হারলেই কাটতে হবে ফেরার বিমানের টিকিট, এমন বাস্তবতাকে সামনে রেখে শেষ ষোলোর প্রথম লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে হট-ফেভারিট আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। জায়ান্ট দল দুটির ম্যাচের আগে চলছে অনেক বিশ্লেষণ, থাকছে হিসাব-নিকেশ। সামনে আনা হচ্ছে অতীত পরিসংখ্যান। আদতে কী ঘটতে যাচ্ছে তাদের ভাগ্যে? কাজানে লেখা হবে কার বিজয়গাঁথা? সেজন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। মাঠের ৯০ মিনিট, রোমাঞ্চে ভাসবে ফুটবলবিশ্ব, খুলবে কোয়ার্টারের দরজা।
শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স।
আর্জেন্টিনার চেয়ে তুলনামূলক সহজ গ্রুপ ‘সি’তে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে নকআউট নিশ্চিত করেছে লেস ব্লুজরা। পেরু এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয়, আর ডেনমার্কের বিপক্ষে ড্র করেছে ফরাসিরা। নামের বিচারে বলা চলে গ্রুপ পর্বে খুব একটা বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি অ্যান্টনে গ্রিজম্যান-পল পগবাদের।
বিপরীত শিবিরে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। বাছাইপর্ব থেকে ধুঁকতে ধুঁকতে আসা আর্জেন্টিনার ‘ডি’ গ্রুপকে বলা হচ্ছিল এবারের বিশ্বকাপের ‘গ্রুপ অব ডেথ’। প্রতিপক্ষ হিসেবে আলবিসেলেস্তেরা পেয়েছিল আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া এবং নাইজেরিয়াকে। আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র দিয়ে মেসি-ডি মারিয়াদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু, এরপর ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত। শেষে নাইজেরিয়াকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে নক আউট পর্বে জায়গা করে নেয় ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা।
বলা হচ্ছে পোড় খাওয়া আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আসল বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে ফ্রেঞ্চদের।
বিশ্বকাপে দুই দলের সাফল্য
- অর্জেন্টিনা: এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ১৬টি আসরে অংশ নিয়েছে আর্জেন্টিনা। এরমধ্যে ৫টির সেমিফাইনাল খেলেছে আলবিসেলেস্তেরা। রয়েছে ২টি বিশ্বজয়ের ইতিহাস।
- ফ্রান্স: এখন পর্যন্ত বিশ্বসেরার লড়াইয়ের ১৪টি আসরে অংশ নিয়েছে ফ্রান্স। যার মধ্যে সেমিফাইনাল খেলেছে ৫টি ও ফাইনাল খেলেছে ২টি আসরে। শিরোপা জিতে একবার। ১৯৯৮’র বিশ্বকাপে জিনেদিন জিদানের হাত ধরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাদ পায় ফ্রান্স।
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ম্যাচে আলো কাড়তে পারেন যারা
আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স দুই দলেই রয়েছে একাধিক তারকা খেলোয়াড়। ফরাসি জার্সি গায়ে যেমন গ্রিজম্যান, পগবা, জিরুদরা আলো ছড়াবেন, ঠিক তেমনই আর্জেন্টিনার হয়ে আলো ছড়াতে প্রস্তুত লিওনেল মেসি, ডি মারিয়া, আগুয়েরোরা। প্রত্যেক দল থেকে যদি একজন করে বাছাই করতে বলা হয়, অবশ্যই সবার আগে মেসি এবং গ্রিজম্যানের নাম আসবে।
- লিওনেল মেসি: আর্জেন্টিনা দলটি মেসিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। অনেকটা মেসিনির্ভর দল বলা চলে। দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে বারবার ত্রাতারূপে আবির্ভূত হন এ ফুটবল জাদুকর। বাছাই পর্বে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় থাকা আর্জেন্টিনাকে শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে বিশ্বকাপে নিয়ে এসেছেন। আবার এক ড্র এবং হারে দল যখন গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়া উপক্রম, তখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে উজ্জীবিত করেছেন মেসিই। তাই ফ্রান্সের বিপক্ষে নক আউট পর্বে নায়ক হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এলএম টেনের।
- অ্যান্টনে গ্রিজম্যান: ফ্রান্স দলে তারকার ভিড়ে অ্যান্টনে গ্রিজম্যানের কথা আলাদা করেই বলতে হবে। অনেকদিন থেকে ফরাসি দলের সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে তার নাম। ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের টপ স্কোরার ছিলেন। আবার রাশিয়া বিশ্বকাপের ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইপর্বে ৪টি গোল কারার পাশাপাশি চারটি গোল করিয়েছেন এ ফরোয়ার্ড।
কোচ কথন: প্রতি বিশ্বকাপের মতো এবারও আলোচনায় রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দলগুলোর কোচেরা। মাঠে এগারোজন জয়ের জন্য খেললেও মূল রণ-পরিকল্পনা তাদের মাথা থেকেই আসে।
- হোর্হে সাম্পাওলি: চলতি বিশ্বকাপে আলোচনায় আসা কোচদের মধ্যে অন্যতম আর্জেন্টিনার বস হোর্হে সাম্পাওলি। খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের খবর, তার রণকৌশল আত্মস্থ করতে না পারা, বহু কথার জন্ম দিয়েছে। তবে তার সাফল্যও কম নয়। চিলিকে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া। পরের বছর শতবর্ষী কোপা’র শিরোপা এনে দেয়ার মতো সাফল্য রয়েছে সাম্পাওলির ঝুলিতে। আবার ব্যর্থতার মোড়কে থাকা মেসিদের তৃতীয় কোচ হিসেবে বাছাইপর্বের বৈতরণীও পার করিয়েছেন।
- দিদিয়ের দেশম: ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশমের রয়েছে বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ার। ১৯৯৮ সালে ফরাসিদের বিশ্বজয়ে নেতৃত্ব দেন দেশম। এরপর মোনাকো, জুভেন্টাসের মতো দলগুলোর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। অধিনায়ক থেকে কোচ, ফরাসিদের আবারও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশম।
সবকিছুর পরও একটা পরিসংখ্যান কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে আর্জেন্টাইন ফুটবল ভক্তদের। এপর্যন্ত ১১ সাক্ষাতের ৬টিতেই জয় আলবিসেলেস্তেদের। বিপরীতে মাত্র দু’বার জয়ের দেখা পেয়েছে ফরাসিরা। বাকি তিনটি ম্যাচ শেষ হয়েছে অমীমাংসিতভাবে। সর্বশেষ সাক্ষাত ২০০৯ সালে। সেই ম্যাচে ২-০ গোলের জয় পায় আর্জেন্টাইনরা। এখন দেখার অপেক্ষা কাজানের রণ-ভূমিতে জয়ের মুকুট ওঠে কার মাথায়। সেজন্য ফুটবলভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে আর কিছুঘণ্টা।