চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আরেকটি আলোচিত মামলার রায়ে আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চালক ও হেলপারসহ ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)।

দেশে নিয়মিত বিরতিতে নানা সড়ক দুঘর্টনায় বহু মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক-মহাসড়কে এধরণের ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের অপরাধী পর্যন্ত মনে করতে নারাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় অভিযুক্তরা আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার আইনি প্রক্রিয়া নিতে গেলে বা আইনের শক্ত ধারার কারণে আন্দোলন পর্যন্ত করতে দেখা গেছে তাদের।

কিছুদিন আগে ফেনী’র মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের মামলার রায়ের পরে এই মামলার রায় আরেকটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। একবছরের কম সময়ে তদন্ত ও বিচারিক কর্মকাণ্ড শেষে এই রায় জনমনে আইনের প্রতি কিছুটা হলেও ভরসা এনে দিয়েছে বলে আমরা মনে করি।

রাজধানীর সড়কে রাজীব-মিম হত্যার ঘটনার পরে সারাদেশ জুড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে শিক্ষার্থীরা। সেখানে ৯টি দাবি তুলেছিল তারা। সড়কে নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে ৯টি দাবি তুলে ধরে। সেগুলো হলো- ১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী চালককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। ২. দুর্ঘটনার পর দেওয়া নৌপরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে। ৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। ৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। ৭. শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না। ৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের এসব দাবির অধিকাংশই পূরণ হয়নি, তবে কিছুকিছু দাবি পূরণের প্রক্রিয়া চলমান আছে। এর মধ্যে মন্ত্রী শাজাহান খান ক্ষমা না চাইলেও দুর্ঘটনার পাঁচ মাস পর গঠিত সরকারের নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি তার। এরপরে এ বছর গত ১৯ মার্চ প্রগতি সরণিতে জেব্রা ক্রসিংয়ে বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ফের আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আবারও নতুন করে দাবি উঠেছিল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সেগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে আন্তরিক মনে হলেও পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন হুমকিতে সবকিছুতেই ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু কিছু বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরেও এই পরিস্থিতি হতাশাজনক।

বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত কার্যকর করা একান্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি। এছাড়া কোনো ঘটনার পরে সেই ঘটনা নিয়ে আন্দোলন-সমালোচনা হলে শুধুমাত্র সেই ঘটনাকে গুরুত্ব দেবার পরিস্থিতি দেখা যায়। অন্য ঘটনাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নিম্ন পর্যায়ে সঠিক তদন্ত ও গুরুত্বের অভাবে বিচারিক ধারায় খুব একটা ইতিবাচক ফলাফল আসে না বলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন। এই অবস্থারও পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

আমাদের আশাবাদ, রাজীব-মিম হত্যা মামলার মতো সকল ঘটনা সঠিক গুরুত্ব পাবে, সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হবে।