ব্রায়ান লারা, অ্যালান বর্ডার, মার্ভ হিউজ এবং নাসের হুসেইনের মতো আরও অনেক ক্রিকেট কিংবদন্তিদের মেলায় পরিণত হয়েছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি)। তবে তারা সেখানে কোনো ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে আসেননি। সর্বকালের সেরা লেগস্পিনার শেন ওয়ার্নকে চিরবিদায় জানাতে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিয়েই হাজির হয়েছিলেন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আয়োজিত শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় শেন ওয়ার্নের। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ওয়ার্নের ভক্ত, তারকা, বিশিষ্ট ব্যক্তি, বন্ধু, এক সময়ে ক্রিকেট মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সতীর্থরা তাকে সম্মান জানাতে হাজির ছিলেন।
ওয়ার্নের তিন সন্তান সামার, ব্রুক এবং জ্যাকসন তাদের বাবার শেষকৃত্যে যোগ দেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে ওয়ার্নের ২০ বছর বয়সী কন্যা সামার বলেন, ‘তুমি আমার মনে যে স্মৃতি এঁকে দিয়েছ, আমি কখনোই তা মুছবে না। তুমি আমার হৃদয়ে যে রঙ এঁকেছিলে, তা কখনোই প্রতিস্থাপিত হবে না কিছুতে।’
‘তুমি আমার হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে বাবা। আমি তোমার গৌরবময় অর্জনকে ধারণ করে এগিয়ে যাবো। তুমি যেখানেই থাকো না কেন, চিরকাল আমার বাবাই থাকবে। তুমি অসীম স্বর্গে বিশ্রাম কর। আমি তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসি।’
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হুসেইন তার এক সময়ের প্রতিপক্ষ ওয়ার্নকে তার খেলা সেরা ক্রিকেটার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ব্রায়ান লারার কাছে ওয়ার্ন হলেন ‘দ্যা কিং।’
সাবেক ক্রিকেটার অ্যালান বর্ডার ছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলে শেন ওয়ার্নের প্রথম অধিনায়ক। ১৯৯২ সালে কিংবদন্তি লেগস্পিনারের টেস্ট অভিষেকের সময় উত্থানের কথা স্মরণ করে বর্ডার বলেন, ‘তিনি (শেন ওয়ার্ন) ছিলেন সবার পছন্দের। সেটা ছিল দারুণ কিছুর সূচনা ছিল। তাকে নিয়ে খানিক উন্মাদনাও ছিল দলে। তরুণ, টগবগে চেহারা, তাজা রক্ত, স্বর্ণকেশী এবং কানের দুল; সবমিলিয়ে তার মধ্যে অনেক কিছুই ছিল।’
এমসিজিতে টেস্টে ৭০০ উইকেট প্রাপ্তি এবং ১৯৯৪ সালে অ্যাশেজে হ্যাটট্রিক করার মতো স্মরণীয় অর্জন ওয়ার্নের ক্যারিয়ারে ছিল। তার সম্মানার্থে বিখ্যাত গ্রেট সাউদার্ন স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয়েছে ‘শেন ওয়ার্ন স্ট্যান্ড।’
সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার নাসির হুসেইন বলেন, ‘তিনি একজন অবিশ্বাস্য ক্রিকেটার এবং পুরুষ ছিলেন। তার পাওয়া ৭০৮ টেস্ট উইকেট পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি কিছু। মাঠে তিনি বিনোদন দিতেন, যেকোনো ভেন্যুতে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন। শেন ওয়ার্ন যখন বল করতে আসতেন, তখন বারও খালি হয়ে যেতো।’
শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিও বার্তায় ওয়ার্নকে নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি জানান শচীন টেন্ডুলকার। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা অবস্থায় শচীন বলেন, ‘তিনি সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিলেন। প্রতিপক্ষকে (ব্যাটার) আউট করার জন্য বিরক্ত করা থেকে শুরু করে সবকিছুই সর্বাত্মকভাবে করতেন। কেউ ভালো ব্যাটিং করলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনিই সবার আগে অভিনন্দন জানাতেন।’
‘এভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে। ওয়ার্নি বন্ধু আমার, আমি তোমাকে খুব মিস করব। তুমি আমার হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।’
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশটির গায়িকা এবং স্যার ডিন ব্র্যাডম্যানের নাতনী গ্রেটা ব্র্যাডম্যান।
ওয়ার্নের বাবা কিথ মঞ্চে এসে তার ছেলের প্রশংসা করে বলেন, ‘শেন নিজের সম্পর্কে সব সময়ই বলতো আমি ধূমপান করেছি। আমি মদপান করেছি এবং আমি একটু ক্রিকেট খেলেছি।’
ছেলের শূন্যতায় আবেগঘন কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘তোমার মা এবং আমি তোমাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করতে পারি না। তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি তুলে নেয়া হয়েছে। যাতে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। তুমি আমাদের জন্য যা করেছ, সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। একজন ভালোবাসায় ভরপুর এবং যত্নশীল পুত্র হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। শান্তিতে বিশ্রাম মাও। তোমাকে ভালবাসি। মা এবং বাবা।’
অনুষ্ঠানে এলটন জন, রবি উইলিয়ামস, এড শিরান এবং কোল্ডপ্লের ক্রিস মার্টিনের সঙ্গীত পরিবেশনাও ছিল।