রমজান আসার পর থেকেই কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা একটু সাহসী হয়ে উঠছি। আগে পাড়া মহল্লায় পুলিশী তৎপরতা ছিল, ছিল সেনাবাহিনীর টহল। গলির মোড়ে জটলা থাকলে তাদের দেখামাত্র হঠাৎ সরে পড়তো সবাই। আর এখন সবাই যেন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে মরলে মরব, এতে কার কি এসে যায়? তাই তো সন্ধ্যার পর ইফতারি শেষে পাড়া মহল্লার অলিগলির মোড়ে জটলা বেধে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে গল্প করতে দেখা যায় তরুণ থেকে শুরু করে অনেক বয়স্কদেরও।
আবার তারাবির নামাজ যেখানেই পড়ুক না কেন, নামাজ শেষে জটলা বেধে সিগারেট ফুকারিদের গল্প-গুজব করতে দেখা যায়। গল্পের বিষয় করোনা। করোনা দেশে আর বেশিদিন থাকছে না, আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। করোনার স্বভাব একেক দেশে একেক রকম। আমাদের দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় যত লোক মারা যায় সে তুলনায় করোনায় আর কতজন মারা যাচ্ছে? এই রকম নানা ধরনের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় মেতে ওঠে। পুলিশী তৎপরতা খুব একটা দেখা যায় না। দেখা যায় না সেনাবাহিনীর টহলও।
সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে আমরা সাহসী হয়ে উঠছি। শপিংমল ১০ মে খুলে দেয়া হচ্ছে সীমিত সময়ের জন্যে। পোশাক কারখানাও একই পরিসরে খুলে দেয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটে একটু খেয়াল করলে বোঝা যায় ফুটপাতে কোথাও কোথাও হকারদের বসানোর পাঁয়তারা চলছে। আবার সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
অবশ্যই এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে যে, যাদের জীবন চলে ফুটপাতে হকারি করে তারা কোথায় যাবে? তাদেরও তো সংসার আছে ছেলেপেলে আছে। সবকিছু মেনে নিয়ে বলছি, যেখানে যা-ই খুলে দেয়া হচ্ছে হোক, কিন্তু সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি যেন কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।
আর পাড়া মহল্লায় যে লকডাউন চলছে সেগুলোর ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কঠোরভাবে দেখভাল করেন। কারণ অনেকের ভেতর এরকম একটি মনোভাব গড়ে উঠতে শুরু করেছে-আমাদের এলাকায় করোনা আক্রান্ত নেই আমরা কেন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবো? সেই ভাব থেকে অলিগলির মোড়ে ইফতারের পরে এবং তারাবির নামাজ শেষে যে জটলা দেখা যাচ্ছে। এগুলো বন্ধে সরকারের নজর দেয়া জরুরি।
অবাক হবার বিষয়টি হচ্ছে যে, যারা এই জটলা করে সিগারেট ফুকছে তারা কিন্তু অল্প শিক্ষিত নন। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়া তরুণ থেকে শুরু করে চাকরিজীবীরাও রয়েছেন। সবাই বেশ ভালোই বোঝেন যে করোনা কার ভেতরে লুকিয়ে আছে কেউ জানে না। কে যে কার ঘাতক সে ব্যাপারেও তারা ওয়াকিবহাল। তারপরও কোথায় যেন একটু অমনোযোগি মনোভাব এদের ভেতর।
আমরা এখনও টের পাচ্ছি না আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের দেশে কতজন করোনা আক্রান্ত হতে পারেন শুধু আমাদের একটু খামখেয়ালির কারণে। যে হারে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এ হার যদি অব্যাহত থাকে তা হলে একটু হিসাব করে দেখুন কত হবে সেই সংখ্যাটা। তাই আসুন আমরা নিজেকে সচেতন থাকি। পরিবারের অন্যদের সচেতন এবং সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। আমি যেন অন্য কারোর ঘাতক না হই-এই মনোভাব নিয়েই যতটা সম্ভব ঘরেই থাকি। সমাজ সুস্থ থাকলে দেশ সুস্থ থাকবে। দেশ সুস্থ থাকলে দেশের অর্থনীতি সুস্থ থাকবে।
অর্থনীতি বাঁচাতে গিয়ে জীবন ধ্বংস নয়- এটার ব্যাপারেও ভাবা দরকার। অর্থনীতিকে বাঁচানোর ব্যাপারে সরকার যে পরিমান প্রণোদনা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের সেই টাকা তছরুপ করার যেন পাঁয়তারা না চলে সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এখনো অনেক পোশাক কারখানায় বেতন ভাতার জন্যে শ্রমিকদের বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আন্দোলন চলছে।
একটি সুস্থ দেশের জন্যে আমাদের সবার ত্যাগ সংযম প্রয়োজন। ত্যাগ আর সংযমই যেন হয় আমাদের পরম ধর্ম।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)