়।
‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর পরের পর্বটি প্রচার হয় ২৫ জুলাই। বিষয় ছিল: পাকিস্তান নির্বাচন: নওয়াজ বনাম সেনাবাহিনী ও ইমরান। আলোচনায় অংশ নেন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবঃ মেজর জেনারেল হেলাল মোরশেদ খান বীর বিক্রম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এপি’র বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম ও চ্যানেল আইয়ের অনলাইন জার্নালিস্ট শর্মিলা সিনড্রেলা। অনুষ্ঠানের শুরুতে পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন নিয়ে চ্যানেল আই’তে প্রচারিত প্রণয় পলি কর রোজারিও এর প্রতিবেদনে এবং অতিথিদের নানা মাত্রিক বিশ্লেষণে এই পর্বে উঠে আসে পাকিস্তান নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি।
২৬ জুলাই ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর পর্বে আসে পরিবর্তন। এই পর্বে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর সঞ্চালনায় প্রথম দেখা যায় চ্যানেল আই এর বিশেষ প্রতিনিধি সঞ্জয় চাকীকে। এই পর্বে আলোচনার বিষয় বস্তুতেও ছিল চমক। ‘বড় পুকুরিয়ায় বড় পুকুরচুরি’ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন পেট্টোবাংলার সাবেক পরিচালক এবং কয়লা খনি নিয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, মুর্তুজা আহমেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাপেক্স এবং বিদ্যুত বিভাগের পাওয়ার সেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ওই দিন চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত সঞ্চয় চাকীর প্রতিবেদন দিয়ে অনুষ্ঠানের আলোচনার সূত্রপাত হয়। বড় পুকুরিয়ার কয়লা দূর্নীতির অনেক অজানা তথ্য আলোচনার মাধ্যমে দর্শকদের সামনে তুলে আনায় ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর এই পর্বটি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয় সবার কাছে। নতুন সঞ্চালক হিসেবে সঞ্জয় চাকীর উপস্থাপনাও বেশ প্রশংসিত হয়।
পরের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ পর্বটি ২৯ জুলাই প্রচার হয়, বিষয় ছিল: ভোটের আগে তিন সিটি। অনুষ্ঠানে ভোটের আগে তিন সিটি কর্পোরেশনের ইলেকশন নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমীন টুলি। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানস্তানের নির্বাচন পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং তিনি ২০১০ সালে চট্টগ্রামের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তার সাথে আরও ছিলেন নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত। এই পর্বের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ইলেক্ট্রনিক নিউজ গ্যাদারিং ইএনজি প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজশাহী থেকে সোমা ইসলাম, সিলেট থেকে ওবায়দুর রশিদ এবং বরিশাল নির্বাচন থেকে শাকের আদনান সরাসরি আলোচনায় যোগ দেন। এক সাথে চারটি স্থান থেকে সরাসরি সম্প্রচারের জন্যে দর্শকদের কাছে এই পর্বের গ্রহণযোগ্যতা ছিল অনেক বেশি। একই সাথে দেশের তিনটি নির্বাচনের সবশেষ অবস্থা সরাসরি জানতে পেরে দর্শকদের ভেতরে বিশেষ ভাললাগা তৈরী করে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর এই পর্ব।
৩০ জুলাই ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর বিষয় ছিল: ভোটের পর তিন সিটি। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট ষ্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জেবুন নেছা। এই পর্বেও তিনি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ইলেক্ট্রনিক নিউজ গ্যাদারিং ইএনজি প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকে বিশেষ প্রতিনিধি সোমা ইসলাম, সিলেট থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানে নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরেন ষ্টাফ করেসপনডেন্ট ওবায়দুর রশিদ এবং বরিশাল নির্বাচনের ফলাফল সরাসরি তুলে ধরেন সিনিয়র ষ্টাফ করেসপনডেন্ট শাকের আদনান। এক সাথে চারটি স্থান থেকে সরাসরি ভোটের ফলাফল সম্প্রচারের জন্যে দর্শকদের কাছে এই পর্বের গ্রহণযোগ্যতা ছিল আরও অনেক বেশি। একই সাথে দেশের তিনটি নির্বাচনের সবশেষ ফলাফল সরাসরি জানতে পেরে দর্শকদের ভেতরে যে সন্দোষ ছিল তা প্রকাশ পেয়েছে ফেসবুকে লাইক-কমেন্টের মাধ্যমে।
