কলকাতার সিনেমার জনপ্রিয় জুটি রাহুল ব্যানার্জী ও প্রিয়াঙ্কা সরকার। স্ক্রিনের বাইরেও ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন দুজন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক আর এখন স্বাভাবিক নেই। বেশ আগেই ডিভোর্স হয়ে গেছে তাদের। মাঝখানে দুজনের সম্পর্ক ঠিক হয়েছিলো, কিন্তু এখন সবচেয়ে জটিল সম্পর্কের মাঝখানে দুজন। একমাত্র ছেলে থাকলেও তার খরচ চালানো নিয়ে নতুন করে শুরু এই দম্পতির দ্বন্দ্ব। এমনকি বিষয়টি এখন থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সম্প্রতি রাহুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। রাহুলের বিরুদ্ধে সন্তানের ভরণ পোষণ না দেয়াসহ আরো নানা অভিযোগে এই মামলা করেছেন তিনি। তার করা বিবাহবিচ্ছেদের মামলা নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাহুল। বললেন, ছেলের সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিল প্রিয়াঙ্কা। আগামী মাসের শুরুতেই আলিপুর আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলার শুনানি হবে বলেও জানান এই অভিনেতা।
মামলা প্রসঙ্গে কলকাতার ইনাডু ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়াঙ্কা বলেন, মামলা নিয়ে আপনারা যে বিষয়টি শুনছেন, সেটা একদমই ঠিক। আমি কনটেসটেড ডিভোর্সের একটি মামলা দায়ের করেছি। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি এর আগে কোনও কথা বলিনি, সহজের(একমাত্র ছেলে) ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সহজ হওয়ার আগে থেকে আমি ওর সঙ্গে থাকার সময় যে যে বিষয়গুলো ফেস করেছি, সেটা নিয়ে আমি কিছু বলিনি বাইরে। কারণ, আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। সেই বিশ্বাস আজ আর নেই। আর আমি ওর থেকে কিছু আশাও করি না। ও যখন সুযোগ পেয়েছে আমাকে নানাভাবে ঠকিয়ে গেছে। আমার খুব অসহায় লাগত। শেষ দু’বছর ধরে আমি সহজকে নিয়ে আলাদা থাকি।
ডিভোর্স হওয়ার পর রাহুল একমাত্র ছেলের কোনো ভরণ পোষণ দেয়নি জানিয়ে অভিযোগ তুলে প্রিয়াঙ্কা আরো বলেন, শেষ দুবছরে রাহুল শুধু সহজের সঙ্গে বসে খেলা বা সময় কাটানো ছাড়া আর কোনও দায়িত্ব পালন করেনি। সহজের জন্য কী কী খরচ রয়েছে, ওকে অনেকবার জানাতে চেয়েছি। কিন্তু প্রতিবার ও আমায় এড়িয়ে গেছে। শেষবার যখন সহজের জন্য টাকা চেয়েছিলাম তখনও ফোনের রেকর্ডে বলেছে যে ওর সহজকে চাই না। কারণ ও আর খরচ করতে পারবে না। ওর নিজস্ব একটা জীবন আছে। আর ওর কোনও সেভিংস নেই। তাই ও টাকা দিতে পারবে না। সহজের ভবিষতের কথা ভেবে আমি ডিভোর্স কেসটাকে তুলে নিয়ে তার জায়গায় কনটেসটেড ডিভোর্সের আবেদন করেছি। আমি কিন্তু বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে গেছি, যাতে সহজ তার বাবাকে পায়। তার জন্য বার্থডে সেলিব্রেশন, কালীপুজোর দিন একসঙ্গে সময় কাটানো, সব কিছু করেও আমি ওকে বাবার দায়িত্ব বোঝাতে পারিনি। আমাদের এক হওয়ার আর কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু, শান্তিপূর্ণভাবে এই বিচ্ছেদটা হতে পারত। রাহুল এই কাদা ছোঁড়াছুঁড়িটাই পছন্দ করেছে। আর কোনওদিন দেখা করে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশও করেনি। ও এখন আর সহজের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ রাখে না। তাই, আমি বাধ্য হয়ে কোর্টে কেস করেছি। জুলাই মাসে এই কেসের শুনানি হওয়ার কথা।
এদিকে অভিনেতা রাহুল বলছেন ভিন্ন কথা। প্রিয়াঙ্কার অভিযোগ নামা উল্লেখ করে রাহুল বলেন, প্রিয়াঙ্কা আমার বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেছে শুনেছি। আমি নাকি ছেলের দায়িত্ব নিতে চাই না এমন অভিযোগও করেছে। এখন পুরো বিষয়টাই বিচারাধীন। তাই খুব বেশি কিছু বলতে পারব না। কিন্তু আসলে এই সব অভিযোগই ভিত্তিহীন, মিথ্যে কথা। অনেক, অনেকগুলো মিথ্যে দিয়ে সাজানো প্রিয়াঙ্কার অভিযোগনামা। সেপারেশনের দু’বছর পর হঠাৎ এসব কথা কেন? ছ’মাস আগেও আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম। ওর ফেসবুক-টুইটার ঘাটলে সেটা বোঝা যাবে। হঠাৎ সবটা বদলে গেল। আমাদের মিউচুয়াল ডিভোর্স পিটিশনে ঠিক হয়েছিল আলাদা থাকলেও ছেলের জন্য যা খরচ হবে দু’জনে তার সমান ভাগ দেব। আর যার যখন ইচ্ছা হবে, ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারব। কিন্তু, গত সাত মাস মামলার অজুহাতে আমাকে সহজের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
আর এসব কিছু প্রিয়াঙ্কা টাকার জন্য করেছে বলে পাল্টা অভিযোগ ছুড়ে মারেন রাহুল। বলেন, আসলে সবটাই টাকার জন্য করছে প্রিয়াঙ্কা। ছেলের সঙ্গে দেখা করতে না দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিল। তাতে সফল না হয়েই কোর্টে গেছে। এটাই ভালো হয়েছে। আদালত আমাকে সহজের জন্য যত টাকা দিতে বলবে আমি দিতে রাজি আছি। কিন্তু, আমি চাই সবটাই আইনি পথে হোক। প্রিয়াঙ্কা বিয়ের পর থেকেই চায়নি আমি আমার মায়ের সঙ্গে থাকি। এমনকী, আমার অনুপস্থিতিতে মায়ের উপর মানসিক অত্যাচারও করেছে। ওর কথায়, যেহেতু ও সবাইকে ছেড়ে এসেছে, তাই, আমাকেও মাকে ছেড়ে আলাদা থাকতে হবে। সেটা আমার পক্ষে কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না। যাই হোক, বিষয়টা আলাদতে যাওয়ায় আমি খুশি। কারণ, আদালত সবদিক দেখে নিরপেক্ষ বিচার করবে। তবে, এটাও বলে রাখি আমার ছেলের সবরকম দায়িত্ব নিতে আমি সবসময় তৈরি।