‘আমার মা সবসময় বাবার সকল কাজে সহযোদ্ধা ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি এই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বাবার সঙ্গেই জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন‘।
শনিবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে নিজের মাকে স্মরণ করে এ কথা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা কখনও বিলাসিতায় গা ভাসাননি। আমাদের তিনি সব সময় সে শিক্ষা দিয়েছেন। তার কখনও কোনো চাহিদা ছিলো না। নিজের জন্য কিছু চাইতেন না।
শেখ ফজিলতুন্নেছা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন: আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরর রহমান দেশের মুক্তি-সংগ্রামে ব্যস্ত থাকতেন। অনেক অর্থকষ্ট থাকত তার। আমার মা তার জন্য টাকা জমিয়ে রাখতেন। বাবা বাড়িতে আসলে তাকে সব সময় টাকা দিতেন। কিন্তু তিনি নিজে কখনও খরচ করেননি।
মা সব সময় আমাার বাবার সংগ্রামের অনুপ্রেরণা ছিলেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমার মা বিভিন্ন সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাবাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করতেন। বাবার কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করতেন না, সহযোগিতা করতেন। ৭ মার্চের ভাষণের আগে মা আমার বাবাকে বলেছিলেন, সারাজীবন তুমি কাজ করেছো, আজ তোমার মনে যা আছে তাই বলবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমার মা কোনো সংকটে হা হুতাশ করেননি। কখনো হতাশ হতেন না। কখনো তিনি ‘নাই‘ বলতেন না। বরং কোনটা ফুরিয়ে গেছে সেটি আনতে বলতেন। কিন্তু ‘নাই‘ শব্দটি তিনি বলতেন না। তিনি সব সময় বাবার পাশে ছায়ার মতো ছিলেন। জীবনের শেষ পর্যন্ত ছায়া হয়েই একসাথে জীবনকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট যখন বাবাকে হত্যা করতে আসে ঘাতকরা, তখন তিনি বলেছিলেন, আমি আমার স্বামীর কাছে যাবো। প্রয়োজনে এখানে আমাকেও গুলি করো। আমার মা নিজের জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি সাহসের সাথে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তখন ঘাতকরা সেখানে তাকেও হত্যা করেছিলো নির্মমভাবে। অথচ সেই সেনারা একসময় আমার মায়ের হাতে খাবার খেয়েছে। এমন নিষ্ঠুরতা তারা সেদিন দেখিয়েছিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা সব সময় বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই ছিলেন। আজ তার জন্মদিন। সারাটি জীবন তিনি শুধু সংগ্রাম করে গেছেন। এদেশের স্বাধীনতা ও মানুষের মুক্তির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তিনি মনে প্রাণে চেয়েছেন, এই দেশ স্বাধীন হবে, মানুষ স্বাধীনতা পাবে। বাবার আদর্শ তিনি সঠিকভাবেই ধারন করতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মেয়েদেরও সেই আদর্শ নিয়ে চলা উচিত। নিজের ত্যাগের মধ্যদিয়ে নিজের সংসার, প্রতিষ্ঠান ও দেশকে সুন্দর করা যায়।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস আমাদেরকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। তবে এই সংকট কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমান ও শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিবের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলতুন্নেছা মুজিব জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।