দুদিন যাবত ফেসবুকে দেখছি বিএনপি-জামাত চক্র প্রধানমন্ত্রী ও হেফাজত আমীরকে নিয়ে ট্রল করছে। তারা হেফাজত আমীর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যঙ্গ করা ছবি ফেসবুকে দিয়ে বলছে, আওয়ামী লীগের কাছে তেঁতুল পানি আজ মিষ্টি হয়ে গেছে।
হ্যাঁ আমিও বলছি তেঁতুল স্বাদের পানি হঠাৎ করেই মিষ্টি হয়ে গেছে। তবে কথা হলো ‘স্বাদু পানিকে’ তেঁতুল পানি বানালো কারা? হিসাব কষে পেলাম ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার জন্য বিশেষ যে সনদ ছিলো তা বাতিল করেছিলেন। এরপর থেকে বাংলাদেশের লাখ লাখ কওমি শিক্ষার্থী সার্টিফিকেটবিহীন পড়াশুনা করেছিল। মাদ্রাসাগুলোতে কোন সরকারী নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আজকে যারা হেফাজতের ভেতর থেকে সরকার ও শফি হুজুরের বিরোধিতা করতে দেখছেন, সেই হেফাজতের একাংশের মাদ্রাসাগুলোতে গেলে বুঝতে পারবেন দেশের হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে মুজাহিদ হিসেবে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে তালেবান বানানো হয়েছিল। মুফতি ইজাহার যার নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের লালখানবাজার মাদ্রাসাটি রয়েছে তিনি নিজের বইতে লিখেছেন ৮৮ সাল থেকে প্রায় ২০ হাজার মুজাহিদ (কওমি ছাত্র) আফগানিস্তান যুদ্ধে তিনি নিজে পাঠিয়েছিলেন। এভাবে দেশের দুর্গম পাহাড় জঙ্গল নদীর গা ঘেঁষে বিদেশী অর্থায়নে প্রচুর কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে। সেসব মাদ্রাসাগুলো পরিচালনায় ছিল না কোন শিক্ষা ব্যবস্থা। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ এই সকল মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে পারত না।
১৯৯৯ সালে বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে কওমিদের মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনসমূহ রাজনৈতিক দল হিসাবে ‘ইসলামী ঐক্যজোট’ নামে জোটবদ্ধ হয়। জোটবদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো, সরকার গঠন করতে পারলে কওমি সনদের স্বীকৃতি আসবে। তবে সেই স্বীকৃতি দেয়া হয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। জামায়াতের প্রবল আপত্তির মুখে খালেদা জিয়া সেসময়ে কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি আর দেয়নি। অর্থাৎ তাদের দাবি খালেদা-নিজামী জোট সরকার আমলেই নেয়নি।
পরবর্তীকালে বিএনপি জামাত চক্র হেফাজতের ভেতরে থাকা জঙ্গিবাদী অংশটিকে দিয়ে শফি হুজুরকে বিভ্রান্ত করে। তিনিও শাপলা চত্বরে অবুঝের মতো সরকার পতনের ডাক দেন। এরই মধ্যে শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে বিএনপি জামাত হাজার হাজার হুজুর হত্যার মিথ্যা প্রচার ও গুজব রটাতে থাকে। যা হেফাজত আমিরসহ তথ্য প্রযুক্তিতে তেমন ধারণা না থাকা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও লুফে নেয়। সাধারণ মানুষও তখন এ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিলো।
এতক্ষণ যা বললাম তাতে চূড়ান্ত হিসাব কি দাঁড়ালো? ‘স্বাদু পানিতে তেতো স্বাদ মিক্সার করেছিলো বিএনপি-জামাত। আর সেই তেতো স্বাদের পানিকে কওমি স্বীকৃতির মাধ্যমে মিষ্টি পানিতে রূপান্তর করেছে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা।
পাকদোসরদের জ্বলতে দেখে আমি অবাক হই না। এই স্বীকৃতি অর্জনের পরে দেশের কওমি মাদ্রাসা গুলোতে জঙ্গিবাদ কখনো গর্জে উঠবে না। নতুন কওমি শিক্ষানীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে মাদ্রাসার সামগ্রিক সবকিছুই এখন সরকারের নজরে থাকবে। গভীর অন্ধকারে এই স্বীকৃতি নক্ষত্রের মত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)