এদিন রাত ১১:৩০ মিনিটে সর্বশেষ নির্বাচনী ফল নিয়ে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর আরো একটি পর্ব প্রচারিত হয়।আলোচনায় অংশ নেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমীন টুলি। তার সাথে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জেবুন নেছা। এই পর্বেও ইলেক্ট্রনিক নিউজ গ্যাদারিং ইএনজি প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি জানান বিশেষ প্রতিনিধি সোমা ইসলাম, সিলেট থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানে নির্বাচনের ফলাফলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবর তুলে ধরেন ষ্টাফ করেসপনডেন্ট ওবায়দুর রশিদ এবং বরিশাল নির্বাচনের ফলাফল পরবর্তী অবস্থা সরাসরি তুলে ধরেন সিনিয়র ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট শাকের আদনান।
৩১ জুলাই ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: আগামীর বাংলাদেশ’। এদিন সজীব ওয়াজেদ জয় এর নামে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দুইটি গ্রাউন্ড ষ্টেশনের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারছি এবং আমাদের সন্তানেরা মহাকাশ বিজ্ঞান, পরমাণু প্রযুক্তি, সমুদ্র বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্র, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে, যা দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইটের সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে গাজীপুর ও বেতবুনিয়াতে দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের’ স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন উদ্বোধন হয়।
গ্রাউন্ড স্টেশন দুটির নামকরণ করা হয়েছে সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র গাজীপুর এবং সজীব ওয়াজেদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র বেতবুনিয়া। উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ১৪ জুন এই বেতবুনিয়াতে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন এবং সেখান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হয় এবং তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা এখন মহাকাশ জয় করেছি।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের বেতবুনিয়াতে এই উপগ্রহ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রটি দিয়ে গেছেন। আর সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর পরামর্শ এবং উদ্যোগে আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই সেই মুজিব থেকে সজীব-সেখানেই আমরা পৌঁছেছি।’ গত ১২ মে বাংলাদেশ সময় ভোর ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট এবং পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে পরমাণু ক্লাবের ৩৪তম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইট তার কার্যক্রম শুরু করেছে। এ দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে স্যাটেলাইট সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহীতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হলো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর গাজীপুরের তেলীপাড়ার ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশন এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ব্যাকআপ গ্রাউন্ড স্টেশন হিসেবে যুগপৎ ব্যবহৃত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে দোয়া চাই। দোয়া করবেন, যাতে দেশ ও জাতির সেবায় আমরা সব সময় নিয়োজিত থাকতে পারি।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের সেবায় কাজ করে। জনগণের সেবায় কাজ করে যাবে। জনগণের কল্যাণই আমাদের একমাত্র চিন্তা।’ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন দুটির নাম সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। পরে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অন্যতম রূপকার বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাউন্ড স্টেশন দুটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানেরা, সংসদ সদস্য, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার সক্ষমতা। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার প্রায় ৩৬ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গের সমপরিমাণ। অর্থাৎ ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ১ হাজার ৪৪০ মেগাহার্টজ পরিমাণ বেতার তরঙ্গ। