আর্মেনিয়া পূর্ব ইউরোপের একটি ছোট এবং আরামদায়ক দেশ। দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের এই দেশটির পশ্চিমে তুরস্ক, উত্তরে জর্জিয়া, পূর্বে আজারবাইজান এবং দক্ষিণে ইরান। এই দেশ মেরিল্যান্ড রাষ্ট্রের তুলনায় সামান্য বড়, কিন্তু তার সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত ঐতিহ্যের সঙ্গে খুব সমৃদ্ধ এবং অনন্য। এটি বিশ্বের নিরাপদ রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম। ২০১৫ সালের Gallup’s Law and Order Index এর রিপোর্ট অনুযায়ী আর্মেনিয়া বিশ্বের নবমতম নিরাপদ রাষ্ট্র।
আর্মেনিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ইয়েরেভান। হৃজদান নদীর তীরে শহরটির অবস্থান। এটি দেশটির প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক এবং শিল্পের: প্রধান কেন্দ্র। ১৯১৮ সাল থেকে এটি আর্মেনিয়ার রাজধানী হিসেবে পরিগণিত হয়। পিংক সিটি হিসেবেও খ্যাত। ৭৮২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। আয়তন ২২৩ বর্গ কিমি। জনসংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার প্রায়।
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহরটি যেন একটি পরিকল্পিত পার্ক। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত, গুছানো। যেদিকে যাই সুসজ্জিত বাগান, সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় ফুটপাত, সেখানে পথচারিদের, বসার সিট, রাস্তার মোড়ে মোড়ে সুপেয় পানির কল, যেন পথচারিরা তৃষ্ণা মেটাতে পারেন।
সবকিছুর মতো বিল্ডিংগুলো পরিকল্পিতভাবে তৈরি। সবগুলো প্রায় সমান। প্রায় একই নকশা। দারুণ দেখতে। অদ্ভুত সুন্দর।
ট্রাফিক ব্যবস্থা অসাধারণ। কোন পুলিশ নেই। লাল সিগন্যাল পড়লে মানুষ থেমে যাবে। গাড়ি চলবে। সবুজ সিগন্যালে কোন গাড়ি চলবে না। মানুৃষের প্রতি সম্মান, গুরুত্ব এখানে অনেক বেশি।
এখানকার মানুষগুলো অনেক সুন্দর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিলো বলেই এমন সুন্দর তারা। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষার্থী কোন না কোন জব করে। নিজের পড়ালেখার খরচ নিজে ব্যয় করে। ২৬ টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে আর্মেনিয়ায়। বেশিরভাগ রাজধানীতে। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইয়েরেভান স্টেট ইউনিভার্সিটি সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তর।
আর্মেনিয়ায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। সর্বত্র নারীদের প্রাধান্য। বিশ্বের যে ১০টি রাষ্ট্রে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি তার মধ্যে এটি সপ্তম রাষ্ট্র। বিশেষ করে হোটেল, রিসোর্ট, হোস্টেল, সুপার শপ এবং রেস্টুরেন্টে। ইয়েরেভানে একটু পরপর রেস্টুরেন্ট। মাঝে মধ্যে এটিকে রেস্টুরেন্টের শহর মনে হবে।
প্রাচীন এই শহরে ১০টি জাদুঘর আছে। একটির চেয়ে অন্যটির গুরুত্ব বেশি। সবকিছুর মধ্যে কেমন যেন তৃপ্তি আছে। দেখে, ঘুরে আনন্দ মিলে।
আজ ৯ দিন পর এই দেশ, এই শহর ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছি। সবকিছু ভালো থাকুক। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। কারণ, পৃথিবীটা এখন অনেক ক্ষুদ্র এবং গোল।