বাংলা সংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব কুমার বিশ্বজিৎ। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। তবে তিনি শুধু কণ্ঠশিল্পীই নন, একাধারে তিনি গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক।
গানের জন্য একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পীর গাওয়া ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘তুমি রোজ বিকেলে’ কিংবা ‘ভিটা নাইরে’র মতো গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে! সম্প্রতি ভিন্ন আয়োজনে নতুন একটি গান ভিডিও নিয়ে এলেন তিনি। তাজু কামরুলের কথা ও আহমেদ হুমায়ুনের সুর সংগীতে গানটির নাম ‘মেঘলা দিনে’।
সম্প্রতি গানছবি এন্টারটেইনমেন্ট এর ইউটিউব চ্যানেলে গানটি মুক্তি পেয়েছে। প্রশংসা পাচ্ছেন গানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিশেষত কুমার বিশ্বজিতের গায়কী ও গান ভিডিওর মনোরম দৃশ্য নিয়ে কথা বলছেন সাধারণ শ্রোতা দর্শকরাও।
গানটি নিয়ে কথা হয় কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, গানটি এখন পর্যন্ত যারা দেখেছেন, তাদের কাছ থেকে খুব ভালো অ্যাপ্রিসিয়েশন পেয়েছি। দেখা যাক কী হয়, আমরা চেষ্টা করছি ভালো কিছু করার। লিরিক, টিউন, কম্পোজিশন, সিঙ্গিং থেকে শুরু করে পিকচারাইজেশনের দিক থেকেও অভিনব কিছু দেয়ার চেষ্টা ছিলো। সবদিক থেকেই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, পিকচারাইজেশনের কথা আলাদা করে এজন্যই বলছি, আমরা যেভাবে শুটিং করেছি সেটা দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না, স্ক্রিনে যেটা! মিনিয়েচার বাড়ি বানানো, চার্চ বানানো, রেস্টুরেন্ট বানানো- সব মিলিয়ে অন্যরকম একটা ফ্লেভার দেয়ার চেষ্টা ছিলো। হয়তো ভিডিও দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন, কোন দেশে শুটিং হয়েছে! আসলে মিনিয়েচার পদ্ধতির সহায়তা নিয়ে শ্রোতা দর্শককে ভিন্ন কিছু উপহার দিতেই আমরা এই কাজটি করেছি, যার শুটিং হয়েছে রাজধানীর ৩০০ ফিটের একটি নার্সারিতে!
তিনি বলেন, এই গান ভিডিও নির্মাণের পেছনের দৃশ্যও আমরা ধারণ করেছি ক্যামেরায়। এটি নিয়েও একটি ছোট্ট ভিডিও আসবে। এটা দেখলে হয়তো অনেকে বিস্মিত হবেন, কী প্রক্রিয়ায় গানটির এতো মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধারণ আমরা করেছি।
গানছবি এন্টারটেইনমেন্ট ইউটিউব চ্যানেলটিকে তরুণদের প্লাটফর্ম বলতে চান কুমার বিশ্বজিৎ। জানালেন, এই চ্যানেল থেকে আগামিতে একেবারে তরুণ প্রতিভাবান শিল্পীদের কাজ প্রকাশের পরিকল্পনা আছে। সেইসব তরুণ, যাদের নিজেদের প্রকাশের কোনো সুযোগ পান না, তাদের নিয়ে কাজ করবে গানছবি। তিনি বলেন, চ্যানেলটি হয়তো এতোদিনে আরো স্টাবলিশ জায়গায় চলে যেত, করোনার সময়টায় আমি কাজ করতে পারিনি। তবু এই অল্প সময়ের মধ্যে সিলভার বাটন পেয়েছি, এটিও আমাকে বেশ উদ্যোমী করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে।
চ্যানেলটিতে শুধু গান নয়, নাটক নিয়েও আছে পরিকল্পনা। তবে এটিতে সংগীতই প্রাধান্য পাবে। কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, শুধু শিল্পী নয়, মিউজিশিয়ানদের নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা আছে। তাদের যে আলাদা পরিচয় আছে, সত্ত্বা আছে- এগুলো নিয়ে কাজ একেবারেই হয়নি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে হলেও এ কাজগুলো আমরা করতে চাই। আর সংগীত নিয়ে এমন পরিকল্পনা আর্থিক নয়, আত্মিক কারণে।
একইসঙ্গে সংগীতের গুরুত্ব নিয়েও কথা বলেন কুমার বিশ্বজিৎ। বলেন, সংগীত এমন একটা বিষয় যেটা অনুভব করতে হয়, উপলব্ধি করতে হয় এবং সংগীতে অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে, স্বাধীনতার কথা বলে, অস্তিত্বের কথা বলে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সংগীতের ভূমিকা বিশাল।সংগীত মানে একটা পাওয়ার, মানুষকে জাগ্রত করে, উদ্বুদ্ধ করে। সংগীত শুধুমাত্র বিনোদন না, এটা ভুলে গেলে চলবে না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে সংগীত বিষয়টা অপশনাল বিষয়ের মতো। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মত এটা জরুরি না, বরং মৌলিক চাহিদা পূরণ হলে লোকে গান শুনতে চায়। আর এমন অপশনাল বিষয়ের মতো অগুরুত্বপূর্ণ বলেই সংগীতের মানুষেরা সমাজে বিশেষভাবে অবহেলিত। তাই সামাজিকভাবে সেই রেস্পেক্টও হয়না, যে রেস্পেক্ট এর জন্য অনেকভাবে আমরা যুদ্ধ করে যাচ্ছি। অথচ সংস্কৃতি একটা জাতির পরিচয় বহন করে, সংস্কৃতি না থাকলে যে অপসংস্কৃতি ঢুকে যায়, বা পরসংস্কৃতি ঢুকে পড়ে- এটা আমাদের আগে বুঝতে হবে।
একইসঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে টেকনিক্যাল সাইটেও দক্ষ হওয়ার কথা বলেন তিনি।
কুমার বিশ্বজিতের নতুন গান ভিডিও ‘মেঘলা দিনে’: