সিদ্ধ চালের তুলনায় আতপ চালের সংরক্ষণ ক্ষমতা কম থাকায় আমানি করা চাল বিবর্ণ আকার ধারণ করাসহ নষ্ট হয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা করছে খাদ্য অধিদপ্তর। তাই চাল দ্রুত বিক্রি করতে জেলা শহরগুলোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চাপ দেয় হচ্ছে ডিলারদের। কিন্তু এসবে কোন কাজ হচ্ছে না। ফলে বিদেশ থেকে আমদানি করা আতপ চাল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন রাজধানীতে ১০৯টি ট্রাকে চাল বিক্রি করা হলেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি করা ট্রাকের সংখ্যা কমে এসেছে ৩০ এর কোটায়। দিন দিনই কমছে চাল বিক্রির পরিমাণ। গত এক সপ্তাহে সারা দেশে মোট চাল বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৪শ ৪৫ টন। এর বেশিরভাগ চালই বিক্রি হয়েছে রাজধানী ঢাকার বাইরে। ঢাকা শহরে বিক্রি হয়েছে খুবই কম।
ডিলাররা বলছেন, ওএমএসের আতপ চালে তাদের লাভ তো দূরের কথা উল্টো ক্ষতি হচ্ছে। তাই চাল সরবরাহ করতে ইচ্ছুক নয় তারা। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তাদের চাপ দেয়া হচ্ছে চাল বিক্রি করার জন্য। এই অবস্থায় তারাও পড়ছে বিপাকে।
রাজধানীর আজিমপুরের ডিলার গোলাম মাওলা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মাত্র একদিন ঢাকায় চাল বিক্রি করেছি। আর ফরিদপুরের সদরপুরেও চাল বিক্রি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢাকায় একদিনে বিক্রি করা গেলেও ফরিদপুরে তাও সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এমন চাল আমদানি করা হয়েছে যার খুদ (ভাঙ্গা চাল) গরুও খেতে চায় না। এই চাল নিয়ে মানুষ কী করবে।
সাধারণত আতপ চালের সংরক্ষণ ক্ষমতা সিদ্ধ চালের তুলনায় ৮ থেকে ১০ গুণ কম। আতপ চাল করতে ধান শুধু রোদে শুকিয়ে সরাসরি রাইস মিলে ভাঙিয়ে তৈরি করা হয়। ফলে অল্প সময়ে এই চাল বাইরের আদ্রতা শুষে নিতে শুরু করে। এরফলে চালে দ্রুত পোকা ধরে ও নষ্ট হয়ে যায়। আর সিদ্ধ চাল তৈরি করতে ধানকে শুকিয়ে তা প্রথমে ভাপে গরম করে নিয়ে পানিতে ১৬-২০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা হয়। এর পর আবার তা সিদ্ধ করে শুকানো হয়। ফলে তা সহজে নষ্ট হয় না।
খাদ্য অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাজারে আতপ চালের প্রতি ভোক্তাদের অনীহা নিয়ে খাদ্য মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কিভাবে কী করা যায় তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, চাল বিক্রির জন্য ডিলারদের চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা চাল নিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে। ফলে আমদানি করা আতপ চাল নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে খাদ্য মন্ত্রনালয়।
সম্প্রতি বিদেশ থেকে যে চাল আমদানি করা হচ্ছে তারও বেশিরভাগ আতপ চাল। ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল দেশে এসেছে। এর মধ্যে দুই লাখ টনই আতপ। কম্বোডিয়া থেকে যে আড়াই লাখ টন চাল আসছে সেটাও আতপ। এছাড়া মিয়ানমার থেকে যে চাল আমদানি হবে তাও আতপ।