চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আর্জেন্টিনার অবস্থা হয়েছে ভার্সিটির ছাত্রদের মত

স্যাটায়ার

কলেজ জীবনে এক স্যার পেয়েছিলাম। ছাত্ররা বিস্ময়কর কিছু করলে ভালোবেসে বলতেন, ‘হা…পো হা… করছোস কী?’ সেই স্যার আর্জেন্টিনার ডাইহার্ট সাপোর্টার। আজ খেলা দেখে প্রিয় দলের খেলোয়াড়দের উপর বিরক্ত হয়ে যে ঐ কথাটাই বলছেন এতে কোনো ভুল নেই।

আর্জেন্টিনা সাপোর্টারসরা ছোটবেলা থেকেই খেলা শেষে নিজেদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘ম্যাচ হারলেও ভালো খেলছে। পঁচাত্তর পার্সেন্ট সময় বল রেখেছে নিজেদের দখলে।’ তারপর কতকিছু হয়ে গেলো। পদ্মা মেঘনা দিয়ে গড়ালো কত জল। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট পাঠালো মহাকাশে। পদ্মসেতুতে যুক্ত হলো একের পর এক স্প্যান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম একত্রে বসে টোস্ট বিস্কুট দিয়ে চা খেলেন। আর্জেন্টিনা সাপোর্টারদের সান্ত্বনাবাক্য আর পরিবর্তন হলো না।

আর্জেন্টিনার অবস্থা হয়েছে আমদের দেশের প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্রদের মতো। মিডটার্ম পরীক্ষার সময় বলে, মিডটার্মটা কোনো মতে যাক। সেমিস্টার ফাইনালে দেখাই দিমু। সেমিস্টার ফাইনালে গিয়ে দেখে মিডটার্মের মার্কস যোগ হচ্ছে। তখন বলে এই সেমিস্টার কোনোমতে যাক। পরের সেমিস্টারে দেখাই দিমু। দেখাই দেওয়া আর হয় না। বসে বসে অন্যের কাপ নেওয়া দেখতে হয়।

গত ঈদে ‘বড়ছেলে’ নামে একটা নাটক খুব আলোচিত হয়েছিল। যেই নাটকে বড়ছেলেকে পরিবারের জন্য, নিজের ক্যারিয়ারের জন্য প্রেমিকাকে অন্যের সাথে বিয়ের মতো বিষয়টাও মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। মেসি মুখ বুজে আর কত সহ্য করবেন কে জানে।
মেসির পেনাল্টি মিস করা দেখে এক বড় ভাই বললেন, মেসি তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসে। স্ত্রীকে মিস করতে করতে অভ্যাস হয়ে যাওয়া সবকিছুই মিস করতে শুরু করেছে।

গত বিশ্বকাপে ঝলক দেখানো ডি মারিয়া এদিক থেকে এক কাঠি সরেস। মেসি শুধু পেনাল্টি মিস করে। ডি মারিয়া পুরো ফুটবল খেলাটাই ‘মিস’ করতে শুরু করেছে। মাঠে মরিয়া হয়েও ডি মারিয়াকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কে জানে হয়তো মারিয়ার সরিয়া পড়ার সময় হয়েছে।
আজ ঈদের দিন বিধায় দুপুরে এক বন্ধুকে বললাম, সালামি কত পেলি? বন্ধু বলল, আমাদের সালামি তো মেসি দেবে। খেলা শেষ হওয়ার পর বন্ধুকে অনলাইনে দেখে নক দিলাম। বিমর্ষ ইমো দিয়ে বন্ধু বলল, আর বলিস না। মেসি সালামির টাকা মেরে দিয়েছে। সম্ভবত পেনাল্টি মিসটাকেই সালামি মেরে দেওয়া বলে ধরে নিয়েছে মেসিঅন্তপ্রাণ বন্ধুটি।

তবে আইসল্যান্ডের ড্র করা ব্রাজিল ভক্তদের উদযাপন দেখে একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ছে। ‘আমি জিতলে জিতে যায় মা।’ বিজ্ঞাপনের ভাষা এদিক সেদিক করে বলা যায়, আইসল্যান্ড ড্র করলে জিতে যায় ব্রাজিল।

ব্রাজিল ভক্তদের এমন উদযাপন দেখে এক বন্ধু বলল, এই বিশ্বকাপে যেন প্রতিদিন ব্রাজিলের খেলা। কখনো পর্তুগালের বেশে, কখনো জার্মানীর বেশে, কখনো আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, নাইজেরিয়ার বেশে।

সেই হিসেবে ব্রাজিল ভক্তদের আজ ঈদের দিন। আর্জেন্টাইন ভক্তদের ঈদের চাঁদের জন্য ২১ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ২১ জুন চাঁদ উঠবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত করবে কোন চাঁদ দেখা কমিটি?
অবশ্য খেলা শেষে ২১ জুন চাঁদ ওঠার আভাস দিয়েছেন ম্যারাডোনা। খেলোয়াড়দের ইশারায় বলেছেন, ‍বুকে সাহস রাখো। পরের ম্যাচে হবে। কতটা সাহস রাখতে পারবে সেটা দেখা যাবে ২১ জুন।