ক্রিকেট ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতে। সেখানে বেশিদিন মন টেকেনি। আবার ক্রিকেটে ফিরে পেয়েছেন নতুন দিশা। চাপহীন থেকে ঝরান রানের ফল্গুধারা। আত্মবিশ্বাস পৌঁছে যায় তুঙ্গে। চোটের কারণে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে সাকিব-তামিম ছিটকে পড়ায় দরকার ছিল বিকল্পের। নির্বাচকরা অবাক করে নতুন মুখ হিসেবে জায়গা দিয়েছেন সেই আত্মবিশ্বাসী ফজলে মাহমুদ রাব্বিকেই।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ক্রিকেট শুরু করা ফজলে মাহমুদ জাতীয় দলে এলেন যখন কিনা ৩১ ছুঁইছুঁই। ১৪ বছরেরও বেশি সময় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যাপ পরার অপেক্ষায় এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সোমবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ক্যাম্পের প্রথম দিনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাব্বির আলাপচারিতা ছিল সাবলীল ঢংয়েই। নিজের বিশ্বাসের কথা বলে গেলেন অকপটে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে নামার আগে মুখের কথা দিয়ে মুগ্ধ করলেন মিরপুরে আসা সাংবাদিকদের। পেলেন ‘ওয়েল ব্যাট’ প্রশংসাবাক্য। তুলে ধরা হল রাব্বির আলাপচারিতা-
প্রথম দিন ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা কেমন?
খুব ভালো লাগছে। আমি খুব উপভোগ করছি, এই সময়টা।
১৪ বছর খেলা পর জাতীয় দলে আসা। আপনার মূল্যায়ন কী?
খুব বেশিকিছু মনে করতে পারছি না। এই মুহূর্তে শুধু চিন্তা করছি নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে। এত বছর খেলেছি, আমার মোটামুটি প্রমাণ করা হয়ে গেছে ওই পর্যায়ে। এখানে এসে নতুন করে কিছু করতে পারব না। যেটা পারি, সেটাই করার চেষ্টা করব।
ক্যারিয়ারে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলেছেন। সে জার্নি কেমন ছিল?
এমন হয়েছিল যে, সামনের ধাপে যেতে পারছি না। আমার পড়াশুনাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই সময় চিন্তা করেছি, অন্যকোনো পেশায় যাওয়া যায় কিনা। সেই সময় চিন্তা করেছিলাম খেলা ছাড়ার। কিছুদিন চাকরি করার পর মনকে সায় দিতে পারলাম না। মনে হল, খেলা ছাড়া থাকতে পারব না। আবার চলে আসলাম, খেলায় মন দিলাম। ওই বছর বন্ধুদের বলেছিলাম, আমি খেলব না। এরপর একদম খোলা মনে যখন খেলতে গিয়েছিলাম, তখন মনে কোনো চাপ ছিল না। শেষ পর্যন্ত পারফর্ম ভালো হয়েছে। এরপর থেকেই আসলে পরিবর্তনটা শুরু, মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। বুঝেছি চাপ ছাড়া খেললে ভালো খেলত পারব। এখন ওইরকম চিন্তাই করি না খেলা নিয়ে। সেটাই করার চেষ্টা করছি।
চাপহীন ক্রিকেট থেকে চাপযুক্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসছেন। সেটা কীভাবে সামলাবেন?
আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। দেখি না কি হয়(হাসি)। এখনও তো খেলিনি। খেললে বোঝা যাবে কতটা চাপহীন ক্রিকেট খেলতে পারব।
চাপটা কি বুঝতে পারছেন?
না, আমার কাছে ওরকম মনে হচ্ছে না। এই যে আপনাদের সাথে কথা হচ্ছে, উপভোগ করছি এইসব।
জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম কেমন লাগল?
একদম ভালো। সবাই সবার কাজ নিয়ে খুব চিন্তা করে। কার কি দায়িত্ব, সেটা সবাই খুব ভালো জানে। দেখছি, শেখার চেষ্টা করছি। তারা এক একজন কতটা সিরিয়াস, এটা খুবই অনুপ্রাণিত করছে।
জাতীয় দলের বাইরে যারা থাকেন তাদের ফিটনেস ভালো রাখা কঠিন। ৩০ পেরিয়ে এসেও আপনার ফিটনেস খুব ভালো। সুযোগ পাওয়ার পেছনে ফিটনেসও ভূমিকা রেখেছে। কীভাবে নিজেকে ফিট রাখলেন?
এবারের প্রিমিয়ার লিগ ভালো হয়েছিল আমার। আমার মনে হয়েছে ফিটনেসটা যদি আরেকটু ভালো হত, তাহলে আমার রান ৭০০ থেকে ৮০০-৮৫০ হতে পারত। তখন মাথায় আসছে, যেকরেই হোক নিজের ফিটনেসের মান উন্নত করতে হবে। সৌভাগ্য, তখন আমাকে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে ডাকা হয়েছিল। সেখানে দুই-আড়াই মাসের মতো একটা ফিটনেস ক্যাম্প হয়েছে। ক্যাম্পটা খুব কাজে দিয়েছে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। ওজন কমিয়েছি। বয়স নিয়ে যে কথা হচ্ছে, আসলে এসব নিয়ে ভাবি না। যদি ফিট থাকি ও পারফরম্যান্স থাকে, তাহলে বয়স কোনো বিষয় না।
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বাঁহাতে স্পিনও ভালো করেন। নির্বাচকরা আপনাকে দেখছেন সাকিবের বিকল্প হিসেবে…
রোলটা ঠিক আছে। কিন্তু সাকিব ভাইয়ের জায়গা তো আর কারও পক্ষে নেয়া সম্ভব না। মূলত ব্যাটিং প্রধান অলরাউন্ডার আমি। ব্যাটিংটা করতে ভালোবাসি। পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে বোলিং করতে পারি। যদি প্রয়োজন হয় অবশ্যই এই রোলটা পালন করার চেষ্টা করব। তবে সাকিব ভাইয়ের জায়গা নেয়া না, যেটা পারি সেটাই করার চেষ্টা করব।
কোচের অধীনে ব্যাটিং সেশন কেমন ছিল?
এখানে যেটা হয়েছে, দেখেছেন, সিঙ্গেল রোটেশন নিয়ে কাজ করেছি আমরা। নতুন নতুন জিনিস আছে, ছোট ছোট ব্যাপার, এইসব নিয়েই কাজ করছি। এতদ্রুত অনেককিছু পরিবর্তন করা সম্ভব না। ছোট ছোট ব্যাপার, যার মধ্যে পরিবর্তন আনলে খেলাটা ভালো হয়, সেই দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি।
প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। সুবিধা হল কিনা?
আমার একদমই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। জানি না জিম্বাবুয়ে, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যকোনো দলের সাথে খেললে সেটা কেমন। আমি আমার মতো করেই খেলব, যদি সুযোগ পাই। কার সাথে খেলছি এটা বড় না। কী খেলছি এটাই বড়।