চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আমরা সুবিচার চাই, গুম অপহরণ বন্ধ হোক: মজহার দম্পতি

কবি, লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়ার স্বার্থেই আমরা এতদিন চুপ থাকা সঠিক মনে করেছি। গুমের শিকার অধিকাংশই প্রিয়জনেরা ফেরেননি, ফরহাদ মজহারের ফিরে আসার মধ্য দিয়ে তাদের সকলকে ফিরিয়ে আনার কণ্ঠস্বর হিসেবে আজ আমরা আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।

“এই কণ্ঠস্বর নাগরিকদের ‍সুরক্ষা নিশ্চিত করবার জন্য ঐক্যবদ্ধ জাতীয় কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠুক। গুমের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতেই হবে। বর্তমান পরিস্থিতির চরম নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুুঁকি থাকা সত্ত্বেও আমাদের অবশ্যই কথা বলতে হবে।”

শনিবার রাতে শ্যামলীতে নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ফরহাদ মজহার। অপহৃত হয়ে আবার উদ্ধার হবার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এতোদিন গণমাধ্যমের সামনে আসেনি তিনি।

ফরহাদ মজহারের দাবি, ‘নিশ্চিত থাকতে পারেন, সাজানো নাটক নয়’। উদ্ধার হওয়ার পরদিন আদালতে দেওয়া জবানবন্দি প্রসঙ্গে তার অভিযোগ, উল্টো মামলা ও সামাজিকভাবে হেনস্থার ভয় দেখানোয় পুলিশের লিখে দেওয়া বক্তব্যকেই তিনি আদালতে দাখিল করতে বাধ্য হয়েছেন।

গুম করার উদ্দেশ্যে তাকে ধরে নেওয়া হয়েছিল দাবি করে ফরহাদ মজহার বলেন, সেদিন গুমের হাত থেকে উদ্ধার করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসামান্য ভূমিকা রেখেছে। তবে পরে চাপ দিয়ে ও মারধর করে আমার কাছ থেকে ‘মিথ্যা’ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। ঘটনা আড়াল কারার চেষ্টা তাদের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে।

“আমি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়েছি-এই বিষয়টি আমাকে চাপ দিয়ে, এমনকি মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।”

ঘটনার দিনের বর্ণনায় মজহার জানান, বাসা থেকে চোখের ওষুধ কিনতে বের হলে বাসার কাছেই তিনজন লোক তাকে ধরে মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে। হাতে থাকা মোবাইল ফোনে সর্বশেষ ডায়ালকৃত নম্বর দিয়েই তিনি তার স্ত্রীকে ফোন দেন। তারপর সারাপথই তার চোখ বাঁধা ছিল এবং জীবন বাঁচানোর জন্য অপহরণকারীদের নির্দেশ মতোই তিনি বিভিন্ন জনকে ফোন করা, টাকা পাঠানোসহ সবকিছু করেছেন।

তিনি বলেন, অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে তারা কোথায় আমাকে ছেড়ে দেয় আমি চিনি না। আমি বুঝতে পারি তারা আমার উপর নজরদারী রাখছে এবং তাদের নির্দেশমতো হানিফ গাড়িতে উঠলে তারা আমাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে দেয়। মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে আমি শারিরীক অসুস্থতায় নির্জীব হয়ে পড়ি।

কিছুক্ষণ পর সাদা পোষাকে কিছু লোক আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করেন। তখন র‌্যাবের লোকজন আমাকে নিয়ে যেতে চাইলে সাদা পোষাকের ওই ব্যক্তিরা র‌্যাব সদস্যদের দিকে বন্দুক তাক করে আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। র‌্যাব একরকম ছোটখাট যুদ্ধ করে আমাকে তাদের গাড়িতে উঠায় এবং আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে আশ্বস্ত করে। কিন্তু সাদা পোশাকের লোকগুলো আমাকে বার বার র‌্যাবের গাড়ি থেকে নামিয়ে নিতে চেষ্টা করে।

গত ৩ জুলাই ভোরে বাসার কাছ থেকে অপহরণের হওয়ার অভিযোগ ও এর ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার হওয়া এরপর গত ১৪ নভেম্বর অপহরণ মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি ফরহাদ মজহার।

তার স্ত্রী ফরিদা আখতারের দায়ের করা অপহরণ মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করতে আদালতের অনুমতি দেওয়ার পর শনিবার গণমাধ্যমের সামনে আসলেন তারা।