চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আমি গ্ল্যামারে নই, গ্রামারে বিশ্বাসী মানুষ: মিশা

‘আমি গ্ল্যামারে নই, গ্রামারে বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি তারকায় নই, ব্যক্তিত্বে বিশ্বাসী। নূর হোসেন কোনো তারকা ছিলেন না, একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলে একজন রাজনৈতিক মানুষ ক্ষমা চেয়েছেন। আমি মনে করি, দায়িত্ববান হওয়াই সবচেয়ে বড় তারকা। তাই শিল্পীদের কাউকে তারকা বলতে চাইনা। অভিনেতা-অভিনেত্রী বলতে চাই। তারকা বলে বলে অনেককেই বায়াস করে ফেলেছি। ধ্বংসের মুখে চলে গেছে চলচ্চিত্র। সেজন্য এফডিসি শূন্য হয়ে গেছে। শুধু আমি নই, তারকা মূল্যায়নে অন্যদেরও সচেতন হওয়া উচিত।’

ইলিয়াস কাঞ্চনকে অপমানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মানববন্ধনকারীদের মধ্যে কেন উল্লেখযোগ্য তারকাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিল্পী সমিতির সভাপতি ও অভিনেতা মিশা সওদাগর ‘তারকা’ শব্দটির এভাবেই ব্যাখ্যা করেন।

ইলিয়াস কাঞ্চনকে অপমানের প্রতিবাদে মানবন্ধনে মিশা, জায়েদ খান, ইমন, অঞ্জনা, আলেকজান্ডার ছাড়া চোখে পড়ার মতো তারকা ছিলেন না কেন? এ প্রসঙ্গে মিশা বলেন, এই মানবন্ধনের আয়োজন করেছে পরিচালক সমিতি। তারা গতরাতে আমাকে জানিয়েছে। শিল্পীদের এখানে আসার কথা তারাই জানিয়েছিল। তাই কেন বেশি সংখ্যক শিল্পী এলেন না এটা আমার জানা নেই।

সোমবার দুপুরে এফডিসির গেটে ইলিয়াস কাঞ্চনকে অপমানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল এফডিসির সকল সংগঠন। প্রতিবাদের পর চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে মিশা বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চনকে যেভাবে অপমান করা হয়েছে সেটা কোনো সভ্যতার পর্যায়ে পড়ে না। তার দাবিগুলো পূরণ হলে তিনি বাসায় নিয়ে যাবেন না। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। তার পক্ষে শিল্পীরা রাস্তায় নেমেছি। পুনরায় আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।


তিনি বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইয়ের দাবিগুলো যৌক্তিক। এই সড়ক আইন চালু হলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অনেক কমে যাবে। এতে দেশের মানুষ ভালো থাকবে। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ তার মতো ব্যক্তিকে অপমান করেছে। এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।

এফডিসির ১৮ সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী, নৃত্যশিল্পী, চিত্রগ্রাহক, ফাইট ডিরেক্টর, সহকারী পরিচালকদের সমিতিগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত হন মানবন্ধনে। ইলিয়াস কাঞ্চনের নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত হন লিটন এরশাদ।

পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পের সব সংগঠনের পক্ষ থেকে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। সেই সঙ্গে জনস্বার্থে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আমরা। ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘ ২৭ বছর একা একা লড়াই করে চলছেন তিনি দেশের মানুষের নিরাপদ জীবনের জন্য। তার প্রতি অপমান মেনে নেয়া যায় না!

মুশফিকুর রহমান গুলজার আরও বলেন, ‘কাঞ্চন সাহেব রাষ্ট্রকে সুপারিশ করেছেন কী কী নিয়ম ও আইন করতে পারলে দেশের সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বা সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামবে। সরকার সেই আইন বাস্তবায়ন করবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে। এখানে ইলিয়াস কাঞ্চনকে কেন অশালীন ভাষায় গালি দেয়া হচ্ছে। তার ছবিতে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখা হচ্ছে। এটা অন্যায়। যারা করছেন তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা ও প্রতিবাদ।’

১৯৯৩ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে যায় নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের জীবন। কারণ এ বছরের ২২ অক্টোবর তার একটি ছবির শুটিং দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। শোকার্ত ইলিয়াস কাঞ্চন এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর সিনেমাও করবেন না! কিন্তু সব ভেবে রিলের নায়ক থেকে রিয়েল লাইফের প্রতিবাদী নায়ক হয়ে দাঁড়িয়ে যান রাস্তায়! গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামের সংগঠন।