অবাধ, সুষ্ঠু, অংশিদারিত্বমূলক নির্বাচনের জন্য জনগণের অধিকারের প্রশ্নে ঐক্যের যে ৭ দফা দাবি তা উদ্ধার করেই ছাড়বে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জনসভার প্রধান অতিথি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের মালিক জনগণ। স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের অধিকার আমরা উদ্ধার করে ছাড়ব।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র কোন ব্যক্তির নয়। মানুষ রাষ্ট্রের মালিক। যতোই কষ্ট হোক না কেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ঐক্যবদ্ধ থাকবো। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব। আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে হবে। সামনে নির্বাচন। নিজেদের ভোটাধিকারের পাহারা দিতে হবে। ভোটাধিকার পাহারা দেয়া মানে স্বাধীনতার পাহারা দেয়া৷
বঙ্গবন্ধুর এই সহচর বলেন, স্বাধীনতার লক্ষ্য হলো যে, দেশের মালিকানা জনগণের। এদেশে কোন রাজতন্ত্র নেই, কোন রাজা নেই, কোন মহারানী নেই। সবাই এদেশের মালিক। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশ। কিন্তু আজকে আইনের শাসন অনুপস্থিত।
বক্তব্যের শুরুতে ড. কামাল হোসেন বলেন, আজকে শুরুতেই বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। যে দেশে বিরোধী দলের নেত্রীকে শ্রদ্ধা জানানো হয় না, সে দেশে গণতন্ত্র থাকে না। আইন সবার জন্য এক। সরকারি, বিরোধী দল সবার জন্য আইন এক। কিন্তু তা দেখছি না। প্রতিদিন বিরোধীদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন দেশে এটি চলতে পারে না। তাও নির্বাচিত সরকার হলে একটি কথা। অনিবার্চিত সরকার কোনোভাবে তা করতে পারে না।
প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ২০১৪ সালে একটি নির্বাচন দিয়ে বলা হল, নিয়ম রক্ষার জন্য কোনো রকম নির্বাচন দেয়া হয়েছে। দ্রুত সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে আবারও নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু এরপর ২০১৫ গেলো, ২০১৬ সাল গেলো, ২০১৭ সাল গেলো এবং ২০১৮ সালও যাচ্ছে। কিন্তু কথা রাখেনি সরকার। নির্বাচন হলো না। আর এসব করে তারা কিনা গণতন্ত্র, সংবিধানের কথা বলছেন!
ড. কামাল আরো বলেন, আজকের সমাবেশে আসার জন্য সকল রাস্তা, পথ, গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তা বন্ধ করে, সড়ক বন্ধ করে জনগণকে দমন করা যাবে না।
‘আজকে শপথ নিয়ে যাই, ভোটাধিকার নিশ্চিত করবো আমরা’- বলেন কামাল।
সবশেষে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ড. কামাল হোসেন।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচিতে রয়েছে, আগামীকাল সংলাপ সফল না হলে ৮ তারিখ রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ করবে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ করবে।
তফসিল না পেছালে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করা হবে। এরপর বরিশালে লংমার্চ করবে ঐক্যফ্রন্ট।
মির্জা ফখরুল এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আমরা জনগণের মুক্তি চাই। গণতন্ত্রের মুক্তি চাই। আমরা সংলাপ চাই। কিন্ত সংলাপের নামে নাটক চলবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আর গ্রেপ্তার হতে চাই না। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে চাই। জনগণের সরকার কায়েম করতে চাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব।
আব্দুর রব তার বক্তব্যে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। দিতে হবে, দিয়ে দাও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয় শুধু সারা দেশের ঘরে ঘরে মুক্তি চাইতে হবে খালেদা জিয়ার। বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিন, অন্যথায় খবর হবে। আপনাদের বিচার হবে জনতার মঞ্চে।
“সংলাপে আমাদের দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। জনসভা করতে করতে রাজশাহী যাব, বরিশাল যাব, কুমিল্লা যাব, ময়মনসিংহ যাব। দাবি না মেনে তফসিল ঘোষণা করলে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবো”
জেএসডি নেতা আরো বলেন, দাবি না মানলে দেশের ক্ষতি হবে, মানুষের ক্ষতি হবে। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে প্রধানমন্ত্রী আপনার।
‘এই লড়াইয়ে জিততে হবে। আমাদের দাবি না মানলে আপনাদের উপায় নাই’।
কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সভাপতি বঙ্গবীর খ্যাত কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু বিএনপিতে যোগদান করি নাই। আমি ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি। বিজয়ী হতে হলে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি ভুলে যান। ঐক্যফ্রন্টের পতাকাতলে থাকতে হবে। জয় আপনাদের হাতে। যদি আপনারা মনে করেন বিজয়ী হবেন, তাহলে হবেন।
তিনি বলেন, বিএনপি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছে একথা সত্য নয়। রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ।
কাদের সিদ্দিকী সবশেষে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আছি। ড. কামালের নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, গণতন্ত্র মুক্ত করব।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না তার বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়াকে জীবন দিয়ে হলেও মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, জীবন যাবে তবু বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। হাঁটতে পারেন না। চলতে পারেন না। সরকার বেগম খালোদা জিয়াকে জেলে মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু তাকে মরতে দেব না। জীবন যাবে, তবু বেগম খালোদা জিয়াকে মুক্ত করবো। এসময় অবিলিম্বে ৭ দফা দাবি মেনে নিতে বলেন মান্না।
তিনি বলেন, আগামীকাল সংলাপে যাবো আমরা। এবার মুখে কোনো কথা হবে না। সব কিছু লিখিত হতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা আগামীকাল সংলাপে যাচ্ছি। আমাদেরকে ধোঁকা দেয়া যাবে না। ড. কামাল হোসেনদের ধোঁকা দেয়া যাবে না৷
‘যদি ৭ দফা না মানা না হয় তাহলে আপনারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন’- জনগণের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান জানান মোশাররফ।
বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চাওয়া বিষয়ে ওবায়দুল কাদের এর সমালোচনা করে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নয়, নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এর বিকল্প নয়।
বিএনপির আরেকজন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্চর চন্দ্র রায় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী। তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী। তার প্যারোলে মুক্তির প্রয়োজন নেই৷ খালেদা জিয়াকে অনুকম্পা করবে এমন কেউ দেশে নেই। সময় এসেছে আপনাদেরকে প্যারোলে কবরে যেতে হবে৷
বিএনপির সমর্থিত ২০ দলীয় জোটের জামায়াত ছাড়া প্রায় সবগুলো দলের প্রতিনিধিই জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। জনসভায় বক্তব্য রাখেন এসব জোটের অনেক নেতা এবং ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতৃবৃন্দ।
মূলত ২০ দলসহ ঐক্যফ্রন্টের সকল নেতাই নিজ নিজ বক্তব্যে সবার আগে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।