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আর ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে। ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি হচ্ছে কেউই ব্যান্ডের এবং ১৪টি সি ব্যান্ডের। গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে বঙ্গবন্ধু–১ স্যাটেলাইট। উৎক্ষেপণের পর নির্দিষ্ট দুরত্বে দ্রাঘিমাংশে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে স্যাটেলাইটটি অবস্থান করছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স-ইতালি থেকে স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণভাবে কন্ট্রোল করা হলেও বর্তমানে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ট্র্যাকিং এবং কন্ট্রোলিং করা হচ্ছে। প্রকৌশলীরা এখান থেকে স্যাটেলাইটে সিগন্যাল পাঠিয়ে আবার তা রিসিভ করছে। প্রয়োজন হলে সিগন্যাল পাঠিয়ে স্যাটেলাইটটিকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পজিশনে নির্দিষ্ট অবস্থানে ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করছে। নিয়মিত ট্র্যাকিং ও কন্ট্রোলিং করা হচ্ছে।
‘টু দ্য পয়েন্ট’ এ আলোচনায় অংশ নেন জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এবং ড. শাহজাহান মাহমুদ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, সাবেক চেয়ারম্যান, বিটিআরসি। তাদের আলোচনার আগে দেখানো হয় চ্যানেল আইতে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের প্রতিবেদন। এরপরে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সঞ্জয় চাকীর প্রশ্ন ছিল ড. শাহজাহান মাহমুদ এর কাছে- ‘ভু-উপগ্রহের মাধ্যমে কিভাবে কাজ করছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এবং কিভাবে সামনের দিনে এই সেবা এগিয়ে নেওয়া যাবে?’ এর জবাবে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন- ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় সাড়ে বাইশ হাজার মাইল উপরে থেকে মিনিটে একশো মাইলেরও বেশি গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে ছুটে যাচ্ছে। এটার জন্যে একটি নির্দিষ্ট শ্লট আছে অর্থাৎ ওই জায়গায় সবসময়ই থাকতে হবে। জিই ষ্টেশন মানে কি? ওটাও নড়ে পৃথিবীও নড়ে। দুইটা যদি একসাথে নড়ে তাহলে দুইটা একই জায়গায় দেখা যাবে । তো এই যে একটা জায়গায় রাখা- তা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার এবং তার জন্যেই গ্রাউন্ড ষ্টেশন তৈরী করা হয়েছে। এটাকে ট্রাকিং বলে। স্যাটেলাইটের ভেতরে যত যন্ত্রপাতি আছে মেজর যন্ত্রপাতি তাদের যে প্যারামিটারগুলো তাদের টেলিমিটার বলে। ওই টেলিমিটার নীচে আসে। ২৪ ঘন্টায় ক্রমাগতভাবে ওটাকে মনিটর করতে হয়। গ্রাউন্ড ষ্টেশনের কাজ হলো এই। গাজীপুরেরটা প্রাইমারী। চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ারটা সহজে ইউজ হবে না। যদি কোন কারণে গাজীপুরটা ফেইল করে তাহলে বেতবুনিয়ারটা ইউজ হবে। এটি আসলে ব্যাক আপ।’
এর পরে উপস্থাপকের প্রশ্ন- ‘আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে- এই রকম একটি তথ্য আমাদের কাছে আছে। এই কার্যক্রম কবে এবং কিভাবে শুরু হবে এবং টেলিভিশনও এর সাথে যুক্ত আছে?’ জবাব দেন ড. শাহজাহান মাহমুদ- ‘আমার দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমার প্রথম দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি যে, এইখানে যে টেলিভিশন ষ্টেশনগুলো আছে এখন আপনারা যে স্যাটেলাইট কোম্পানীর সাথে আছেন সেখান থেকে সরিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে আনতে চাই এবং এখানে একটু টেনিক্যাল ডিফিকাল্টি আছে। কী রকম? এখন টেলিভিশনগুলো যে স্যাটেলাইট ইউজ করছে তা সি ব্র্যান্ডে আছে। কিন্তু আমাদের ট্রান্সপন্ডারের যে ফ্রিকোয়েন্সি তা শুধু এক্সটার্নাল সি না- আরও পরে ওটাকে বলে ইনসেপ সি ইন্ডিয়ান স্যাটেলাইট সিস্টেম সি একটু হায়ার ফ্রিকোয়েন্সি তে। সুতরাং এখনকার টেলিভিশনগুলোর কিছু যন্ত্রপাতি চেঞ্জ করতে হবে। আপনি ইতোমধ্যে হয়তো খবর পেয়েছেন আমাদের কোম্পানি থেকে ইতোমধ্যে মার্কেটিং রিপ্রেজেন্টিভ বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশনে যাচ্ছে।’ সেবার জন্যে আলোচনা চলছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন- ‘আলোচনা না? কাজ শুরু হয়ে গেছে।’ এরপরে জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর কাছে সঞ্চালক জানতে চান –‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে কেন্দ্র করে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হচ্ছে?’ উত্তরে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন- ‘সমৃদ্ধ আগামীর যে বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধ আগামীর প্রতিচ্ছবি হলেন জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, মুজিব থেকে সজীব এই যে যোগসূত্র ১৯৭৫ এর ১৪ জুন বঙ্গবন্ধুর হাতে বেতবুনিয়ায় যে আর্থ ষ্টেশন স্থাপিত হয়েছিল বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের প্রথম সংযুক্ত হয়েছিল। তারপরে সেই ৪৩ বছর পরে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হয়েছে সফলভাবে তার সম্পুর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আজকে তার নামেই আমাদের দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন। আমাদের সকলের আবেদনের প্রেক্ষিতেই বলতে গেলে জোর অনুরোধ করেই আমরা এই নামকরণ করেছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন। তাই জয় ভাইয়ের নামেই এটি করা হয়েছে। আমাদের প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠতো সমুদ্র তীর কিংবা নদী অববাহিকায়। কারণ কানেকটিভিটি। তারপরে আধুনিক বিশ্বে বসতি গড়ে উঠতো রেল অথবা রোড কানেকটিভিটির ধারে। আর এখন এই মিলেনিয়াম যুগে অর্থাৎ এই যে ওয়াই টুকে যা ইয়ার টু থাউজেন্ড এ ইন্টারনেটের সভ্যতার সময়ে এখন কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে ওঠে যেখানে ফাইবার অপটিক্যাল কেবল আছে কিংবা যেখানে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি আছে। সুতরাং আপনি যে আগামীর বাংলাদেশের কথা বলছেন যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যা মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাই বলেছেন যে, আগামীর বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি ইন্টারনেটে কানেকটেড থাকবে।
আর তার জন্যে আমরা আইসিটি ডিভিশন থেকে ইনফো ওয়ান টু থ্রি বাস্তবায়ন করে চলেছি বিভাগ থেকে জেলা, জেলা থেকে উপজেলা এবং উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত। আমরা দুই হাজার ইউনিয়ন কানেকটিভিটি করেছি।’ সজীব ওয়াজেদ জয় দ্বীপ ও চর এলাকায় কানেকটিভিটি প্রসঙ্গেও বলেছেন সেই ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী জানান- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শন কি? বহুমাত্রিক এবং ইনক্লুসিভ অর্থাৎ শহর এবং গ্রামের বৈষম্য দূর করা। তো সেখানে তিনি রাস্তা নির্মাণ করছেন গ্রামে যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্যে। বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে দিচ্ছেন গ্রামের মানুষের শহরের সাথে বৈষম্য দুর করার জন্যে। কিন্তু আধুনিক এই ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন যদি ইন্টারনেট কানেকটিভিটি না থাকে তাহলে সেই ডিজিটাল বৈষম্য কিন্তু থেকে যাবে।
যে কারণে আমরা বলছি যে-এই দ্বীপ, চর, ছিটমহল এবং পাহাড় এই দূর্গম অঞ্চলে আমাদের বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট থেকে আমরা প্রতি ইঞ্চি মাটিকে ডিজিটাল ইন্টারনেট কানেকটিভির আওতায় আনবো। সুতরাং আমাদের আগামীর সমৃদ্ধ প্রতিচ্ছবির ভবিষ্যত নেতা তরুণ প্রজন্মের গর্ব জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এর নির্দেশনায় ধাপে ধাপে এমনভাবে পরিকল্পনা করছি যে, ২০২১ সালে প্রকৃতপক্ষে দেশে শহর আর গ্রামের পার্থক্য থাকবে না। দেশের ষোলো কোটি মানুষ একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন দুর্গম অঞ্চল পর্যন্ত তারা ইন্টারনেট কানেকটিভিটির আওতায় আসবে।’ আমাদের দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো তো এখন সিঙ্গাপুর ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইউজ করছে এই ব্যাপারে জুনাইদ আহমেদ পলক জানান- ‘গত ২৯ জুলাই মাননীয় আইসিটি উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা ডমেস্টিক নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেশন কমিটির মিটিং করেছি। প্রায় ৩ ঘণ্টার একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। সেইখানে আইডেন্টিফাই করা গেছে- আমাদের যে ২৫/৩০ টা টেলিভিশন চ্যানেল আছে ইনক্লুডিং চ্যানেল আই আপনাদের যে ব্যান্ড আছে সি এক্সটার্নাল ভার্সন তারও উপরে। এখানে দেখা গেছে যে, আপনাদের প্রতিটি চ্যানেলে একটি ডিভাইস বসাতে হবে পাঠানোর জন্যে অর্থ্যাৎ আপনি যে সেন্ড করবেন ইন্টারনেট থেকে সিগন্যালটা তার জন্যে একটি পরিবর্তন দরকার।’
