নতুন সংবিধান প্রণয়নকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আন্দোলন এবং সেই সঙ্গে ভারতের সাথে বাণিজ্যে অচলাবস্থায় রয়েছে নেপাল। কয়েকদিন শান্ত থাকার পর আবারও উত্তপ্ত হয়েছে উঠেছে ভারত সীমান্তবর্তী ভূবেষ্ঠিত দেশটি।
শনিবার নেপালি পুলিশের গুলিতে চার জন নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি দুইজন নিহত হয়েছে।
দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সপ্তারি জেলায় ইস্ট-ওয়েস্ট জাতীয় সড়কে ভারতীয় বংশোদ্ভূত চার মদেশীয় প্রতিবাদীকে গুলি করে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
নেপাল পুলিশের দাবি, চার জন নয়, দু’জনের উপরে গুলি চালাতে তারা বাধ্য হয়েছে। কারণ ইস্ট-ওয়েস্ট জাতীয় সড়কে অন্তত আড়াই হাজার মানুষ পেট্রোল বোমা আর পাথর হাতে তাদের উপরে চড়াও হয়।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
পুলিশ-প্রতিবাদী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দু’পক্ষের লোকজন। পাঁচ জন প্রতিবাদীর সঙ্গে দু’জন পুলিশের অবস্থা সঙ্কটজনক। ওই ঘটনার পরে সপ্তারিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে।
ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক মদেশীয় ফ্রন্ট দেশের ওই প্রধান জাতীয় সড়ক অবরোধ করায় তাদের সরিয়ে দিতে যায় পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, তখনই খেপে ওঠে প্রতিবাদীরা।
নেপালি সংবিধানে সমানাধিকার দাবি করে দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মদেশীয়রা। এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে চার প্রতিবাদীর মৃত্যুর জেরে সে বিক্ষোভ আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
সপ্তারির জেলা পুলিশ অফিসার ভীম ঢাকাল জানিয়েছেন, প্রতিবাদকারীরা পাথর ছুড়তে ছুড়তে পুলিশের দিকে তেড়ে আসায় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালানো হয়।
ওই সংঘর্ষের আগে ২০ লাখ টাকার ওষুধবাহী একটি ট্রাক ও অ্যাম্বুল্যান্স জ্বালিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে মদেশীয়দের বিরুদ্ধে। ভারত থেকে সেই ওষুধ নেপালে যাচ্ছিলো বলে দাবি পুলিশের।
নেপালের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভীম রাওয়াল বলেছেন, অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা চালানো, রোগীকে বিপদে ফেলা (যাদের মধ্যে একটি অসুস্থ শিশুও ছিলো), ওষুধবাহী ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়াকে কি গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ বলা চলে?
অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা এই অবরোধ তোলার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু ভারত এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করায় নেপাল সরকারের কাজটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
ভারত এই অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে। শনিবারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ টুইটারে বলেছেন, ‘প্রাণহানির ঘটনা শুনে আমরা চিন্তিত।’
সংবিধান রচনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে অপ্রকাশিত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে নেপাল। এর জের ধরে হাইওয়েতে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নেপালের ওপর অঘোষিত বাণিজ্য অবরোধ আরোপ করে ভারত। ফলে তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়ে লাখ লাখ নেপালি। বিক্ষোভ ঘিরে পঙ্গু হওয়ার পথে নেপালের অর্থনীতি।
গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় নেপালের সংবিধান পাস হওয়ার পর অনেকটা প্রকাশ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখায় ভারত এবং নিরাপত্তার কথা বলে স্থলপথে সবধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। এর পর জাতিসংঘে পরস্পরের বিরুদ্ধে নালিশ জানায় দুই দেশ।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইসআরসি) সম্মেলনে নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংঘর্ষ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জাতিগত বৈষম্য নিয়ে ভারত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
জবাবে নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী কমল থাপার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষে উস্কানি দান ও পণ্যবাহী ট্রাকের সীমান্ত অতিক্রম করতে না দেয়ার জন্য ভারতকে অভিযুক্ত করে।