বাংলাদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের হাত ধরে ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রেখেছেন আলিশা প্রধান। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তিনি আমাকে শিখেয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে কিভাবে টিকে থাকতে হয়। তিনি আমাকে ছবির খাতিরে বুঝিয়েছেন কিভাবে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে হয়। চাষী নজরুল স্যার আমার কাছে বাবার মতো। তার মতো লিজেন্ডের শেষ ছবিতে কাজ করেছি। আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করি।
গত ৮ জানুয়ারি কিংবদন্তী পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের শেষ চলচ্চিত্র ‘ভুল যদি হয়’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। এ সিনেমায় নতুন মুখ আলিশা প্রধান ও চিত্রনায়ক ইমন জুটিবদ্ধ হয়েছেন। তবে এর আগে এ জুটির আরেকটি ছবি চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় গত বছর নভেম্বরে ‘অঙ্গরঙ্গ’ সিনেমাটি মুক্তি পায়।
‘অন্তরঙ্গ’ সিনেমাটির শুটিং’ করতে গিয়েই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন চাষী নজরুল ইসলাম। তার বিশাল ক্যারিয়ার জীবনে শেষের দুটি ছবির নায়িকাই ছিলেন আলিশা।
আলিশা বলেন, একটি টেলিভিশনে একদিন কোনো একটি কাজে গিয়েছিলাম। সেই কাজের পর হঠাৎ চাষী স্যারের ফোন আসে। আমাকে তিনি বলেন, আমার ছবির নায়িকা হবা। আমি কোনো কিছু না বুঝেই বললাম হ্যাঁ। এরপর কিছুক্ষণ ভাবলাম তিনিই কি আমাকে ফোন দিলেন। এরপর স্যারের বাসায় গেলাম, সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলাম। স্ক্রিপ্ট দিলেন। খুব অল্প সময়ে তিনি আমাকে নায়িকা বানিয়ে দিলেন। তবে ভয় ছিলো তার মতো লিজেন্ডের মনের মতো কাজ আমি করতে পারবো কি না।
চাষী স্যার ছবির শুটিং’র সময় আমাকে দুইটি কথা সবসময় বলতেন। প্রথম কথা, আলিশা তুমি যেই কাজটি করো না কেনো সেটি অনুভূতি দিয়ে করবে এবং নিজের কাজের বিচার নিজেই করবে। দ্বিতীয় কথা, ইন্ডাস্ট্রিতে যখন তোমার ভালো সময় যাবে তখন আশে-পাশে অনেক মানুষ পাবে। আর যখন বিপদে পড়বে তখন আশে-পাশে কাউকে পাবে না, সেসময় নিজের প্রতি নিজে সৎ থাকবে। তখন দেখবে বিপদকে অতিক্রম করতে পারবে।
‘ভুল যদি হয়’ সিনেমাটি সম্পর্কে আলিশা বলেন, স্যারের সবছবিতে সাহিত্যিক ও যুদ্ধের ছাপ থাকলেও ভুল যদি হয় সিনেমাটি ছিলো সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ধারার ছবি। ছবিটির গল্প সাজানো হয়েছে স্বামী-স্ত্রীর ছোটো-খাটো ভুল থেকে সম্পর্ক বিচ্ছেদের কাছে নিয়ে যাওয়া। বর্তমানে যারা বিয়ে করতে চলেছে এবং যারা নতুন বিয়ে করেছে তাদের জন্য এ ছবিটি অনেক বার্তা বয়ে আনবে। এবং সংসার জীবনের অনেক কিছু শিক্ষা নিতে সাহায্য করবে।
‘ভুল যদি হয়’ সিনেমার পর আলিশার ‘অজান্তে ভালোবাসা’ সিনেমাটি খুব শিগগিরি মুক্তি পাবে। এছাড়া ‘পরবাসী ডন’ নামে একটি ছবির শুটিং কাজ শুরু করেছি।
একঝলকে প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামের নির্মিত ছবিগুলো।
বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত সিনেমা ওরা ১১ জন। এটি স্বাধীন বাংলাদেশ ও পরিচালক চাষী নজরুলেরও প্রথম সিনেমা। ১৯৭২ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায়। এর পরে ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’। ২০১৩ সাল পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত একের পর এক জনপ্রিয় সব বাংলা সিনেমা। এর মধ্যে রয়েছে ভালো মানুষ(১৯৭৫), বাজিমাত (১৯৭৮), দেবদাস (১৯৮২), চন্দ্রকথা (১৯৮৫), শুভদা (১৯৮৬), লেডি স্মাগলার (১৯৮৬), মিয়া ভাই (১৯৮৭),বেহুলা লক্ষিন্দর (১৯৮৭), বিরহ ব্যথা (১৯৮৮), মহাযুদ্ধ (১৯৮৮), বাসনা (১৯৮৯), দাঙ্গা ফাসাদ (১৯৯০), পদ্মা মেঘনা যমুনা(১৯৯১), দেশ জাতি জিয়া (১৯৯৩), আজকের প্রতিবাদ (১৯৯৫), শিল্পী (১৯৯৫), হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৫), হাছন রাজা(২০০১), কামালপুরের যুদ্ধ (২০০২), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪), শাস্তি (২০০৫), সুভা (২০০৫), ধ্রুবতারা (২০০৬), দুই পুরুষ(২০১১)। এ ছাড়া ২০১৩ সালে তিনি দ্বিতীয় বারের মতো দেবদাস চলচ্চিত্রটি তৈরি করেন।