প্রযুক্তির প্রয়োজনেই আপডেট সঞ্চালক জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী এর উত্তরে বলেন- ‘এই ধরনের যখনই আমরা কোন বড় বড় কর্মসূচি নেই বা কোন বড় ধরনের সাফল্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আসে- তখন একদল জনগোষ্ঠী আছে যারা সমালোচনা কিংবা মিথ্যা অপপ্রচার করে আমাদের সাফল্যগুলোকে ম্লান করে দিতে চায়। তাই আমি বলতে চাই- এই ডিভাইসগুলোর দাম খুব বেশি নয় যা রিপ্লেস করা সম্ভব। আরেকটা হলো ৩ হাজারের মত যে কেবল অপারেটর আছেন সেখানেও আপনার যে রিসিভারটা দিতে হয় সেটার দামও খুব বেশি না ২৮ বা ২৫ ডলারের মত। গত ২৯ তারিখের বৈঠকে সবকিছু টেকনিক্যাল পার্সনদের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনা হলো- এটি আমরা এখন টেলিভিশন চ্যানেল এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল কোম্পানি তাদের সাথে বসে আমরা সুন্দর সমাধান করবো যাতে দ্রুত এটা রিপ্লেস করে সেপ্টেম্বর বা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এটি ফুল ফ্লেজেড ফাংশনাল হবে এর এর বিজনেস যে মডিউল তা কিন্তু ইন্ট্রডিউস হবে।’
আগামীর স্যাটেলাইটের বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এই ইঙ্গিত দেন জুনাইদ আহমেদ পলক- ‘আগামীর বাংলাদেশ কোন বিদেশের উপরে নির্ভরশীল হবে না। আগামীর বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’ ইন্টারনেটের গতি বাড়বে? আইটি প্রজন্ম গড়ে ওঠার বিষয়ে তার মতামত ছিল- ‘শিওর। একটা বিষয় দেখনু এখানে জয় ভাইয়ের নির্দেশনা আপনি ফাইবার অপটিক কেবল কিন্তু সব জায়গায় আমরা নিয়ে যাব। যতো জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব সেখানে নিয়ে যাব। কারণ এখানে আপনি স্পিডটা পাবেন আনলিমিটেড। কারণ আমরা জিবিপিএস স্পিডে যেতে পারছি। কিন্তু স্যাটেলাইট থেকে যখন আপলিঙ্ক দেবেন তখন ইমার্জেন্সিতে আমরা ব্র্যান্ডউইথটা সেখানে কম পাবো। কারণ স্যাটেলাইট থেকে প্রচুর স্পিড বা ব্র্যান্ডউইথ দেওয়া সম্ভব না। সেখানে আমরা বলছি যে যেখানে ফাইবার অপটিক কেবল যাওয়াটা কঠিন সেই সব জায়গায় আমরা স্যাটেলাইট দিয়ে যাব।
আমরা দেখেছি প্রায় ৪ হাজার ইউনিয়নে ফাইবার কেবল অপটিক দিয়ে যেতে পারবো। ফলে যেটা হবে তা হলো- গ্রাম গ্রাম ভিত্তিক ছোট ছোট ডিজিটাল ইকনোমিক হাব তৈরী হবে। তখন আমিাদের তরুণ তরুণীরা ওই ইউনিয়নে বসে- এখন যেমন জেলা উপজেলায় বসে ফ্রিল্যান্সিং করছে, ই-কমার্স করছে তখন কিন্তু তারা ইউনিয়নে বসে আউটসোর্সিং করতে পারবে, অনলাইন মার্কেট প্লেস এ কাজ করতে পারবে। ফলে তখন আর শহর এবং গ্রামের কোন পার্থক্য থাকবে না।’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নিয়েও চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলকের উত্তর- ‘এটা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কারণ একটি স্যাটেলাইটের মেয়াদ ১৫ বছর। তো আমাদের সুবিধা হচ্ছে দেড় বছরের এক্সট্রা ফুয়েল আমরা ফ্রি অব কস্টে পেয়েছি। নতুন স্যাটেলিইট স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ এর ব্যাপারে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।’
১ আগস্ট ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর পর্ব-১০ এর বিষয় ছিল ‘শোকের মাস আগস্ট: কোনপথে বাংলাদেশ’। এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নব নির্বাচিত সভাপতি মোঃ রেজানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ২ বছরের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি অনুমোদন করা হয়। সভানেত্রীর পক্ষে কমিটি ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন সভাপতি মোঃ রেজানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক হন মোঃ জোবায়ের আহমেদ।
টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় চলমান আন্দোলনে সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ হিসেবে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা সবসময় শিক্ষার্থীদের সাথে আছি। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে আমরা সবসময় একাত্ম। গোলাম রাব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজেরা ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন এবং রুট পারমিট দিচ্ছেন, এগুলো আমরা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী, ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ’র সংশ্লিষ্টদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এটা আপনাদের দায়িত্ব। অথচ এটা আমরা পালন করিছ, যা আপনাদের পালন করার কথা ছিল। তিনি জানান, অতীতের ভুল ত্রুটি কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জীবনবোধ সকল কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাবে নতুন কমিটি।
ছাত্রদের আন্দোলনকে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন ছাত্রলীগ এর নব নির্বাচিত সভাপতি মোঃ রেজানুল হক চৌধুরী শোভন। আলোচনায় তিনি বলেন- ‘শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে রাজধানীতে গণপরিবহন একেবারেই কমে গেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও শিক্ষার্থীদের যৌথ অভিযানের মুখে নগরীতে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে অফিসগামী যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। সরকারি নির্দেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই ইউনিফর্ম পরে সড়কে অবস্থান নেন। দাবি মানা না পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে পিছপা হবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে- এই সব বিষয়কে আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবীর সাথে একাত্ম।’
রেজানুল হক চৌধুরী শোভন আরও বলেন- ‘রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের মুখে জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাসের প্রতিযোগিতা করে যাওয়ার সময় এক বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এই ঘটনা পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুল করিম রাজীব ও প্রথম বর্ষের ছাত্রী দিয়া খানম মীম। তাদের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমরা চেষ্টা করবো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সরকারকে সহযোগীতা করে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সফল করে তাদেরকে ক্লাস রুমে ফিরিয়ে আনতে।’
২ আগষ্ট ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর বিষয় ছিল: ‘সড়কই কি সড়ক সমস্যার সমাধান’। এই পর্বের অতিথি ছিলেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম হোসেন সরকার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফারহানা হক এবং নতুন প্রজন্মের পক্ষে অংশ নেন ফ্ল্যাগ গার্ল প্রিয়তা ইফতেখার। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে চ্যানেল আইতে প্রচারিত আফরোজা হাসির প্রতিবেদন।
৪ আগস্ট ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর বিষয় ছিল ‘সড়ক ব্যবস্থাপনা: মূল সমস্যা কোথায়?’ এই বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আরিফা রহমান রুমা ও ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ।
এরপরে ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর পর্ব-১৪ সম্প্রচার হয় ৫ আগস্ট। এ দিনের বিষয় ছিল ‘উন্নয়নে প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন।’ আলোচনায় অংশ নেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। এছাড়া তিনি কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ সামাদ চৌধুরী। এই পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে আটটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ২১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করেন সেই বিষয়ে একটি চ্যানেল আই এর প্রতিবেদন। বিদ্যুত সেক্টরের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর এই পর্বটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এমন মন্তব্য করেন অনেক দর্শক ফেসবুক লাইভে।
এইভাবে ১৬, ১৭, ১৮ পর্ব পেরিয়ে দর্শকদের ভালবাসা আর মতামতে সমৃদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলেছে ‘টু দ্য পয়েন্ট।’ ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে অচিরেই বাংলাদেশের টেলিভিশন টকশোর ইতিহাসে জনপ্রিয়তার নুতন ইতিহাস গড়বে অনুষ্ঠানটি তা উঠে এসেছেন দর্শকদের মতামতে।