মানসম্মত দেশিয় খেলোয়াড় না থাকায় স্বাধীনতা কাপে ব্যর্থ হয়েছে বিদেশী ফুটবলার নির্ভর ক্লাবগুলো। কিন্তু একঝাঁক তরুণ ফুটবলার নিয়ে চমক দেখিয়েছে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে মতিঝিল পাড়ার দলটি। ষাট বছরের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মত শিরোপার স্বাদের পথে জায়ান্ট আবাহনীকেও হারিয়েছে তারা।
অথচ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেই ছন্নছাড়া ছিল এই আরামবাগ। ২২ ম্যাচের ৫টি জয়ের বিপরীতে ১১ ম্যাচেই হার। ২১ পয়েন্ট নিয়ে হয় অষ্টম। স্বাধীনতা কাপে ঠিক তার উল্টো চিত্র। প্রতিপক্ষ দলগুলোতে ভিনদেশি ফুটবলার না থাকাকে আরামবাগের উত্থানের বড় কারণ মনে করছেন সাবেকরা।
সাবেকরা বলছেন, গোল করার মত বিদেশীরা না থাকায় এবং আগের টুর্নামেন্টে দেশিয় স্ট্রাইকাররা বেশিরভাগ সময় রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই ভুগেছে বড় দলগুলো। ঢাকা আবাহনী, মোহামেডান, শেখ জামালের মতো বড় ক্লাবগুলো ব্যর্থ হয়েছে নকআউট পর্বে গিয়ে।
তাই দেশিয় ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দলগুলোই এ ধরণের আসরে প্রকৃত সাফল্য পেয়েছে বলে মত সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপুর, ‘তারুণ্যনির্ভর দলগুলোর কিন্তু এই একটা সুবিধা। আর অসুবিধা হচ্ছে একবার ব্যাকফুটে চলে গেলে তারা আর ফিরে আসতে পারে না। তবে ছন্দে থাকলে এদের থামানো কিন্তু কঠিন।’
গত অর্ধযুগে বাংলাদেশ পায়নি কোন ভাল মানের স্ট্রাইকার। তাই ক্লাবগুলোও ঝুঁকেছে বিদেশীদের দিকে। ক্লাব ও জাতীয় দলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি সাফল্য পেতে তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলারদের গড়ে তুলতে হবে বলে আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন আরামবাগ কোচ মারুফুল হক।
‘৭-৮ বছর যে বয়সটা, সেটাই কিন্তু ফুটবলের তৃণমূল পর্যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের হয়ত ৬-৭ বয়স থেকে কাজ শুরু করতে হবে। নইলে টুর্নামেন্ট শুরু হলে কিন্তু খেলোয়াড় খুঁজে পাওয়া যাবে না। হয়ত কিছু খেলোয়াড় পাবো, তারা দেশে ভাল খেলবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গেলে বিশাল বড় পার্থক্য হয়ে যাবে। সঠিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিচর্যা হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সাফল্য পাওয়া যাবে।’
‘গোলমুখে একটা দলের খেলা দেখে বলা যাবে না সব দেশের ফুটবলার ভাল। সবগুলো দলেই কিন্তু এরকম ফুটবলার থাকতে হবে। তাহলেই হয়ত বলা যাবে দেশিয় ফরোয়ার্ডরা উঠে আসছে। তাতে জাতীয় ফুটবলও উপকৃত হবে।’
ঘরোয়া আসরগুলোতে দেশিয়রা নিয়মিত সুযোগ পেলে সাফল্য এনে দেয়া যে সম্ভব, স্বাধীনতা কাপে সেটাই যেন দেখিয়ে ছাড়ল আরামবাগ। সেটা এক অর্থে দেশের ডুবন্ত ফুটবলচিত্রের জন্য একইসঙ্গে সুযোগ ও সম্ভাবনার দিক বলে মনে করছেন সাবেকরা।
ভিডিও রিপোর্ট: